ভাঁড় অর্থ হলো যারা মজার মজার কথা বলে বা মজার ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়।
গোপাল ভাঁড় ছিলেন তেমনই একজন মানুষ।
১৭১০ সালের দিকে নদীয়া জেলার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ ছিলেন গোপাল ভাঁড়।
রসবোধের জন্যে তার খ্যাতি ছিল।
তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রসিকতাগুলো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে।
আজ থাকছে তেমনই কিছু রসিকতা।
গোপালের খিচুড়ি রান্না
একবার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মাঘ মাসের কনকনে শীতে ঘোষণা করলেন, যে এই শীতের রাতে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে সারা রাত ডুবে থাকতে পারবে, তাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
এক গরিব ব্রাহ্মণ টাকার আশায় রাজি হলেন।
সারা রাত পুকুরের পানিতে গলা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার পর সকালে ব্রাহ্মণ মহারাজের কাছে পুরস্কারের টাকা দাবি করলেন।
মহারাজ ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কীভাবে এই কনকনে শীতের রাতে পুকুরের পানিতে ডুবেছিলেন?
ব্রাহ্মণ বললেন, ‘মহারাজ, সারা রাত চাঁদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।’
ব্রাহ্মণের কথা শুনে মহারাজ বললেন, ‘তা হলে তুমি পুরস্কার পাবে না। কারণ রাতে চাঁদের আলোতে পুকুরের পানি গরম হয়েছিল। আর সে জন্যই তুমি সারা রাত পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছো।
‘যেহেতু নিয়মানুসারে ঠান্ডা পানিতে দাঁড়ানোর কথা, তুমি দাঁড়িয়েছিলে চাঁদের আলোয় গরম হওয়া পানিতে, সেহেতু তুমি পুরস্কার পাবে না।’
বেচারা গরিব ব্রাহ্মণ, মহারাজের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে খুব কাঁদল। তারপর বুদ্ধির জন্য গেল গোপাল ভাঁড়ের কাছে।
গোপাল ঘটনা শুনে ব্রাহ্মণকে বললেন, ‘আপনি বাড়ি ফিরে যান। আমি আপনার পুরস্কার যথাসময়ে পাঠিয়ে দেব।’
কিছুদিন পর গোপাল একটা বড় বাঁশের আগায় মাটির পাতিল বাঁধলেন। সেই পাতিলে চাল, ডাল আর পানি দিয়ে বাঁশের গোড়াটা মাটিতে পুঁতে দিলেন। পাতিলটা ঝুলতে থাকল সেই বাঁশের আগায়। এবার পাতিল বরাবর নিচে মাটিতে আগুন জ্বালিয়ে রান্না শুরু করলেন।
যথাসময়ে রাজসভায় গোপালকে না দেখে মহারাজ লোক পাঠালেন ডেকে আনতে।
গোপালের বাসায় গিয়ে এই কাণ্ড দেখে সেই লোক বলল, ‘এসব কী করছেন? এখনই সভায় চলুন, মহারাজ আপনাকে ডাকছে।’
গোপাল বলল, ‘তুমি মহারাজকে গিয়ে বলবে আমি খিচুড়ি রান্না করছি। রান্না শেষ হলেই রাজসভায় যাব।’
মহারাজার পাঠানো লোকটা গোপালের খিচুড়ি রান্নার পদ্ধতি দেখে অবাক হলো। রাজপ্রাসাদে ফিরে মহারাজের কাছে সব খুলে বলল।
মহারাজ প্রথমে হাসলেন। তারপর কাণ্ড দেখতে সবাইকে নিয়ে গোপালের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। বললেন, ‘এসব কী করছো গোপাল?’
গোপাল বলল, ‘খিচুড়ি তৈরি করছি হুজুর।’
মহারাজ বললেন, ‘তোমাকে তো বুদ্ধিমান বলেই জানতাম। অত উঁচুতে হাঁড়ি বাঁধা আর তুমি নিচে জ্বাল দিচ্ছো !
‘এই সামান্য আগুনের আঁচ তো কোনো দিনও ওখানে পৌঁছাবে না। তাই সারা জীবন আগুন জ্বালিয়ে গেলেও রান্না হবে না।’
গোপাল বলল, ‘ইয়ে...মহারাজ, যদি আকাশের চাঁদের আলোর তাপে এত দূরের পুকুরের পানি গরম হতে পারে, তবে আমার এই আগুনও ওই সামান্য দূরে থাকা হাঁড়ির খিচুড়ি রান্না করতে পারবে।’
মহারাজ বুঝতে পারলেন গোপাল কী বলছে। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং ঘোষণামতো পুরস্কারের টাকা ব্রাহ্মণের হাতে দিয়ে দিলেন।