সুনীল আকাশ। নীল পরি আকাশে উড়তে উড়তে ভাবল, নীল আকাশে আমাকে ঠিক মানাচ্ছে না। আমি সাদা পরি হব।
নীল পরি মন খারাপ করে রানি মার কাছে গেল। হাত জোর করে বলল, রানি মা, আপনি আমাকে সাদা পরি বানিয়ে দিন।
রানি মা বললেন, আমি পরিদের ইচ্ছা পূরণ করি। তার মানে এই নয়, সব ইচ্ছা পূরণ করব। তোমাকে সঠিক যুক্তি দিতে হবে। কেন তুমি সাদা পরি হতে চাও?
নীল পরি বলল, আমাদের পরি রাজ্যে একটাও সাদা পরি নেই। তা ছাড়া নীল আকাশে আমাকে ঠিক মানাচ্ছে না। সে জন্য আমি সাদা পরি হতে চাই।
রানি মা বললেন, ঠিক আছে। মুহূর্তেই নীল পরি ধবধবে সাদা পরি হয়ে গেল। সাদা পরি হাসতে হাসতে বলল, ধন্যবাদ রানি মা। এই বলে সাদা পরি আকাশে উড়াল দিল।
সাদা পরি আকাশে উড়তে উড়তে ভাবল, এখন নীল আকাশে আমাকে খুব মানাচ্ছে। সাদা মেঘেরা সাদা পরিকে বলল, বাহ! তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। সাদা পরি হাসল। কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো- আমি সাদা পরি। কিন্তু মেঘগুলো সাদা কেন? এই মেঘ, তোমরা সাদা কেন? সাদা মেঘেরা অবাক হয়ে বলল, আশ্চর্য! আমরা তো আগে থেকেই সাদা। সাদা মেঘ বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ে না। কালো মেঘ ঝরে পড়ে। তাই আমরা সাদা মেঘ। কেন তুমি আমাদের দেখতে পাওনি?
সাদা পরি বলল, আকাশে ওড়ার সময় এতই মগ্ন ছিলাম তোমাদের খেয়ালই করিনি। হঠাৎ পরির হিংসে হলো। সে বলল, না এই আকাশে আমি সাদা থাকব। আর কেউই সাদা থাকবে না।
সাদা পরি রানি মার কাছে ছুটে এলো। কাকুতি-মিনতি করে বলল, রানি মা, আকাশের সব সাদা মেঘগুলো কালো করে দিন।
রানি মা ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন, কেন? সাদা পরি বলল, ক্ষমা করবেন রানি মা। এই পরি রাজ্যে আমিই একমাত্র সাদা পরি। আমি চাই না আমার সঙ্গে আকাশের কারোর তুলনা চলুক।
সাদা পরি আর্তনাদ করতে লাগল। রানি মা দয়া করুন। রানি মা আবেগে আপ্লুত হয়ে বললেন, ঠিক আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সাদা মেঘগুলো কালো হয়ে গেল। অন্ধকারে ভরে উঠল আকাশ। পরি রাজ্যে সূর্যের আলো আসা বন্ধ হয়ে গেল। পরি প্রাসাদের সব আলো জ্বালিয়ে দেয়া হলো।
রানি মা চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ তিনি একবার যে কাজ করেন সে কাজ দ্বিতীয়বার পরিবর্তন করতে পারেন না। সাদা পরির ওমন কথা রাখা তার ঠিক হয়নি। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই। তবু রানি মা সবজান্তা পাখিকে জিজ্ঞেস করলেন, হে সবজান্তা পাখি, আকাশের কালো মেঘগুলো সাদা করে দেয়ার কোনো উপায় জানো?
সবজান্তা পাখি বলল, ক্ষমা করবেন রানি মা। আমি একটি উপায় জানি। কিন্তু কোনোভাবেই সেটি প্রকাশ করতে পারব না।
পরি রাজ্যে কান্নাকাটি শুরু হলো। হাহাকার পড়ে গেল। রানি মা প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং সাদা পরিকে পরি রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
সাদা পরি দিগ্বিদিক হারিয়ে পৃথিবীতে নেমে এলো। গাছের নিচে কয়েকজন শিশু বসে আছে। হাতে-পায়ে ধূলিকাঁদা মাখা। ওরা ভাগাভাগি করে রুটি খাচ্ছে। ওদের ঠোঁটে হাসি, চোখে হাসি, মুখে হাসি। সাদা পরি দূর থেকে এসব দেখছিল। সে অবাক হলো! মানুষগুলো এত অভাবী তবু এত সুখী। সাদা পরি এগিয়ে গেল। শিশুরা চমকে উঠল। কে গো তুমি? কই থেইকা আইছ?
সাদা পরি বলল, আমি পরি। আমি এমন একজন পরি ছিলাম যেকোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারতাম না। পরি রানি আমার সব ইচ্ছা পূরণ করতেন। তার জন্য অনেক বড় ক্ষতি হলো। পরি রানি আমাকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
শিশুরা দুঃখ প্রকাশ করে বলল, আহ! পরি কষ্ট পেও না। আমরা ফুল বিক্রি করি। কোনো দিন খাইতে পাই। কোনো দিন পাই না। সাদা পরির চোখ ভিজে উঠল। ওমনি আকাশ থেকে সব কালো মেঘ সরে গেল।
রানি মা সবজান্তা পাখিকে জিজ্ঞেস করলেন, হে সবজান্তা পাখি, কী করে আকাশের কালো মেঘগুলো সাদা হয়ে গেল? সবজান্তা পাখি বলল, সাদা পরি অনুশোচনায় ভুগছে। তার চোখে অনুশোচনার অশ্রু ঝরছে। সবাই হাসি-আনন্দে সাদা পরিকে পরি রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।