মেঘের রানী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ রানীর নাকে সুড়সুড়ি। আর তাতেই...
মেঘের রানীর ঘুম গেছে ছুটে।
অমন মজার ঘুম কে নিল লুটে?
ঘুম ভাঙতেই রানী ডাকলেন, ‘অ্যাই কে আছিস?’
কেউ এলো না। এমনকি কেউ সাড়াও দিল না। এতবড় সাহস! কী, কেউ নেই?
আশপাশে তাকালেন রানী। ওই তো সবাই-ই আছে। তবে ঘুমে। শীতকালে সব মেঘেরা ঘুমিয়ে থাকে। রানীও তো ঘুমুচ্ছিলেন। কিন্তু তার ঘুম ভাঙাল কে?
আবারও সেই সুড়সুড়ি। রানীর নাকে সুড়সুড়ি! কে দেয়?
কে দেয় আবার! সুবাস। কিসের সুবাস? রানী বুঝতে পারলেন না।
এবার গর্জে উঠলেন রানী, ‘অ্যাই কে আছিস?’
রানীর গর্জনেই ঘুম ভেঙে গেল সব মেঘের। ছুটে এলো সেনাপতি মেঘ, ‘হুকুম করুন রানীমা!’
রানী বললেন, ‘ধরে নিয়ে আয় তাকে!’
অবাক হলো সেনাপতি মেঘ। জানতে চাইল, ‘কাকে!’
জানতে চাইলেন, ‘বুঝতে পারছ না কাকে? সুড়সুড়ি পাচ্ছ নাকে?’
সুড়সুড়ির আশায় নাক টানল সেনাপতি মেঘ। বলল, ‘না তো রানীমা! নাকে কোনো সুড়সুড়িই পাচ্ছি না।’
‘সত্যিই পাচ্ছ না?’
হঠাৎ খুশি হয়ে উঠল সেনাপতি, ‘জি রানীমা। পাচ্ছি। এই...’
পুরো কথাও শেষ করতে পারল না সেনাপতি মেঘ। তার আগেই, হ্যাঁ-চ-চো!
সেনাপতি মেঘের এই এক অভ্যাস। ঘুম ভাঙলেই হাঁচি দেয়। তা-ও একটি দুটি নয়। অনেক হাঁচি।
এবারও হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে সেনাপতি মেঘ।
বড় বিরক্ত হলেন রানী। বললেন, ‘এসব কী! তোমার রুমাল কোথায়? হাঁচির সময় মুখে রুমাল দিতে হয়, জানো না?’
যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিল, তেমনি হঠাৎ থেমে গেল হাঁচি। হাঁচি থামতেই বলল, ‘জানি তো রানীমা। এই যে দিচ্ছি।’
বলেই খাপ থেকে রুমাল বের করে নাক চেপে ধরল সেনাপতি মেঘ। কিন্তু এ কী! এ তো রুমাল নয়! এ যে তরবারি। খাপে তো তরবারিই থাকার কথা। আর সেই তরবারিকে কি না রুমাল ভেবে নাক চেপে ধরল!
সেনাপতি মেঘের কাণ্ড দেখে খিল খিল করে হেসে উঠলেন রানী। রানীর হাসিতে সব মেঘও হেসে উঠল।
রানী বললেন, ‘থাক। আর রুমাল খুঁজতে হবে না। বরং সুবাসটা কিসের খোঁজ নাও। যাও!’
তবু দাঁড়িয়ে রইল সেনাপতি মেঘ। রানীমা বিরক্ত হলেন আবারও। বললেন, ‘কী বলেছি শুনতে পাওনি?’
সত্যিই শুনতে পায়নি সেনাপতি মেঘ। কিভাবে শুনবে? রানীর সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে সেনাপতি মেঘ।
গর্জে উঠলেন রানীমা। ঠিক যেন মেঘের গর্জন। আর সে গর্জনে ছুটে গেল সেনাপতির ঘুম। তবে তার চোখ দুটি তখনও ঢুলু ঢুলু। অসময়ে ঘুম ভাঙলে তো চোখ ঢুলু ঢুলু করবেই। ঢুলু ঢুলু চোখে রানীর হুকুমের অপেক্ষা করছে সেনাপতি মেঘ।
নির্দেশ দিলেন রানীমা, ‘সুবাসটাকে খুঁজে বের করে নিয়ে এসো!’
