সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। শুধু সুনীল নয় সাহিত্যের পরতে পরতে মেলে পদ্মের উপাখ্যান।
ভালোবাসার জন্য পৃথিবী তন্ন তন্ন করে নীল পদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন সুনীল। দেশের খাল-বিলে অবশ্য তন্ন তন্ন করে পদ্ম খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রতি বছর বর্ষার শেষে ফুটতে শুরু করে সৌন্দর্য আর শুভ্রতার প্রতীক পদ্ম। জলজ ফুলের রানির উপস্থিতিতে জলাভূমি ও বিল-ঝিলে সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এমনই একটি পদ্মের বিল রয়েছে গোপালগঞ্জে। দূর থেকে বিলটি দেখলে মনে হয়, যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ।
প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিলটিতে আসে দর্শনার্থীরা। এই সময়ে তেমন কাজ না থাকায় পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, গোপালগঞ্জ জেলায় রয়েছে অসংখ্য বিল। তার মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরের বিলটিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে পদ্মফুল। এ কারণে এটি এখন পরিচিতি পেয়েছে পদ্মবিল নামে।
বিলটিতে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর বিলের চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপী ও সাদা রংয়ের পদ্ম।
যত দূর চোখ যায় এমন অপরূপ দৃশ্য হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণ পিপাসুদের। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিদিনই বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক দর্শনার্থী যান বিলটিতে। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
শুধু সৌন্দর্যই নয় স্থানীয় কিছু মানুষের আয়ের উৎসও এই বিল। বর্ষা মৌসুমে তেমন কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত দরিদ্র পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করেন তারা।
বিল এলাকায় দাম কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ বিলের পদ্মফুল খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পদ্মবিলে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীক কারণে ঢাকা থাকি। করোনার কারণে এতদিন ঢাকায় অনেকটা বন্দি অবস্থায় ছিলাম। এখন বর্ষাকালে বলাকইড় বিলে পদ্মফুল ফুটেছে, তাই বন্ধুদের সাথে এই বিলে এসেছি। খুব ভালো লাগল এই সৌন্দর্য দেখে।’
মোহসিন উদ্দিন সিকদার, ইলতুত মিশসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্মফুলে তারা মুগ্ধ। এই পদ্ম এলাকাটি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। যাতে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো জায়গা খুঁজে পায় এবং নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারে।