বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্যোগ দুর্ঘটনায় আপনজন ফায়ার সার্ভিস

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:১৫

কোথাও আগুন লেগে গেলে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসে ফোন করতে হয়। এ সময় তারা আগুন লাগার স্থানের ঠিকানা জেনে নেন। ওদিকে অগ্নিনির্বাপণ-কর্মীদের একটি দল সব সময় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে যেন খবর পেলেই দ্রুততম সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারে।

কোথাও আগুন লাগলে সেটা নেভানোর জন্য লাল রঙের গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে যারা আসেন, তারা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স বিভাগের কর্মী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরা আগুন নেভান, আহতদের উদ্ধার করেন। সেই কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেকে আহত হন, অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

শুধু আগুন নেভানোর ক্ষেত্রেই নয়, এরা ভূমিকম্প, সুনামি, ভূমিধস এমনকি সড়ক দুর্ঘটনাতেও উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। কোথাও ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, কোথাও ফায়ার ব্রিগেড আবার কোথাও বা দমকল বাহিনী। তবে নাম যা-ই হোক, তাদের সবার কাজ কিন্তু মোটামুটি একই রকম।

তুরাগ নদীতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা।

তোমরা হয়তো সবাই জানো, ঠিক এ রকমই একটি সংস্থা আছে আমাদের দেশে। পুরো নাম বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৮২ সালে এটি কার্যক্রম আরম্ভ করে। এদের মূল মন্ত্র হলো গতি, সেবা ও ত্যাগ। মানে দ্রুতগতিতে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে আর্ত মানুষের সেবা প্রদান করা এবং সেটি করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও পিছপা না হওয়া।

প্রথম সাড়া প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে এ বিভাগের কর্মীরা আগুন নেভান। আগুন প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে এরা জনসাধারণকে প্রশিক্ষণও দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকেন।

প্রথম ফায়ার সার্ভিস

প্রাচীন রোমে প্রথম ফায়ার সার্ভিস গঠনের প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ২৪ সালে রোমের শাসক মার্কাস ইগনাটিউস রুফুস তার কৃতদাসদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন, যাদের কাজ ছিল আগুন নেভানো।

১৯০৫ সালের আমেরিকান ফায়ার ডিপার্টমেন্টের একটি ইঞ্জিন।

বালতিতে করে পানি নিয়ে এরা আগুন নেভানোর কাজ করত। প্রথমে এরা পাশাপাশি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যেত। লাইনের প্রথম ব্যক্তি পানিপূর্ণ বালতি পাশের জনকে দিত। সে আবার দিত তার পাশের জনকে। এভাবে বালতিটি পৌঁছে যেত দুর্ঘটনাস্থলে। তারপর সেই পানি আগুনে ছুড়ে দেয়া হতো। এই দলের সদস্যরা ঘুরে ঘুরে দেখতেন কেউ ‘আগুন প্রতিরোধী নিয়ম’ লঙ্ঘন করছে কি না। তেমন কাউকে পাওয়া গেলে পরবর্তীতে সময়ে শাস্তি দেয়া হতো। আর একটা বিষয়, আগুন নেভানোর জন্য এরা কোনো পারিশ্রমিক নিতেন না। তাদের সেবাটা ছিল একদম ফ্রি।

১৯২১ সালে তোলা এই ছবিতে আমেরিকান ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের দেখা যাচ্ছে।

উপমহাদেশে ফায়ার সার্ভিস

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত ভারতে ১৯৩৯ সালে ফায়ার সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে। সে সময় আঞ্চলিক পর্যায়ে কলকাতা শহরের জন্য কলকাতা ফায়ার সার্ভিস এবং বাংলার জন্য (কলকাতা বাদে) বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসকে পূর্ব পাকিস্তান ফায়ার সার্ভিস নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৮২ সালে তৎকালীন ফায়ার সার্ভিস পরিদপ্তর, সিভিল ডিফেন্স পরিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্ধার পরিদপ্তর- এই তিনটি পরিদপ্তরের সমন্বয়ে বর্তমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরটি গঠিত হয়।

যেভাবে কাজ করে

কোথাও আগুন লেগে গেলে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসে ফোন করতে হয়। এ সময় তারা আগুন লাগার স্থানের ঠিকানা জেনে নেয়। ওদিকে অগ্নিনির্বাপণ-কর্মীদের একটি দল সব সময় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে যেন খবর পেলেই দ্রুততম সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারে।

এই লক্ষ্যে আগে থেকেই ট্যাংকারে পানি ভরা থাকে। অগ্নিনির্বাপণ-কর্মীরা সেই ট্যাংকার নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। এ সময় তাদের গাড়িতে সাইরেন বাজে যেন রাস্তার অন্য গাড়ি একপাশে সরে গিয়ে তাদের আগে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা পানি ছিটানো শুরু করেন। পানিবাহী গাড়ির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় মই থাকে যার সাহায্যে তারা বহুতল ভবনে পানি ছিটাতে পারেন এবং সেখান থেকে আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে পারেন।

আগুন নেভানোর পর তারা আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান করেন। ভবিষ্যতে যেন আর আগুন না লাগে, সেই পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তাও তারা দিয়ে আসেন।

তোমার আশপাশে কোথাও যদি আগুন লাগে তাহলে দেরি না করে ০২-৯৫৫৫৫৫৫ এই নাম্বারে ফোন করবে। এটা ঢাকা অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিস বিভাগের নাম্বার। তবে যারা ঢাকার বাইরে থাকো, তাদের আশপাশেও কিন্তু আছে ফায়ার স্টেশন। সেখানকার ফোন নাম্বারগুলো সংগ্রহ করে মুখস্থ করে নিতে ভুলো না কিন্তু।

এ বিভাগের আরো খবর