তেনালি রামকৃষ্ণ ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারের একজন কবি এবং পরামর্শদাতা। তাকে আমরা চিনি তার অসাধারণ রসিকতা, কৌতুক-রসবোধ এবং অসামান্য বুদ্ধিমত্তার জন্য। আজ শুনব তার একটি মজার ঘটনা।
রাজা মশাই এবং রাময়া
বিজয়নগর রাজ্যে রাময়া নামের এক লোক বাস করতেন। সবাই তাকে অশুভ বা অপয়া বলে মনে করত।
তারা মনে করত, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই যদি কেউ রাময়ার মুখ দেখে তবে তার সারাটা দিন খারাপ যাবে।
কথাটা রাজা মশাইয়ের কানেও পৌঁছাল।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রাজা মশাই রাময়াকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন।
রাময়া এলে রাজা বললেন, ‘তুমি আজ আমার প্রাসাদে থাকবে। সকালে উঠে সবার আগে আমি তোমার মুখ দেখব। তুমি শুভ না অশুভ সেটা আগামীকালই বোঝা যাবে।‘
রাতে রাময়া রাজার পাশের ঘরেই ঘুমালেন।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজা অন্য কারও মুখ দর্শন না করে প্রথমেই রাময়ার ঘরে ঢুকলেন। রাময়ার মুখ দেখলেন।
সেদিন দুপুরে খেতে বসে রাজা কিছুই খেতে পারলেন না।
তিনি রাঁধুনিকে ডেকে আবার তার জন্য রান্না করতে বললেন। এবারও তার খেতে ইচ্ছে করল না।
অভুক্ত থাকার কারণে সেদিন তিনি মন দিয়ে কোনো কাজ করতে পারলেন না।
তখনই তিনি বুঝতে পারলেন, সাধারণ মানুষ রাময়ার নামে যা বলে তা সঠিক।
রাজা মশাই ঠিক করলেন, এমন অশুভ এবং অপদার্থ লোক তার রাজ্যে বাস করতে পারবে না। তাকে ফাঁসি দিতে হবে।
রাময়ার স্ত্রী স্বামীর শাস্তির কথা শুনে তেনালি রামনের কাছে ছুটে গেলেন। খুলে বললেন সব কথা।
তেনালি রামন সাহায্য করবেন বলে কথা দিলেন।
পরের দিন সকালে যখন সৈন্যরা রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তেনালি রামন কানে কানে রাময়াকে কিছু বুদ্ধি দিয়ে চলে গেলেন।
ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে সৈন্যরা শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলে রাময়া বলল, সে রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চায়।
রাময়া চিঠি লিখলেন। সেটা রাজা মশাইকে দেয়া হলো।
সেখানে লেখা ছিল, আমার মুখ দেখে আপনার মুখের রুচি চলে গেছে। আর আপনার মুখ দেখে আমার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। তাহলে কে সবচেয়ে অশুভ? আমি নাকি আপনি?’
রাজা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং রামায়াকে তখনই মুক্তি দিলেন।