বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হৃদরোগ বিভাগে চলে না এসি, হাতপাখাই ভরসা

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:১৩

দুদফা মেরামত করার পরও এসি কাজ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের শরীরও তো মাঝে মাঝে ঠিকঠাকমতো কাজ করে না। আর এটা তো যন্ত্র।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ২০৬ নম্বর কক্ষে দুটি পাঁচ টনের এয়ারকন্ডিশনার (এসি) আছে। এর মধ্যে একটি চলে, কিন্তু তা দিয়ে বের হয় গরম বাতাস। মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা যদিও ঘোরে, কিন্তু তাতে ভ্যাপসা গরম কোনোভাবেই দূর হয় না।

ওই কক্ষে রোগীদের কারও কারও হাতে দেখা গেছে হাতপাখা, কারও শয্যার কাছে রাখা ছোট্ট টেবিল ফ্যান। গুমোট আবহাওয়া পুরো ওয়ার্ডেই। হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে মঙ্গলবার।

এই বিভাগের ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন নাটোরের মাদনগর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘এসি চলছে, কিন্তু ঘর ঠাণ্ডা হচ্ছে না। ফ্যানও চলছে, কিন্তু বাতাস লাগছে না। গরমে থাকতে পারছি না। হাতপাখাই ভরসা।’

হাসপাতালের ৩২ নম্বর ইউনিটে রাখা হয় হৃদরোগে আক্রান্তদের। সবচেয়ে জটিল রোগীদের রাখা হয় ওয়ার্ডের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ১ ও ২ নম্বর কক্ষে। তুলনামূলক কম জটিল রোগীদের রাখা হয় পোস্ট করোনারি কেয়ার ইউনিটের (পিসিসিইউ) ১, ২, ৬ ও ৭ নম্বর কক্ষে।

প্রতিটি কক্ষেই আছে পাঁচ টনের দুটি করে এসি। সব মিলিয়ে ১২টি এসির মধ্যে চলে মাত্র তিনটি। সেগুলো হলো সিসিইউ-১-এর ২০২ নম্বর কক্ষের একটি, পিসিসিইউ-১-এর ২০৪ নম্বর কক্ষে একটি এবং পিসিসিইউ-৭-এর ২০৭ নম্বর কক্ষের একটি।

পিসিসিইউ-১-এর ২০৬ নম্বর কক্ষে একটি এসি চললেও বের হয় গরম বাতাস, অন্যটি চলেই না। সিসিইউ-২-এর ২০৫ নম্বর কক্ষে থাকা দুটি এসির একটিও চলে না। অথচ এই ইউনিটে ভর্তি থাকেন সবচেয়ে জটিল রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাসে নতুন তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় হৃদরোগীদের জন্য কার্ডিয়াক ইউনিট চালু করা হয়।

সিসিইউতে আটটি করে ১৬টিসহ মোট প্রায় ৭০টি শয্যা আছে এই ইউনিটে। তবে রোগী ভর্তি থাকেন শতাধিক। যারা শয্যা পান না, তাদের ঠাঁই হয় মেঝে বা বারান্দায়। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে আবার থাকেন একাধিক স্বজন। এ কারণে ইউনিটে সব সময় অতিরিক্ত লোক সমাগম থাকে।

এত লোক থাকায় পুরো ইউনিটে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয় সব সময়। বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ভেতরের পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে যায়। এমন অবস্থায় এসি নষ্ট থাকায় রোগী, স্বজন এমনকি চিকিৎসকরাও ক্ষুব্ধ।

হৃদরোগ বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এই হাসপাতালে এখন হৃদরোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। হার্টের এনজিওগ্রাম, পেসমেকার প্রতিস্থাপন ও রিং পরানোসহ যাবতীয় চিকিৎসা হচ্ছে, কিন্তু রোগী থাকার পরিবেশটাই ভালো না।

‘ওয়ার্ডটিতে একটা গুমোট পরিবেশ। বাইরের বাতাস আসে না, ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগে না। এসিগুলোও নষ্ট। ওয়ার্ডের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। হৃদরোগীদের জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তাদের অনুকূল পরিবেশ দরকার।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানালেন, শুধু হৃদরোগ বিভাগই নয়, অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) এসিও নষ্ট।

তিনি জানান, মেরামতের কোনো কাজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে কাজটি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে দুইবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের লোকজন হৃদরোগ বিভাগের এসিগুলো খুলে নিয়ে মেরামত করেছে। তবে সেগুলো লাগানোর পর দেখা গেছে গরম বাতাস বের হয়।

তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় শহরের একটা হাসপাতালে এমন অবস্থা ভাবতেই পারি না। ২০১৪ সালে লাগানো এসব এসি এখন কাজ করে না। মাত্র সাত বছরেই এসি নষ্ট। এগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। রোগীদের কষ্ট হয়।’

গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৫০০ এসি আছে। দুই-একটা নাও চলতে পারে। সেটা মেরামত করা হবে।’

দুদফা মেরামত করার পরও এসি কাজ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের শরীরও তো মাঝে মাঝে ঠিকঠাকমতো কাজ করে না। আর এটা তো যন্ত্র।’

এ বিভাগের আরো খবর