হাজার হাজার বছর আগে কোনো আকাশ ও পৃথিবী ছিল না। গোটা মহাকাশ একটি বড় ডিমের মতো ছিল। ডিমের ভেতরে গাঢ় অন্ধকার। সেখানে কোনো উপর-নিচ, বাম-ডান, পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ-উত্তর ছিল না।
এই ডিম এক মহান বীর তৈরি করেছিলেন। তিনি ফানকু। ফানকু বড় ডিমে ১৮ হাজার বছর ছিলেন। একদিন ফানকু ঘুম থেকে জেগে চোখ খুলে দেখলেন, চার পাশে অন্ধকার। প্রচণ্ড গরমে শ্বাস নিতে পারছেন না। তিনি দাঁড়াতে চান কিন্তু ডিমের খোসায় তিনি হাত-পা নাড়তে পারেন না।
ফানকু রাগ করে ডিমের মধ্যে রাখা একটি কুঠার তুলে ডিমের খোসা ভেঙে দিলেন। প্রচণ্ড শব্দে সেই ডিমের তরল পদার্থ ওপরে উঠে আকাশে পরিণত হলো। বাকি ভারী জিনিস নিচে পড়ে পরিণত হলো পৃথিবীতে।
ফানকু কুঠার দিয়ে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করে দারুণ মজা পেলেন। তবে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, আকাশ ও পৃথিবী হয়তো আবার এক হয়ে যাবে। তাই তিনি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পড়ে নিজের শরীর আরও লম্বা করতে চাইলেন।
প্রতিদিন তার শরীরের উচ্চতা তিন মিটারের বেশি বাড়তে থাকল। সঙ্গে আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বও তিন মিটার করে বাড়তে শুরু করল। এইভাবে ১৮ হাজার বছর বাড়ার পর ফানকুয়ের শরীরের উচ্চতা আর আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব হাজার হাজার কিলোমিটার হয়ে গেল।
একসময় ফানকু নিশ্চিন্ত হলেন যে, আকাশ ও পৃথিবী আর এক হতে পারবে না। তিনি মনে মনে অনেক শান্তি পেলেন। ওদিকে এসব করতে গিয়ে ফানকুর গায়ের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে গেল। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। শেষে মৃতু্বরণ করলেন।
মৃত্যুর পর ফানকুর বাঁ চোখ লাল সূর্যে পরিণত হলো। ডান চোখ পরিণত হলো রুপালি চাঁদে। তার শেষ নিঃশ্বাস বাতাস ও মেঘে পরিণত হলো। শেষ ডাক পরিণত হলো বজ্রপাতে। চুল ও দাড়ি তারায় এবং মাথা ও হাত-পা পাহাড়ে পরিণত হলো।
রক্ত পরিণত হলো পৃথিবীর নদী ও হ্রদে। এভাবে শিরাগুলো রাস্তায়, মাংসপেশি উর্বর চাষের জমিতে, চামড়া ফুল, ঘাস, গাছে; দাঁত ও হাড় সোনা, রুপা, তামা, লোহা ও দামি পাথরে পরিণত হলো। তার ঘাম বৃষ্টি হয়ে নেমে এলো পৃথিবীতে।
সেই থেকে পৃথিবী সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল হতে শুরু করে।