একে একে বিচারকরা মঞ্চে তৃতীয় আর দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম বললেন। অনেক অনেক প্রতিযোগী ছিল। আর অনেক অতিথি, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে আবির। ইট-পাথরের শহুরে আবিরের বাড়ি না। তার বাড়ি ঘন সবুজ ছবির মতো সুন্দর গ্রামে। যেখানে নদী আছে। ক্ষেতে দুলে সবুজ কচি ধানগাছ। আকাশজুড়ে ধবধবে সাদা মেঘের ওড়াউড়ি, তার নিচে দূর্বাঘাসে ঢাকা আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। আর ছোট-বড় অনেক বিল। বিলের জলে লালপদ্ম ফুল, নানান জাতের মাছ। কোনো কোনো বিলে ফুটে আছে ধবধবে সাদা কতশত শাপলা।
জয়ীদের নাম ঘোষণার সময় আবিরের বুক ধুকধুক করে কাঁপছিল। ভেবেছিল সে কখনো জয়ী হবে না। হলেও তৃতীয় বা দ্বিতীয় হবে।
প্রথম প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা হলো। বিচারক বললেন, এ বছরের সেরা চিত্রশিল্পী আবির।
মাইকে নিজের নাম শুনে আবির তো অবাক। উপস্থিত সবাই চেয়ে দেখল, মঞ্চের দিকে এক পায়ে ক্রাচে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে ১০ বছরের একটি শিশু।
জন্ম থেকে আবিরের ডান পা নেই। বাঁ হাত দিয়ে ক্রাচে ভর করে আবির হাঁটে। এতে তার কোনো দুঃখ নেই। সে সবার মতোই হাসিখুশি। পড়াশোনায়ও অনেক মেধাবী। সে সুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
মঞ্চে উপস্থিত বিচারক আর অতিথিরা আবিরকে দেখে থমকে গেলেন। এতটুকুন ছেলেটা এত সুন্দর ছবিটি এঁকেছিল! প্রধান বিচারক আবিরকে জড়িয়ে ধরে অনেক লম্বা লেকচার দিলেন। যার সারাংশটা এমন, প্রতিবন্ধী কখনো সমাজের বোঝা নয়। এরাও দেশের সম্পদ, জাতির ভবিষ্যৎ।
ক্রেস্ট নিয়ে মঞ্চ থেকে নামার সময় আবিরের মনে পড়ে ছবিটির কথা। সে এঁকেছিল একটি শিশুকে। পার্কে বসে যে একটি কুকুরছানাকে পানি খাওয়াচ্ছিল। সেই ছবির এক কোণে দাঁড়িয়ে আর বসে আছে দশ-বারোজন মানুষ।