বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল ঝরে পড়ে। কারণগুলো জানা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে চুল পড়ার হার কমিয়ে আনা যায়। চলুন দেখে নেই চুল পড়ার কারণগুলো।
বিশ্রামে থাকা চুল
আমাদের মাথায় যত চুল আছে তারা সবাই কিন্তু বাড়ে না। মোট চুলের প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ে আর বাকি ১০ শতাংশ রেস্টিং ফেজ বা বিশ্রামে থাকে। এই চুলগুলোই সাধারণত ঝরে যায়। তবে চিন্তার কিছু নেই। এই চুলের জায়গায় আবার নতুন চুল গজায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১০০টির মতো চুল পড়া স্বাভাবিক। চুল যদি দৈনিক ১০০টিরও বেশি ঝরতে থাকে তার মানে ১০ শতাংশের বেশি চুল রেস্টিং ফেজে চলে গেছে। এর কারণ হতে পারে খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ইত্যাদি। এমন হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা ট্রিকলোজিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।
খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাসের ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। ভিটামিনের ঘাটতি এবং পুষ্টির অভাবে চুল পড়ে যেতে পারে বহুগুণে। চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার এবং রিফাইন্ড করা খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে চুলের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে এবং চুল ঝরতে থাকে।
তাই হেয়ার লক করার জন্য প্রচুর প্রোটিন, ওমেগা ৩, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এসব খাবার চুলকে করবে স্ট্রং ও সিল্কি।
অতিবেগুনি রশ্মি
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শুধু ত্বকের ক্ষতিই করে না, বরং এটি চুলেরও সমানভাবে ক্ষতি করে। অতিবেগুনি রশ্মি চুলকে ভঙ্গুর, দুর্বল ও শুষ্ক করে দেয়। যার কারণে চুল পড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এই সমস্যা এড়াতে চুলকে সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে রাখতে হবে। এ জন্য হ্যাট, স্কার্ফ অথবা ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুলের ধরন অনুসারে পণ্য ব্যবহার
চুল ঝরে পরার অন্যতম কারণ হলো, চুলে সঠিক পণ্য ব্যবহার না করা। ত্বকের মতো চুলেরও বিভিন্ন ধরন থাকে। শুষ্ক চুলে যদি এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়, যা তৈলাক্ত চুলের জন্য তৈরি, তাহলে তো সমস্যা হবেই। তাই চুলের ধরন বুঝে তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
কেমিক্যালের ব্যবহার
নিয়মিত চুল কালার করা অথবা চুলে অধিক পরিমাণে কেমিক্যাল ব্যবহার করা চুল পড়ার অন্যতম কারণ। হেয়ার ড্রায়ার ও স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলেও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো আপনার চুলকে ভঙ্গুর করে তোলে।
ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো সবচেয়ে ভালো। এতে চুলের ওপর কোনো চাপ পড়ে না। স্ট্রেইটনার ব্যবহারের আগে চুলে হিট প্রটেক্টিভ কিছু লাগানো থাকলে চুলের ক্ষতি কম হয়।
অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাঁধা
হাই পনিটেইল অথবা খোঁপা করার সময় চুল টাইট করে বাঁধলে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়। এতে চুল পড়ার হারও বাড়ে। তাই একই হেয়ারস্টাইল প্রতিদিন না করে চেঞ্জ করে চুল বাঁধতে হবে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও চুল ঝরতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া, সার্জারি করা, কেমো নিলে চুল ঝরতে পারে। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং খাবারে বেশি পরিমাণে প্রোটিন যোগ করতে হবে।
চুল আঁচড়ানো
ভেজা চুল একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বলে এই সময়ে আঁচড়ালে চুল ছিঁড়ে আসতে পারে। তা ছাড়া ভেজা চুলের গোড়াও নরম থাকে। তাই ভেজা অবস্থায় আঙুল দিয়ে আলতোভাবে চুলের জটগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছতে হবে। চুল পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর চুল আঁচড়াতে হবে।