সন্তানদের ভিডিও গেম খেলা নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা উদ্বিগ্ন। সন্তানকে সামলে রাখতে না পারার কথা ভেবে অপরাধবোধেও ভোগেন অনেকে।
ভিডিও গেমে বুদ্ধিনাশ হয় এমন ভাবনার মানুষ অসংখ্য। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন উল্টো কথা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, ভিডিও গেম বুদ্ধি শানিয়ে তোলে শিশুদের।
পিআর রিভিউ জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে গত ১১ মে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ভিডিও গেমের প্রভাব পর্যালোচনায় ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী ৫ হাজারের বেশি শিশুকে বেছে নেন গবেষকেরা। দেখা যায়, শিশুদের মনে ভিডিও গেমের ইতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি।
গবেষণার জন্য বেছে নেয়া শিশুদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দিনে তারা কত ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটায়, ভিডিও বা টিভি দেখে এবং ভিডিও গেমের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করে। দেখা গেছে গড়ে শিশুরা দিনে আড়াই ঘণ্টা অনলাইন ভিডিও বা টিভি অনুষ্ঠান দেখতে ব্যয় করে। আধা ঘণ্টা অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং এক ঘণ্টা তারা কাটায় ভিডিও গেম খেলতে।
সামগ্রিকভাবে এসব শিশুর দিনে গড়ে চার ঘণ্টা এসব মাধ্যমের পেছনে ব্যয় করতে দেখা গেছে। তবে এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শিশুর ব্যয় করা সময়ের গড় ছিল ছয় ঘণ্টা। গত কয়েক দশকে এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, স্ক্রিনে চোখ আটকে রাখার ফল খুব একটা খারাপ নয়, বরং তা শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বেশ সহায়ক। ভিডিও গেমের মাধ্যমে স্ক্রিনে সময় কাটানো শিশুর চিন্তাশক্তি বাড়ে। জটিল জিনিসগুলো সমাধানের সক্ষমতা বাড়ে। পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শেখে শিশুরা।
গবেষণায় কার্যকরভাবে শেখা, যুক্তিযুক্ত চিন্তা করা, জটিল ধারণাগুলো বোঝা এবং নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা পরখ করা হয়েছে। এতে ভিডিও গেম খেলা বা না খেলা ১০ বছর বয়সী শিশুদের তুলনা করে দুজনের গড় বুদ্ধির তেমন হেরফের পাওয়া না গেলেও, দুই বছর পর দেখা গেছে বুদ্ধিমত্তায় বেশি এগিয়ে আছে ভিডিও গেম খেলা শিশুরা। ছেলে-মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, যেসব শিশু ভিডিও গেম খেলার দিক থেকে প্রথম সারিতে ছিল, দুই বছরের মধ্যে তাদের আইকিউ অন্য শিশুদের তুলনায় আড়াই পয়েন্ট বেশি হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইনস্টাগ্রামিং এবং মেসেজিং শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাড়ায়নি, তবে এটি ক্ষতিকরও নয়।
আর একটি বিশ্লেষণে টিভি ও অনলাইন ভিডিও দেখার কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা গেছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকটি বিবেচনায় নিলে এই প্রভাব খুব একটা কাজের নয়। গবেষকেরা বলছেন, টিভি অনুষ্ঠানে শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু যুক্ত থাকলেই কেবল সেটি শিশুর বুদ্ধিমত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর বাইরে সাধারণ অনুষ্ঠানের তেমন কোনো উপযোগিতা নেই।
ফলে ভিডিও গেমে বুঁদ সন্তানকে দেখে উদ্বেগের পরিবর্তে বরং খুশি হওয়ার সময় এসেছে আপনার।