বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৮০ বছর পর দেশে ফিরছে নীলগাই, দুই শাবকের জন্ম

  •    
  • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২৩:০০

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল নীলগাইয়ের। ১৯৪০ সালের আগ বাংলাদেশে নীলগাই দেখা যেত। বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, বসবাসের পরিবেশ হারানো, খাদ্য সংকট ও অবাধে শিকারের কারণে পরিবেশে প্রাণীটির সংখ্যা কমতে থেকে এক সময় নীলগাইয়ের নাম ওঠে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায়।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো দুটি নীলগাইয়ের শাবক জন্ম নিয়েছে।

গত ১ আগস্ট শাবক দুটির জন্ম হয় বলে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে জানায় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

এই দুই শাবকের জন্মের পর প্রায় ৮০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইয়ের আবার প্রকৃতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল নীলগাইয়ের। ১৯৪০ সালের আগ বাংলাদেশে নীলগাই দেখা যেত। বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, বসবাসের পরিবেশ হারানো, খাদ্য সংকট ও অবাধে শিকারের কারণে পরিবেশে প্রাণীটির সংখ্যা কমতে থেকে এক সময় নীলগাইয়ের নাম ওঠে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায়।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, এই দুটি নীলগাই শাবক মিলিয়ে বাংলাদেশে নীলগাইয়ের সংখ্যা চারটি। সাফারি পার্কের বাইরে দেশে আর কোথাও এ প্রাণী এখন নেই।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় একটি নীলগাইকে ধরে এলাকাবাসী। এটিকে জবাই করার প্রস্তুতি নিলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ পুরুষ নীলগাইটি উদ্ধার করে। চিকিৎসা শেষে ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নীলগাইটিকে স্থানান্তর করা হয়।

অন্যদিকে, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া বর্ডার এলাকার বাসিন্দারা একটি নীলগাই দেখতে পায়। তারা এটিকে ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নিলে বিজিবি-৫৩-এর (মামুদপুর বিওপির) সদস্যরা ওই মাদী নীলগাইকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। পরে এটিকে সাফারি পার্কে আনা হয়।

এরপর দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান থেকে পুরুষ নীলগাইটিকে প্রজননের জন্য সাফারী পার্কে আনা হয় বলেও জানান পার্কের এই কর্মকর্তা।

পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার সারোয়ার হোসেন খান জানান, হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরু পর্যন্ত নীলগাইয়ের প্রজনন সময়। এর গর্ভধারণ কাল গড়ে ২৪৩ দিন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীলগাই যমজ বাচ্চা প্রসব করে। ক্ষেত্র বিশেষে একটি থেকে তিনটি শাবকও প্রসব করে থাকে।

জন্মের ৪০ মিনিটের ভেতর দাঁড়াতে পারে এরা। পুরুষ নীলগাই তিন বছর এবং মাদী নীলগাই দুই বছরের মধ্যে প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। এই প্রাণীর গড় আয়ু ২১ বছর।

পুরুষ নীলগাইয়ের বর্ণ গাঢ় ধূসর, অনেকটা কালচে রঙের। অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ হয়েছে। শুধুমাত্র পুরুষ নীলগাইয়ের দুটি কৌণিক, মসৃণ ও সামনের দিকে কিঞ্চিত বাকানো শিং থাকে। এদের দৈর্ঘ্য ৫২-৫৮ইঞ্চি, শিংয়ের দৈর্ঘ্য ৮-১২ইঞ্চি।

মাদী নীলগাই এবং শাবকের রং লালচে বাদামী, তবে খুরের ওপরের লোম সাদা। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নীচের অংশ সাদা।

নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চরে বেড়াতে পছন্দ করে। ঘন বন এরা এড়িয়ে চলে। ৪-১০ সদস্যের দল নিয়ে এরা ঘুরে বেড়ায়। তবে দলে কখনও কখনও ২০ বা তার বেশি সদস্যও থাকতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘উদ্ধার করা নীলগাই দুটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে আমাদের ধারণা। এরা জুটি বাঁধার ১১ মাস ১১ দিন পর ১ আগস্ট দুটি ফুটফুটে বাচ্চা জন্ম দেয়। বর্তমানে শাবক দুটি সুস্থ আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নীলগাই শূন্য হলেও ভারতে লাখের ওপর নীলগাই রয়েছে। আমরা আশা করছি দেশের বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর তালিকায় থাকা নীলগাই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের মাধ্যমে আবারও প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর