বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাগাভাগি

  • জসীম উদ্দীন   
  • ৪ মে, ২০২২ ০৯:১৬

ছোট ভাই খুব খুশি। বড় ভাই দিনের বেলার জন্য কাঁথাখানা তাকে দিয়েছে! কিন্তু দিনের বেলা গরম। তখন কাঁথা গায়ে দেওয়া যায় না। সে কাঁথাখানাকে সারা দিন এ ভাঁজ করে ও ভাঁজ করে দেখে। রাত হলে বড় ভাই কাঁথাখানা নিয়ে যায়। ছোট ভাই সারারাত শীতে ঠিরঠির করে কাঁপে। বড় ভাই দিব্যি আরামে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়।

বাপ মরে গিয়েছে। দুই ভাই আলাদা হবে। বড় ভাই ছোট ভাইকে বলল, “দেখ, আমাদের একটিমাত্র গাই (গাভি) আছে, কেটে তো আর দুই ভাগ করা যাবে না। তুই ছোট ভাই। তোকেই গাইয়ের বড় ভাগটা দিই। তুই তাহলে গাইয়ের মুখের দিকটা নে। আর আমি গাইয়ের লেজের দিকটা নিই।”

ছোট ভাই ভারি খুশি! বড় ভাই যে তাকে ভালো ভাগটা দিয়েছে, সে জন্য সে বড় ভাইয়ের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। সে সারা দিন এখান হতে ওখান হতে ঘাস কেটে এনে গাইটাকে খাওয়ায়। আর ওদিকে বড় ভাই রোজ সকালে হাঁড়িভরে দুধ দোয়ায়।

সেই দুধ দিয়ে ছানা বানায়, ছানা দিয়ে রসগোল্লা বানায়, সন্দেশ বানায় আরও কত কি বানায়!

বড় ভাই ভারি খুশি, “বেশ আমার ছোট ভাই। এমনিই তো চাই। এবার বুঝতে পারলাম, বাপের সম্পত্তি তুমি ঠিকই রক্ষা করতে পারবে। তোমার ভাগে যখন গাইয়ের মুখের দিকটা পড়েছে, তখন নিশ্চয়ই তোমাকে ভালোমতো তাকে খাওয়াতে হবে।”

বড় ভাইয়ের তারিফ শুনে ছোট ভাই আরও বেশি করে গরুকে ঘাস দেয়। বড় ভাই আরও বেশি করে গরুর দুধ দোয়ায়; আর ছোট ভাইকে আরও বেশি করে তারিফ করে।

একজন চালাক লোক একদিন ছোট ভাইকে বলল, “আরে বোকা! তুই গরুর মুখের দিকটা নিয়ে দিনরাত গরুকে ঘাস খাইয়ে মরছিস, আর ওদিকে তোর বড় ভাই মজা করে দুধ দুইয়ে নিচ্ছে।”

ছোট ভাইয়ের তখন টনক নড়ল, “তাই তো! কিন্তু এখন তো কিছুই করার উপায় নাই। আমি যে আগেই গরুর মাথার দিকটা নিয়ে ফেলেছি। ঘাস আমাকে খাওয়াতেই হবে।”চালাক লোকটি তখন ছোট ভাইকে কানে কানে একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল।

পরদিন সকাল। যেই বড় ভাই গাইয়ের দুধ দোয়াতে এসেছে, অমনি ছোট ভাই গাইটির সামনের অংশে একটি লাঠি নিয়ে খোঁচা মারতে শুরু করল। এতে গাই গরুটি এদিক-ওদিক নড়ে উঠছিল। গাই দোয়ানো অসম্ভব। বড় ভাই তখন বলে, “আরে করিস কী? করিস কী?”

ছোট ভাই উত্তর দেয়, “রোজ আমি গরুকে ঘাস খাওয়াই। দুধ দুইয়া নিয়ে যাও তুমি। আমাকে একফোঁটা দুধও দাও না। গরুর মাথার দিকটা যখন আমার, তার ওপরে আমি মুগুরই মারি, আর কুড়ালই মারি, খোঁচা মারি তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না।”

বড় ভাই বুঝল, কোনো চালাক লোক ছোট ভাইকে বুদ্ধি দিয়েছে। সে তখন ছোট ভাইকে বলল, “আর তুই গাইর মাথায় মুগুর মারিস না। এখন হতে গরুর দুধের অর্ধেক তোকে দেব।”

ছোট ভাই বলল, “শুধু অর্ধেক দুধ দিলেই চলিবে না, তোমাকে আজ হতে গরুর জন্য অর্ধেক ঘাসও কাটতে হবে। নইলে এই মারলাম আমি গরুর মাথায় মুগুরের ঘা!”

“আরে রাখ রাখ।” বড় ভাই মুলাম (নরম) হয়ে বলে, “আজ থেকে অর্ধেক ঘাসও আমি কাটব!”

বাড়িতে ছিল একটা খেজুরগাছ। শীতকাল, খেজুরগাছ কেটে রস বের করতে হবে। বড় ভাই ছোট ভাইকে বলে, “আমাদের একটামাত্র খেজুরগাছ। কেটে তো ভাগ করা যায় না। সেবার গরুর মাথার দিকটা নিয়ে তুই ঠকেছিলি। এবার বল খেজুরগাছের কোন দিকটা নিবি? গোড়ার দিকটাই বুঝি তোর পছন্দ হবে।”

ছোট ভাই কিছু না ভেবেই উত্তর করে, “আমি খেজুরগাছের গোড়ার দিকটাই নেব।”

বড় ভাই খুশি হয়ে বলে, “আচ্ছা তোর কথাই থাক। তুই ছোট ভাই, ভালো ভাগটা চাইলি, আমি বড় ভাই হয়ে তো না করতে পারি না!”ছোট ভাই নিল খেজুরগাছের গোড়ার দিকটা। সে গাছের গোড়ায় রোজ পানি ঢালে। তাতে গাছ আরও তাজা হয়।

বড় ভাই গাছের আগায় হাঁড়ি বসিয়ে মনের আনন্দে রস পেড়ে আনে। শীতকালে খেজুরের রস খেতে কি মজা! রস দিয়ে গুড় তৈরি হয় গুড় দিয়ে মজার মজার পিঠা তৈরি হয়।

এইভাবে কিছুদিন যায়। বড় ভাই খেজুরের রস খেয়ে মোটা হয়ে উঠেছে। আর ছোট ভাই খেজুরগাছের গোড়ায় পানি ঢালতে ঢালতে মাজায় ব্যথা করে ফেলেছে।

এমন সময় সেই চালাক লোকটি আবার এসে দেখল ছোট ভাই কেমন ঠকেছে। সে তখন ছোট ভাইকে সবকিছু বুঝিয়ে বলল।

ছোট ভাই বলল, “তাই তো, এবারও আমি ঠকেছি। কিন্তু খেজুরগাছের গোড়ার দিকের ভাগ তো আমি নিজেই চেয়ে নিয়েছি। এর তো আর কোনো প্রতিকার হবে না।”

“দূর বোকা কোথাকার! বুদ্ধি থাকলে প্রতিকার হবে না কেন?” এই বলে চালাক লোকটি ছোট ভাইর কানে কানে আর একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল।

পরদিন সন্ধ্যাবেলা, যেই বড় ভাই খেজুরগাছে উঠে সেখানে হাঁড়ি পাততে গাছের আগায় ছাল খানিকটা কাটতেছে, অমনি ছোট ভাই একখানা কুড়াল নিয়ে খেজুরগাছের গোড়া কাটতে লাগল, খপ-খপ-খপ।

বড় ভাই গাছের ওপর থেকে শব্দ শুনে বলল, “আরে করিস কী? করিস কী?”

ছোট ভাই গাছের গোড়ায় কুড়াল মারতে মারতে উত্তর করল, “তুমি গাছের মাথা নিয়েছ। রোজ গাছের মাথা থেকে রস পেড়ে খাও। আমাকে একটুও দাও না। আমার যখন গাছের গোড়াটা, সেখানে আমি কুড়াল মারি আর যাই করি তুমি কিছু বলতে পার না।” এই বলে ছোট ভাই আবার গাছের গোড়ায় কুড়ালের কোপ দিতে আরম্ভ করল, খপ-খপ-খপ।

“আরে থা-থা-থাম্”, বড় ভাই বলে, “আজ থেকে খেজুরের রসও অর্ধেক তোকে দেব।”

দুই ভাই বেশ আছে, গরুর দুধ আর খেজুরের রস দুজনে সমান সমান ভাগ করে লয়।

তাদের বাড়িতে ছিল একখানা মাত্র কাঁথা! বড় ভাই ছোট ভাইকে বলে, “দেখ কাঁথাখানাকে তো ছিঁড়ে দুই টুকরা করা যায় না। তুই কাঁথাখানি দিনের ভাগে তোর কাছে রাখ। আমাকে রাত হলে দিস।”

ছোট ভাই খুব খুশি। বড় ভাই দিনের বেলার জন্য কাঁথাখানা তাকে দিয়েছে! কিন্তু দিনের বেলা গরম। তখন কাঁথা গায়ে দেয়া যায় না। সে কাঁথাখানাকে সারা দিন এ ভাঁজ করে ও ভাঁজ করে দেখে। রাত হলে বড় ভাই কাঁথাখানা নিয়ে যায়। ছোটভাই সারারাত শীতে ঠিরঠির করে কাঁপে। বড় ভাই দিব্যি আরামে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়।

সেই চালাক লোকটি আবার এসে ছোট ভাইর অবস্থা দেখল। দেখে তার কানে কানে আর একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল।

পরদিন সন্ধ্যাবেলা ছোট ভাই কাঁথাখানা পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখল। বড় ভাই যখন শোয়ার সময় ছোট ভাইয়ের কাছে কাঁথা চাইল, সে তাকে ভেজা কাঁথাটি এনে দিল।

বড় ভাই খুব রাগ করে বলল, “আরে করেছিস কী? কাঁথাখানা ভিজিয়ে রেখেছিস?”

ছোট ভাই উত্তর করল, “কাঁথাখানা যখন দিনের ভাগে আমার, তখন সেটা দিয়ে আমি দিনের ভাগে যা ইচ্ছা করতে পারি! তোমার তাতে কোনো কথা বলার সুযোগ নাই।”

বড় ভাই তখন বলল, “কাল থেকে রাতে আমরা দুই ভাই-ই একসঙ্গে কাঁথা ব্যবহার করব।”

এ বিভাগের আরো খবর