বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিলুপ্তপ্রায় সোনালি বিড়াল মৌলভীবাজারের বনে

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২১ ১১:০২

সারা দেশে এমন বিড়াল দেখার নজির ১০টিরও কম। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশ ২০১৫ সালে সোনালি বিড়ালকে ‘বিপদাপন্ন’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় একটি বিড়ালের নাম ‘এশীয় সোনালি বিড়াল’। সাধারণত এর গায়ের রং কমলা-সোনালি, তবে আরও অন্তত পাঁচটি রং এরা ধারণ করতে পারে। দেশে এই বিড়ালটি দেখার রেকর্ড খুবই কম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ক্যামেরা-ট্র্যাপিংয়ে গত আগস্টে ধরা পড়ে এই বিড়ালের ছবি। তাতে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বনে এদের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। মৌলভীবাজারের রাজকান্দি, পাথারিয়া, সাগরনাল, ভানুগাছ সংরক্ষিত বন, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা, রঘুনন্দন এদের আবাসস্থল।

গবেষক দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ নিউজবাংলাকে জানান, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বনগুলো ভারত সীমান্তঘেঁষে অবস্থিত। এই বন ভারতের ত্রিপুরা পাহাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত। সীমান্তের এ অঞ্চল ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত।

চট্টগ্রামের বনাঞ্চলকেও সোনালি বিড়ালের বাসস্থান হিসেবে মনে করা হয়। তবে সারা দেশে এমন বিড়াল দেখার নজির ১০টিরও কম। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশ ২০১৫ সালে সোনালি বিড়ালকে ‘বিপদাপন্ন’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

মুনতাসির আকাশ জানান, এশীয় সোনালি বিড়াল (বৈজ্ঞানিক নাম: Catopuma temminckii) একটি মাঝারি আকারের বিড়াল। এদের ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনে দেখা যায়। এসব বিড়ালের লেজের দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মাথা থেকে শরীরের দৈর্ঘ্য ৬৬ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। আর পূর্ণবয়স্ক বিড়ালের কাঁধের উচ্চতা মাটি থেকে ৫৬ সেন্টিমিটার হতে পারে।

বিশিষ্ট প্রাণী গবেষক ড. রেজা খান ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে একটি সোনালি বিড়ালের চামড়া সংগ্রহ করেন। আর বাংলাদেশের সোনালি বিড়ালের বিস্তারিত গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান।

২০০৮ সালের সেই গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চলে বন্যপ্রাণী শিকারকে বিড়ালের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাঙ্গু-মাতামুহুরীর সংরক্ষিত বনে ক্যামেরা-ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে সোনালি বিড়ালের উপস্থিতি শনাক্ত করে।

সিলেট বিভাগে এ বিড়াল দেখতে পাওয়ার হাতে গোনা কয়েকটি রেকর্ড রয়েছে। ২০০৯ সালে সিলেটের মেঘালয় সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে ‘কালো চিতা’ ভেবে একটি সোনালি বিড়ালকে হত্যা করে স্থানীয় লোকজন। ২০১৭ সালে আরেকটি গবেষণায় মৌলভীবাজারের এক বনে এই প্রজাতির বিড়াল ধরা পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত সোনালি আবরণের বাইরে আরও পাঁচটি রং ধারণ করতে পারে এ বিড়াল। এসব রঙের আবরণকে বলা হয় মর্ফ। বাংলাদেশে দেখা পাওয়া বিড়ালগুলোর মধ্যে এর আগে সোনালি, ধূসর ও কালো রঙের রেকর্ড পাওয়া গেছে।

২০০৫ সালে উত্তর-মধ্য থাইল্যান্ডে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, একটি সোনালি বিড়াল অন্তত ৩০ বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে থাকে। তবে বনের পরিধি কমে গেলে এরা স্বল্প জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

খাবার সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ এরা দিনের মধ্যে সেরে ফেলতে পছন্দ করে। এদের খাদ্য তালিকায় বনের ছোট প্রাণী থেকে শুরু করে সাপও রয়েছে। এশীয় সোনালি বিড়ালই এশিয়ার একমাত্র বহুরূপী বন্য বিড়াল। গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন হুমকিতে থাকা এ বিড়াল এখন বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির মুখে।

এ বিভাগের আরো খবর