বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমেরিকার বিমানবন্দরে কেন মুসলিম বিদ্বেষ, করণীয় কী?

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৫২

টিএসএর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নির্দেশিকায় দেখা যায়, যাত্রীদের প্রতি ভদ্র, কিন্তু সতর্ক আচরণ করতে বলা হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে- এমন উঁচু গলার আওয়াজ বা শারীরিক ভঙ্গি প্রদর্শন না করার নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হিজাব ও বোরকার মতো ঢিলেঢালা পোশাকে নিষিদ্ধ বস্তু লুকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে ধর্মীয় কারণে যাত্রীদের এটা খুলে ফেলতে বাধ্য করা যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময় প্রায়ই বিমানবন্দরে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন মুসলিম যাত্রীরা। এমন অভিজ্ঞতা, সংকটে করণীয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক ওয়েবসাইট ভাইস। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

নাইন-ইলেভেন হামলার জের ধরে ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিসিএ) প্রতিষ্ঠার পর অনেক মুসলিমের জন্য গত ২০ বছরে আমেরিকান বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর বিমানবন্দরে ইসলামোফোবিয়ার (ইসলাম বিদ্বেষ) শিকার হওয়া মানুষের কী করা উচিৎ সেটি নির্ধারণ করে দেয়া বেশ কঠিন। সূক্ষ্ম ও স্থূল দুইভাবেই বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন অনেকে। টিএসএ প্রি-চেক করার পরেও স্বাভাবিক সময়ের দুই-তিন ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হন তাসমিহা খান। টিএসএর জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার তার বিমানে চড়তে দেরি হয়েছে। একটি ঘটনা বিশেষভাবে মনে আছে তাসমিহার; ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বামী-সন্তান ও মাসহ তাকে চেকপয়েন্টে আটকানো হয়।ইলিনয় রাজ্যের বাসিন্দা তাসমিহা বলেন, ‘(আমার ও আমার মার) দুজনের পরনেই হিজাব ছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তারা শুধু আমাদের ডেকেছে।’টিএসএর কর্মকর্তারা তাকে একটা বডি স্ক্যানারের মধ্যে দিয়ে যেতে বলেন। তাসমিহা অস্বস্তি প্রকাশ করলে তাকে জানানো হয়, স্ক্যানারে না গেলে শরীরে হাত দিয়ে তল্লাশি করা হবে।টিএসএর এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অস্বস্তি প্রতিবারই তাসমিহা অনুভব করেন।তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুবই অপমানজনক। প্রতিবার ফ্লাইটে চড়তে আমি ভয় পাই, কারণ একই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফ্লাইট ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকলে সেভাবে আমি যেতাম। মুসলিম হওয়া দৃশ্যত আমাকে একটি টার্গেটে পরিণত করেছে।’তাসমিহার অভিজ্ঞতা ইসলামবিদ্বেষের এমন একটি ধরন যেটি কঠোর কোনো পরিস্থিতি থেকে উদ্ভব হয়। মুসলিম যাত্রীদের টিএসএ চেকপয়েন্টে বিদ্বেষের শিকার হওয়ার বিষয়টি ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন অ্যাক্টের (এফওআইএ) অধীনে করা অভিযোগগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে পরের বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুসলিম যাত্রীদের প্রতি ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অফিসারদের (টিএসও) করা অপমানসূচক মন্তব্য, জোরপূর্বক তল্লাশি ও আটকসহ বিদ্বেষমূলক আচরণের অন্তত ৭৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।এফআইওয়ের কাছ থেকে পাওয়া টিএসএর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নির্দেশিকায় দেখা যায়, যাত্রীদের প্রতি ভদ্র, কিন্তু সতর্ক আচরণ করতে বলা হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে- এমন উঁচু গলার আওয়াজ বা শারীরিক ভঙ্গি প্রদর্শন না করার নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হিজাব ও বোরকার মতো ঢিলেঢালা পোশাকে নিষিদ্ধ বস্তু লুকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে ধর্মীয় কারণে যাত্রীদের এটা খুলে ফেলতে বাধ্য করা যাবে না।জমা পড়া অসংখ্য অভিযোগের মধ্যে আছে, চেকিংয়ের সময় সূক্ষ্ম ও স্থূল বিদ্বেষ ঘটনা এবং জোরপূর্বক তল্লাশির অনেক উদাহরণ। কিছু ক্ষেত্রে অহেতুক যাত্রীর শরীরে হাত দিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেই সঙ্গে ছিল ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য (এক যাত্রী অভিযোগ করেন, টিএসও কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি হিজাব পছন্দ করি না’), জোর করে তল্লাশির সময় এক যাত্রীর স্তনে হাত দেয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। টিএসএর এক মুখপাত্র অবশ্য এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এই নিরাপত্তা তল্লাশি যাত্রীর ‘জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম বা প্রতিবন্ধিতা’ নির্বিশেষে করা হয়। টিএসএর ওয়েবসাইটে তল্লাশি প্রক্রিয়া ও সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীলতার গাইডলাইন দেয়া আছে।আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি বিদ্বেষমূলক আচরণের ঘটনা আদতে জানাই যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, বিমানবন্দরের পাশাপাশি প্রাত্যহিক জীবনে ইসলাম বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক অপরাধ এখনও বিদ্যমান। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) ২০২১ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ছয় হাজারের বেশি অভিযোগ পেয়েছে, যার বেশিরভাগই ছিল বিদ্বেষ সংক্রান্ত।ভ্রমণে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং টিএসএর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ইসলাম বিদ্বেষের শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করা যায় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৈষম্যের শিকার হলে, ওই মুহূর্তের যতটা সম্ভব তথ্য সংরক্ষণের চেষ্টা করুন

বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হলে কী কী তথ্য যোগাড় করতে হবে সে বিষয়ে সিএআইআরের ‘নিজের অধিকার জানুন’ ফ্যাক্ট শিটে তথ্য দেয়া আছে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইডি নম্বর ও নাম লিখে রাখার পরামর্শ দেয়। এছাড়া আপনি টিএসও কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করতে পারেন, আপনাকে আলাদা করে ডাকা হয়েছে কিনা। সিএআইআরের গাইডলাইনে আরও বলা আছে, আশেপাশের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ফোন নম্বরও আপনি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।আইনি, শিক্ষামূলক ও নীতিগত সহয়তা দেয়া নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠান মুসলিম অ্যাডভোকেটের আইনজীবী সানা আনসারি বলেন, ‘আপনি অভিযোগ করতে চাইলে যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন এয়ারলাইনের নাম, ফ্লাইট নম্বর, নির্দিষ্ট সময়, প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম এবং সংশ্লিষ্ট টিএসএ কর্মকর্তাদের নাম।’তিনি বলেন, ‘এ রকম চাপের মুখে দ্রুত কোনো ঘটনা লিখে রাখা কঠিন, কিন্তু যতটুকু সম্ভব নিজের ফোনে, কোনো কাগজে বা দুই জায়গাতেই এগুলোর বিস্তারিত লিখে রাখার চেষ্টা করুন।’

অভিযোগ করবেন কোথায় সেটা ঠিক করুন

সানা আনসারি বলেন, বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার যাত্রীরা টিএসএ, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস), ডিএইচএস অফিস ফর সিরভিল রাইটস অ্যান্ড সিভিল লিবার্টিসের যে কোনটিতে বা তিনটিতেই অভিযোগ করতে পারেন। টিএসএর কাছে অভিযোগ জানাতে চাইলে দ্রুত সেটি করতে হবে, কারণ টিএসএ ১৮০ দিনের মধ্যে অভিযোগ আমলে নেয়। তাছাড়া দ্রুত অভিযোগ করলে সে সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়গুলোও আপনার মনে থাকবে।অভিযোগ করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, এটি আপনার নাগরিকত্বের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা। আপনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে থাকলে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য টিএসর সামনে নিয়ে আসতে হবে। টিএসএ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ব্যবস্থার একটি অংশ। ফলে বাড়তি যাচাইয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।আনসারি জানান, আপনি যদি সরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান তাহলে মুসলিক অ্যাডভোকেসির মতো সংস্থাগুলো আইনিভাবে সহায়তা করবে বা আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে।

দেশে প্রবেশের সময় কাস্টমস যে সব যাত্রীর ফোন নিয়ে গেছে, নো-ফ্লাই তালিকায় নাম থাকার কারণে যে সব যাত্রী ভিনদেশে আটকা পড়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়রানির কারণে যেসব ব্যক্তি দেশ ছেড়েছেন সিএআইআর তাদের ঘটনা শুনেছে ও প্রতিনিধিত্ব করেছে।মামলা করার বিষয়টিতে কিছু চ্যলেঞ্জ রয়েছে। মুসলিম অ্যাডভোকেটসের সাবেক আইনজীবী ম্যাথিউ ক্যালাহান জানান, মামলার বিষয়টি সময় ও খরচ সাপেক্ষ। অনেকেই মামলার বিষয়ে সহায়তা চান, কিন্তু নিজেদের নাম প্রকাশ্যে আসা নিয়ে সংকোচবোধ করেন। নিজের অফিস ও সহকর্মীরা সন্দেহের চোখে দেখতে পারেন এমন ধারণা থেকেই এই সংকোচ।

আপনার অধিকার চর্চা ও পদক্ষেপ নেয়া আরেকজনকে সহায়তা করতে পারে

বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েও অনেকে অভিযোগ করেন না। এর কারণ হলো, তারা বিষয়টি স্বীকার করার দায়িত্ব নিতে চাযন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের দায় থেকে সরকারকে জবাবদিহিতামুক্ত রাখে।সানা আনসারি বলেন, ‘টিএসএ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টার্গেট হওয়া ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঘটনা অপমানজনক, হতাশাজনক ও ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা। তবে আমি অবাক হব না যদি এমন কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েও কেউ পুরো বিষয়টিকে ভুলে যেতে চান।’আনসারি যোগ করেন, ‘যে সব মুসলিম মনে করেন, অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না; তাদেরকেও অভিযোগ জমা দিতে উৎসাহ দিচ্ছে মুসলিম অ্যাডভোকেটস।’তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরের একটি ইতিবাচক পরম্পরা হচ্ছে, আমেরিকান মুসলিমরা নিজেদের কথা জানাতে শুরু করেছেন। তারা সরকারি অফিসে যাচ্ছেন, আমেরিকান মুসলিম হওয়ার অভিজ্ঞতা অন্যদের বলছেন কিংবা বৈষম্যমূলক অভিযোগগুলো দাখিল করছেন। অভিযোগ করার মাধ্যমে অন্যায়কে আপনি প্রকাশ্যে আনছেন।

‘কেউ যদি টিএসএ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বৈষম্যমূলক আচরণ সম্বন্ধে কথা না বলেন, তাহলে মুসলিম অ্যাডভোকেটসের মতো সংস্থাগুলো সমস্যা অনুধাবন করতে পারবে না এবং আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে পারবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর