বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চরে ছাড়া হলো রাসেলস ভাইপার, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:৩৮

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সহসভাপতি শাহাবউদ্দীন মিলন জানান, সাপটি বেশ অসুস্থ ছিল। ছেড়ে দেয়ার পর এটি ধীরগতিতে যেতে থাকে। এর প্রজননজনিত অসুস্থতা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়ীয়ায় গড়াই নদীর তীরে আসা রাসেলস ভাইপারকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে প্রকৃতিপ্রেমী ও স্থানীয়দের মধ্যে।

প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সব প্রাণীকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

অন্যদিকে বিষধর রাসেলস ভাইপারকে ছেড়ে দেয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেকেই। তাদের দাবি, মানুষের জীবন আগে। বিষধর সাপ মেরে ফেলাই মঙ্গল বলছেন তারা।

পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইয়ের তীরে কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়ীয়া থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধরা হয় রাসেলস ভাইপারটিকে। এটি কাশবনে জড়িয়ে ছিল।

মো. মৃদুল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা ছোট ঠেলা জাল দিয়ে সাপটিকে ধরে তার বাড়ি নিয়ে যান। তিনি সাপটিকে অজগরের বাচ্চা মনে করে বিক্রির চিন্তা করছিলেন।

পরে কুষ্টিয়া বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, এটি রাসেলস ভাইপার; বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপ।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সহসভাপতি শাহাবউদ্দীন মিলন সাপটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন।

শাহাবউদ্দীন বলেন, ‘শনিবার বিকেলে মঙ্গলবাড়িয়া থেকে রাসেলস ভাইপারটি নিয়ে ভেড়ামারা গোলাপনগরে পদ্মা নদীর ওপারে দুর্গম চরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাপটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

তিনি জানান, সাপটি বেশ অসুস্থ ছিল। ছেড়ে দেয়ার পর এটি ধীরগতিতে যেতে থাকে। এর প্রজননজনিত অসুস্থতা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গড়াই নদীতীরের কাশবন থেকে উদ্ধার করা বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। ছবি: নিউজবাংলা

শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি প্রাণীকে শৃঙ্খলে সাজিয়ে রেখেছেন। ইকোসিস্টেম টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণীকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

‘রাসেলস ভাইপারটি তার আবাস ছেড়ে ভুল করে চলে এসেছিল। এ জন্য আমরা আবার তার উপযোগী পরিবেশে ছেড়ে এসেছি।’

কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ছালেহ শোয়াইব খান জানান, বিলুপ্তপ্রায় সাপটি বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এটা প্রকৃতি থেকে যেমন ধরা হয়েছে, তেমনি প্রকৃতিতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাস উপযোগী দুর্গম চরাঞ্চলেই সাপটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।’

এদিকে বিষধর সাপটিকে নিয়ে মঙ্গলবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা এবং কুষ্টিয়ার হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মণ্ডল বলেন, ‘সবার আগে দরকার মানুষের জীবন রক্ষা করা। ধর্মেও জীবন রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে এত বিষধর সাপ ধরে ছেড়ে দেয়া বোকামি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সাপ আবারও পানিতে ভেসে চলে আসতে পারে; মানুষের জীবনহানি করতে পারে।’

স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ‘এত বিষধর সাপটিকে হত্যা না করে ছেড়ে দিয়ে ভণ্ডামি করা হয়েছে। লোক দেখানো প্রকৃতিপ্রেম।’

আশিক হোসেন সেতু নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাপটাকে ছেড়ে না দিয়ে মেরে ফেলাই ভালো ছিল।’

এ সাপ সম্পর্কে সচেতন করতে মাইকিং করার দাবি জানান খাদেমুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন।

পদ্মা অববাহিকা দিয়ে বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসতে শুরু করেছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। শরীয়তপুরে পদ্মার চরে গত বছর ভারত থেকে আসা সাপের প্রজাতিটির দেখা মেলার পর এ বছর এর আনাগোনা বেড়েছে।

সাপটি দেশে চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনোম রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক ও গবেষক বোরহান বিশ্বাস জানান, ভারত থেকে ২০১০-১১ সালের দিকে পদ্মার অববাহিকা ধরে রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে এসেছে। রাজশাহীতে প্রথম রাসেলস ভাইপারের দেখা মেলে। এরপর পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরে দেখা মিলেছে। চাঁদপুরেও বিষধর সাপটি পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, রাসেলস ভাইপার বছরে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের এলাকায়ও যেতে পারে। তারা নদীর পানিতে চলার সময় কচুরিপানায় ভেসে থাকে। নদীর তীরবর্তী ২০০ মিটারের মধ্যে সাধারণত আবাস গড়ে এরা। তীরের ধানক্ষেত তাদের থাকার জন্য সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। সাধারণত লোকালয়ে যায় না এ সাপ।

সঠিক তথ্য না থাকলেও নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মৌখিক হিসাবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রাসেলস ভাইপার পাওয়া গেছে।

দেখামাত্রই এসব সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলছেন স্থানীয়রা।

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদীর পাড়ে গত সপ্তাহে একটি রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মারা হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে হরিপুরে পাওয়া গেছে একটি মরা রাসেলস ভাইপার।

এ বিভাগের আরো খবর