বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাহসী সামদ্রুপ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০৯

এদিকে ভূত তো রেগে অস্থির। কিন্তু বেশিক্ষণ খোঁজাখুঁজির সুযোগ পেল না। কারণ দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আলো এসে ভূতের গাঁয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

অনেক কাল আগের কথা। হিমালয়ের কোলে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত সামদ্রুপ নামের এক অসীম সাহসী তরুণ। সারা দিনমান চমরী গাই চড়াত আর রাতে চুলার পাশে বসে বসে চাদর বুনত। গ্রামে সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করত।

একবার হয়েছি কী, সামদ্রুপের দাদির ভীষণ অসুখ। হেকিম যে ওষুধ আনতে বলল, তা শহর ছাড়া পাওয়া যায় না। ওদিকে শহরে যেতে দুই দিন এক রাত লাগে।

সামদ্রুপের গাঁয়ের সবাই প্রয়োজনে দলবেঁধে শহরে যেত। একা কেউ যেত না, কারণ শহরে যাওয়ার পথে ছিল নানা রকম বিপদ। পাহাড়ি রাস্তা আর গিরি খাদের বাঁকে বাঁকে বন্য পশু আর ইয়েতি ছাড়াও ছিল ভূতের ভয়।

কিন্তু সামদ্রুপ তার দাদিকে ভীষণ ভালোবাসত। তাই সে ঝুঁকি নিয়ে তৈরি হলো শহরে যেতে।

খুব সকালে সূর্য যখন পাহাড়ের বরফ ঢাকা চূড়াগুলোকে সোনালি আভায় আলোকিত করতে শুরু করেছে, তখনই সে রওনা দিল। বাড়ির সবাই তাকে বলে দিল সাবধানে থাকতে।

সারা দিন হাঁটতে হাঁটতে ,ফুল পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আর নিজের মনে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে সে এসে পৌঁছাল পাহাড়ের ঢালে। কিছুক্ষণ পর সূর্য চলে গেল পাহাড়ের আড়ালে।

সাহসী সামদ্রুপ তারপরও হাঁটতে লাগল। মাঝরাতে হঠাৎ তার দেখা হলো এক ভূতের সঙ্গে।

‘কে রে তুই? এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস?’ খ্যানখ্যানে গলায় হেঁকে উঠল ভূত।

সামদ্রুপ বলল, ‘আমি সামদ্রুপ। আমার দাদি অসুস্থ্। তার জন্য ওষুধ আনতে যাচ্ছি।’

‘তাই নাকি? আমিও তো ওষুধ আনতে ওদিকেই যাচ্ছি। চল একসঙ্গে যাই।’ বলল ভূতটা।

ভূতের হাতে ছিল এক বিশাল বস্তা। ভূত সামদ্রুপকে সেই বস্তাটা দিয়ে বলল, ‘আমার বস্তাটা কাঁধে নিয়ে হাঁট।’ আমার ঘাড় ব্যথা করছে।’

মনে মনে রাগ হলেও কিছুই করার ছিল না সামদ্রুপের। সে ভূতের কথা মতোই কাজ করল।

আশ্চর্য ব্যাপার, এত্ত বড় বস্তা অথচ বাতাসের মতো হালকা-আনমনে ভাবল সামদ্রুপ।

এরপর তারা একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর ভূত বেশ খোশ মেজাজে গল্প শুরু করল।

‘ইয়ে, বস্তাটা এত্ত বড় কিন্তু ওজনে হালকা কেন’, মিনমিন করে জিজ্ঞেস করল সামদ্রুপ।

‘আরে বোকা, হালকা তো হবেই। ওর মাঝে আছে শুধু রাজকন্যার আত্মা। আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি।’ খ্যানখ্যানিয়ে বলে উঠল ভূত।

‘বলছ কী? আত্মা ছাড়া রাজকন্যার কী অবস্থা?’ আঁতকে উঠে জিজ্ঞাসা করল সামদ্রুপ।

‘খুব খারাপ। এই জন্যই তো রাজকন্যা ভীষণ অসুস্থ।’ হাসিমুখে উত্তর দিল ভূত।

‘ওমা! তাহলে তো রাজকন্যা বাঁচবে না?’ আবারও বলল সামদ্রুপ।

‘পৃথিবীর কোন হেকিমের সাধ্য নাই এই আত্মা ছাড়া ওকে বাঁচায়!’, সদম্ভে উত্তর দিল ভূত।

‘হুম’ , আস্তে করে বলল সামদ্রুপ। হঠাৎ করেই দয়ালু সামদ্রুপের মনটা ভারী হয়ে উঠল রাজা আর রাজকন্যার জন্য।

সে করল কী, সুযোগ বুঝে বস্তা নিয়ে লুকিয়ে পড়ল গমক্ষেতে।

এদিকে ভূত তো রেগে অস্থির। কিন্তু বেশিক্ষণ খোঁজাখুঁজির সুযোগ পেল না। কারণ দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

আলো এসে ভূতের গাঁয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

দেরি না করে সামদ্রুপ দৌড় দিল রাজার প্রাসাদে।

আত্মা ফিরে পেয়ে মরণাপন্ন রাজকন্যা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল। চারপাশে বয়ে গেল খুশির বন্যা।

রাজা সামদ্রুপের কাছে সব শুনে ওষুধ জোগাড় করে পাইক-পেয়াদা দিয়ে পাঠিয়ে দিল সামদ্রুপের গাঁয়ে।

আর রাজকন্যার বিয়ে দিল সাহসী, দয়ালু আর বুদ্ধিমান সামদ্রুপের সঙ্গে।

সামদ্রুপ পরবর্তী সময়ে সে রাজ্যের রাজা হয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগল।

ধীরে ধীরে সেই রাজ্যের নাম হয়ে গেল সামদ্রুপ ঝংখা, যা আজও ভুটানের এক শহর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

এ বিভাগের আরো খবর