একসময়ে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল পাখির দেশ হিসেবে। তবে এখন শুধু কাগজে-কলমে টিকে আছে সেই উপমা। নগরায়ণসহ বিভিন্ন কারণে দিনকে দিন কমছে পাখির সংখ্যা, বিলুপ্ত হয়েছে অনেক প্রজাতি।
আগের মতো এখন আর দেখা মেলে না বৈচিত্র্যময় অনেক পাখির। দেশে এমনই এক বিরল অথচ অনিন্দ্যসুন্দর পাখির নাম কালা বগলা, ইংরেজিতে যার পরিচিতি ব্ল্যাক বিটার্ন নামে।
বাংলাদেশে অনেকটা বিরল আবাসিক এই পাখির দেখা মেলে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে। বৈজ্ঞানিক নাম ইকসোব্রেকাস ফ্লাভিকলাস (Ixobrychus flavicollis)। দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) ‘লিস্ট কনসার্ন’ তালিকায় রয়েছে পাখিটি।
কালা বগলা কালচে দেহের জলচর পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির কালো ঘাড়ের পাশে হলদে পীতাভ রং। থুতনি ও গলার মাঝখানে লালচে ফোটা মিলে রেখা তৈরি করেছে। মেয়ে পাখির পিঠের রং কালচে বাদামি। তবে উভয়ের চোখের রং সোনালি-বাদামি।
একসময়ে বাংলাদেশে এদের প্রচুর উপস্থিতি থাকলেও শিকার, বাসস্থান ধ্বংস এবং খাদ্যসংকটে বর্তমানে এরা ভালো নেই। কালা বগলার দেখা পাওয়াও এখন বেশ সৌভাগ্যের বিষয়।
সম্প্রতি একটি কালা বগলার ছবি তুলেছেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার মহিউল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পাখিদের ছবি তুলছি, কিন্তু কালা বগলার ছবি তোলা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। এদের দেখা সহজে মেলে না। সম্প্রতি একটি কালা বগলার দেখা পাই ঢাকার কেরানীগঞ্জে।’
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত এই পাখিটি একা অথবা জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। সবুজ উদ্ভিদে ভরপুর জলাশয়ে বা যেখানে সারি সারি গাছ আছে সেখানে এদের বসবাস। ভোর ও সন্ধ্যাবেলায় এরা বেশি সক্রিয় থাকে।
রাতের বেলায় ধীরে ধীরে হেঁটে শিকারের দিকে এগিয়ে যায়, অথবা শিকারের অপেক্ষায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। নিঃশব্দে শিকার ধরতে এরা বেশ পারদর্শী। এদের প্রিয় খাবার মাছ, পোকামাকড়, সেই সঙ্গে ইঁদুর, ছোট পাখিও আছে খাদ্য তালিকায়।
প্রজনন মৌসুমে এরা সাধারণত চারটি ডিম দেয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর প্রজনন মৌসুম। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার বিল-হাওরে মাঝে মাঝে এদের দেখা যায়।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু বলেন, ‘আমাদের অসচেতনতার কারণে অনেক সুন্দর সুন্দর পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই সচেতন না হলে কালা বগলাসহ অনেক পাখি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব পাখি দেখবে শুধু ছবিতে।’