বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেনালি রামনের গল্প

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৯ অক্টোবর, ২০২১ ১০:৩০

যে কথা সেই কাজ। শহরের প্রধান রাস্তায় ছবিটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। ঢাকঢোল পিটিয়ে শহরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হলো, ছবিতে কোথায় কোন ত্রুটি আছে, খুঁজে বের করতে হবে।

তেনালি রামকৃষ্ণ ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারের একজন কবি এবং পরামর্শদাতা। তাকে আমরা চিনি তার অসাধারণ রসিকতা, কৌতুক-রসবোধ এবং অসামান্য বুদ্ধিমত্তার জন্য। আজ শুনব তার একটি মজার ঘটনা।

রানির ছবি

রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের ইচ্ছা হলো রানির একটা প্রতিকৃতি আঁকাবেন। রানির ছবি বলে কথা! নিখুঁত হতেই হবে। খ্যাতিমান এক চিত্রকরকে এনে রানির ছবি আঁকা হলো। রাজা সভাসদদের জিজ্ঞেস করলেন, 'কেমন হয়েছে?'

প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'হুমঁম... ঠিকই আছে। তবে রানির চোখের ঔজ্জ্বল্যটা ঠিকমতো আসেনি।'

রাজগুরু বললেন, 'নাকটা আরো চমৎকার করে আঁকা যেত।'

প্রত্যেকেই সমালোচনা করতে শুরু করলেন। চুল, ঠোঁট, পোশাকের রং, সব কিছুরই কোনো না কোনো খুঁত বের হচ্ছে। বেচারা চিত্রকর মর্মাহত। এত যত্ন, এত পরিশ্রমের কোনো মূল্যই এরা দিল না! পুরোটাই মাঠে মারা গেল!

এতক্ষণ দরবারের এক কোণে বসে চুপচাপ সব দেখছিলেন তেনালি রাম। চিত্রকরের মনটা ভেঙে পড়েছে দেখে বেশ কিছুক্ষণ চিত্রকর্মটির প্রশংসা করলেন তেনালি। তারপর রাজার দিকে ঘুরে বললেন, 'মহারাজ, আমার একটা পরামর্শ আছে।'

রাজা তেনালির দিকে ফিরে বললেন, 'বল, শুনি কী পরামর্শ?'

তেনালি: আমরা বরং ছবিটাকে শহরের মূল রাস্তার মোড়ে টানিয়ে দিই। নগরবাসী এটা দেখুক। তারাই প্রয়োজনীয় অদল-বদলের পরামর্শ দিক। তাহলে চিত্রকর ছবিটি আরো ভালো করে আঁকতে পারবেন।'

যে কথা সেই কাজ। শহরের প্রধান রাস্তায় ছবিটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। ঢাকঢোল পিটিয়ে শহরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হলো, ছবিতে কোথায় কোন ত্রুটি আছে, খুঁজে বের করতে হবে।

রাজার হুকুম বলে কথা! ছবিটার সমালোচনা করতে শহরের কেউ আর বাদ গেল না। কেউ কেউ তো দায়িত্ব পালন করতে দুই-তিনবার করেও গেল। লোকজন ওই মোড়ে যায় আর তুলি দিয়ে ছবিটার সারা গায়ে আঁচড় দিয়ে ভুল চিহ্নিত করতে থাকে। এক সপ্তাহ পর চিত্রকর্ম নিয়ে আসা হলো রাজদরবারে। চিত্রকর তাকিয়ে দেখেন তাঁর সাধের ছবিটি আর চেনাই যায় না, পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।

এরপর চিত্রকর আবার শুরু করলেন কাজ। কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে রানির আরেকটি ছবি আঁকলেন তিনি। আগেরবারের চেয়ে এটি আরো ভালো হলো। সেই ছবি দেখে তিনি নিজেই মুগ্ধ। ছুটে চললেন রাজদরবারে। রাজাসহ সভাসদ সেই ছবি দেখলেন। অন্য কেউ মুখ খোলার আগেই তেনালি রাম বললেন, 'মহারাজ, এ ছবিটাও আমরা আগের জায়গায় টাঙিয়ে দেব। এবার আমরা জনগণকে বলব তারা যেন এর সুন্দর জায়গাগুলো চিহ্নিত করে।'

রাজা বললেন, 'তবে তাই হোক।'

ছবিটাকে শহরের প্রধান মোড়ে টাঙিয়ে দেওয়া হলো। শহরবাসীকে চিত্রকর্মটির সৌন্দর্য চিহ্নিত করতে বলা হলো। সময় এক সপ্তাহ।

এক সপ্তাহ পর দরবারে ফেরত আনা হলো ছবি। রাজা কৃষ্ণদেব রায় বিস্মিত! পুরো ছবির গায়ে একটা আঁচড়ও পড়েনি। শহরবাসী ছবি দেখতে গেছে ঠিকই, কিন্তু কোনো ভালোই খুঁজে পায়নি তারা। রাজা বললেন, 'তাহলে কি আঁকা ভালো হয়নি?'

তেনালি জবাব দিলেন, 'মহারাজ, চিত্রকর্মে কোনো সমস্যা নেই। ঝামেলা হলো আমাদের আচরণে। একটা খুঁত বের করতে বলুন, যে কেউ আপনাকে তা দেখাতে পারবে, দোষ থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু একটা ভালো জিনিস চিহ্নিত করতে বলুন, কখনোই পারবে না। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিটাই এ রকম। তারা ভালো কিছু দেখতে পায় না। আমাদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।'

এ বিভাগের আরো খবর