এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম। ধনী লোকেরা আছে। স্কুল আছে। সরকারি ডিসপেনসারিও আছে। সেই ইংরেজ আমলে জেলায় কোন সম্পন্ন গ্রাম হলেই শুধু অমন ফ্রি ডিসপেনসারি থাকত। সেই গ্রামের এক বাড়িতে অতিথিশালাও ছিল।
এক গরিব মৌলভী সাহেব এক রাতের জন্য সেই অতিথিশালায় উঠেছেন। যাবেন অনেক দূরে। কোনো রকমে রাতখানা কাটিয়ে ভোরবেলায় যাত্রা করবেন গন্তব্যের দিকে।
রাত্রিবেলায় ঘুমিয়ে আছেন মৌলভী। হঠাৎ টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙে তার। টিপটিপ করে তাকিয়ে দেখেন ঘরে চোর। তার তো কিছু নেই—একটা ঝোলা মাত্র। তাতে দু-একখানা পুরোনো পাজামা আর পাঞ্জাবি। পাঁচটি টাকা আছে, তাও কোমরে গোঁজা। তাই মালপত্র টাকা-কড়ি নিয়ে তার চিন্তা নেই।
আর অতিথিশালায় চুরি করার মতো জিনিসপত্র তার চোখে পড়েনি। তাহলে কেন চোর এলো?
সাধু ব্যাপার কী দেখার জন্য ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে। চোর আর কিছু না পেয়ে আলমারিতে রাখা নতুন চাদর আর তাতে প্যাঁচিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ধুয়ে রেখে দেয়া বাসন, পিরিচ ও কাপ নিয়ে চম্পট দেয়ার উপক্রম।
মৌলভী সাহেব অমনি লাফ দিয়ে উঠে চোরকে ধরে ফেলে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
ততক্ষণে চোর ঘরের বাইরে এসে পড়েছে। মৌলভী তাকে তখনও ধরে রেখেছেন। ফলে দু’জনে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ইতিমধ্যে বাড়ির লোকজন চাকর-বাকররাও আসে।
এদের দেখে চোর বলে ওঠে, ‘নাম ফাটায়, মৌলভী। আসলে সে ছিচকে চোর। তা না হলে সামান্য বাসন-প্লেট ও কাপের লোভ সামলাতে পারে না? কিন্তু কর্তা, পালাতে দিইনি। বাছাধনকে ধরে ফেলেছি।’
মহা হইচই কাণ্ড। মৌলভী মাথা নেড়ে একবার শুধু বলে, ‘আল্লাহর কসম, ওই তো চোর।’
বাড়ির মালিক চাকরদের বলেন, ‘দুজনকেই বেঁধে রাখ। সকালে ফয়সালা হবে।’
সকালে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আসেন। চৌকিদার-দফাদার আসেন। দুজনকেই নিয়ে গিয়ে এক লাশ কাঁধে তুলে দিয়ে বলেন, কবরে নিয়ে যাও।
মৃত মানুষ কাঁধে দুই কথিত চোর। যেতে যেতে এক জায়গায় এসে ক্লান্ত মৌলভী বলেন, ‘হায় আল্লাহ শেষকালে চোর বানালে।’
আসল চোর বলে : আমাকে ধরলি কেন? এখন মজা বোঝ।
হঠাৎ শব্দ হয়, ‘থাম, থাম। আমাকে ঘাড় থেকে নামা।’
প্রেসিডেন্টের নির্দেশে মরার ছদ্মবেশধারী নেমে আসে। আসল চোর চিহ্নিত হয়।