যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে শত বছর ধরে ছায়া দিয়ে আসা অনেক গাছ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মরা গাছগুলোতে কোনো পাতা নেই। সড়কের ওপর থাকা ডালগুলো গেছে শুকিয়ে।
নড়বড়ে হয়ে পড়া গাছগুলো এ সড়কের মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বাতাসেই এসব গাছ উপড়ে পড়ছে। ডাল ভেঙে পড়ছে সড়কে ও পাশের বাড়িগুলোতে।
এমন পরিস্থিতিতে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের দাবিতে এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, ঐতিহাসিক যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী দুই হাজারের বেশি গাছ কেটে এটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ওই সিদ্ধান্তের পর গাছগুলো রক্ষায় সরব হন পরিবেশবাদীরা।
পরে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট। আদালতের ওই সিদ্ধান্তের পর গাছ রেখেই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়।
তাদের অভিযোগ, মহাসড়ক সম্প্রসারণের সময় মাটি কেটে সাড়ে তিন ফুট গভীর করা হয়। এতে সড়কের পাশে থাকা অনেক গাছের শেকড় কাটা পড়ে। গাছের গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় নড়বড়েও হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া বয়সের কারণেও বেশ কিছু গাছ মরে গেছে। সব মিলিয়ে এ সড়কে শতাধিক মৃত গাছ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
তারা জানান, এসব গাছ এখন একটু ঝড়ে উপড়ে পড়ছে ফসলি জমি, সড়ক ও পাশে থাকা বাড়িঘরের ওপর। এতে মহাসড়কটি দিয়ে যাতায়াতে আতঙ্কিত থাকেন তারা। আবার ঘরের ওপর পড়লে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
মহাসড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই ধারেই বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে শতবর্ষী মরা গাছ। বিভিন্ন বাজারসংলগ্ন অনেক গাছের ডাল শুকিয়ে গেছে। অনেক গাছের সব ডাল ভেঙে গেছে, কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে শুকনা উচুঁ কাণ্ড। সেগুলোও ভেঙে পড়তে পারে যেকোনো সময়।
সড়কের পাশে থাকা বাড়ির বাসিন্দারা জানান, বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলেই গাছগুলো তাদের বাড়ির ওপর ভেঙে পড়তে পারে। এ কারণে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন তারা।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য আসে বেনাপোল স্থলবন্দরে। এ বন্দর থেকে শত শত ট্রাকে করে এসব আমদানি পণ্য যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় দুই পাশে থাকা মরা গাছের ডালগুলো হালকা বাতাসেই ভেঙে পড়ে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
যশোর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বেনাপোল-যশোর সড়কের দুই পাশের শতবর্ষী অনেক গাছের শেকড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মরে যাচ্ছে। তবে ২০১৮ সালে সড়ক সংস্কারের জন্য গাছ কাটার ওই সিদ্ধান্তের পর হাইকোর্ট তাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মামলাটি এখনও চলমান থাকায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মরা গাছগুলো কাটতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘রাস্তার দুই ধারের গাছগুলো অনেক সময় বসতবাড়ি, পথচারী ও যানবাহনের ওপর ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধনসহ রাস্তা নষ্ট করছে। এ জন্য এসব মরা গাছ কেটে ফেলা খুবই দরকার, কিন্তু মামলা থাকার কারণে কাটতে পারছি না।’