এবার ঢুলতে ঢুলতে গুহা থেকে বেরিয়ে এলো সেনাপতি মেঘ। সঙ্গে তার অনেক সাঙ্গোপাঙ্গ। সাঙ্গোপাঙ্গরাও তখন ঢুলছিল। ঢুলতে ঢুলতেই এদিক গেল, ওদিক গেল। তারপর ঢুলতে ঢুলতে আবার গুহায় ফিরে এলো সবাই।
সেনাপতিকে ফিরতে দেখেই জানতে চাইলেন রানীমা, ‘সুবাসটাকে এনেছ?’
‘না, রানী মা। অনেক খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।’
‘তাহলে উপায়?’
জবাব নেই। থাকবে কী করে? আবার ঘুমিয়ে পড়ল সেনাপতি মেঘ।
নাহ। এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এবার নিজেই মেঘের গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন রানী। চড়ে বসলেন মেঘের পালকিতে। আর অমনি ডানা মেলে হাওয়ায় ভাসতে লাগল পালকিটা। সুবাসের খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন মেঘের রানী।
গুহা থেকে বেশ কিছুদূর গিয়েই পালকি থামালেন রানী।
উত্তরমুখো হয়ে লম্বা এক দম নিলেন। নেই।
এবার দক্ষিণমুখো হয়ে নিলেন আরেকটা দম। তা-ও নেই।
তারপর পূর্বে। নেই।
পশ্চিমেও নেই।
তাহলে সুবাসটা আসছে কোত্থেকে? আকাশ থেকে নয় তো!
এবার নাকটাকে আকাশের দিকে তুলে ধরলেন রানী। জোরে এক দম নিলেন। কিন্তু না। এবারও কোনো সুবাস পেল না রানীর নাক। তাহলে ওটা কোথায়?
এবার নাকটা নিচের দিকে নামিয়ে ছোট্ট একটা দম নিতেই...
আরে! সেই সুবাস!
সুবাসের খোঁজ পেয়ে গেলেন রানী। আর সুবাসের খোঁজ পেতেই ঘটল উল্টো একটা ব্যাপার। সুবাসটাই এবার টানতে লাগল রানীকে। আর সেই সুবাসের টানে নামতে নামতে রানীকে নিয়ে অনেকখানি নিচে নেমে এলো পালকি। আরে! এটা তো টুলুদের বাড়ি। বর্ষাকালে এই বাড়ির ওপর দিয়ে কত ছোটাছুটি করেছেন! তাই দেখেই চিনতে পেরেছেন। সুবাসটা তবে টুলুদের বাড়ি থেকেই আসছে। কিন্তু কিসের সুবাস?
পিঠার সুবাস। বাড়ির উঠানে বসে শীতের পিঠা বানাচ্ছিলেন টুলুর নানি। সেই পিঠা থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে সুবাস। আর সেই সুবাসের টানে মেঘের গুহা থেকে ছুটে এলেন মেঘের রানী। এই পিঠা তো খেতেই হবে। আর পিঠা খেতে হলে নামতে হবে টুলুদের বাড়ির উঠানে। এবার বাড়ির উঠানের দিকে নামতে লাগলেন রানী। আর নামতে নামতে হঠাৎ...
হঠাৎ থেমে গেলেন মেঘের রানী। আর তো নিচে নামতে পারবেন না। কেন?
কারণ আরো নিচে নামলেই আর মেঘ থাকবেন না। হয়ে যাবেন বৃষ্টি। কে না জানে, মেঘেরা মাটিতে নামলেই তো বৃষ্টি হয়ে যায়!
মন খারাপ হয়ে গেল মেঘের রানীর। আর মন খারাপ করে টুলুদের বাড়ির ওপরেই ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন। তারপর একসময় আবার ফিরে গেলেন মেঘের গুহায়।
শীতকালে মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ জমে। ওগুলোই কিন্তু শীতের পিঠার সুবাসের টানে ঘুরে বেড়ানো মেঘ।