বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈশপের পশুপাখির গল্প

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৫ জুন, ২০২১ ১১:৩৮

সিংহের প্রস্তাব শুনে বিড়াল খুব খুশি হলো। মনে মনে ভাবল, শিকার ভাগ করার দায়িত্ব দিয়ে সিংহ তাকে বিরাট সম্মান দেখিয়েছে।

ঈশপের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছো। খ্রিস্টপূর্ব ৬২০ সালে প্রাচীন গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মজার মজার শিক্ষামূলক গল্প বলাতে তার জুড়ি নেই। পশুপাখি নিয়ে তিনি অনেক গল্প লিখেছেন। আজ তোমাদের সে রকম তিনটি গল্প বলব।

১. একদিন বিড়াল ও শিয়াল বনের রাজা সিংহের সঙ্গে চুক্তি করল। চুক্তিতে বলা হলো এখন থেকে তারা তিনজন একসঙ্গে শিকার করবে। শিকার যা পাওয়া যাবে, তা সমানভাবে ভাগ করে নেবে।

তিনজন একসঙ্গে শিকার করলে কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না বলেই এই চুক্তি।

সিদ্ধান্ত হলো বিড়াল বনের দিকে নজর রাখবে। শিকার দেখতে পেলে সেটার দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিজের পরিচয় দেবে।

অন্য দুজন আড়াল থেকে বিড়ালের দিকে নজর রাখবে। বিড়াল পরিচয়পর্ব শেষ করার পর শিয়াল আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে উঠবে। প্রাণীটি তখন ভয় পেয়ে যাবে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করবে। তখন শিয়াল তাকে ধাওয়া করবে।

প্রাণীটি তখন শিয়ালকে এড়াতে সোজা দৌড় দেবে আর গিয়ে পড়বে সিংহের কবলে। সিংহ তখন এক আঘাতে তার দফারফা করবে।

পরিকল্পনা অনুসারে তারা একটা হরিণ শিকার করল। তারপর বিড়াল, শিয়াল, সিংহ বসল ভাগ-বাটোয়ারা করতে বসল।

সিংহ তিন ভাগ করতে বলল বিড়ালকে।

সিংহের প্রস্তাব শুনে বিড়াল খুব খুশি হলো। মনে মনে ভাবল, শিকার ভাগ করার দায়িত্ব দিয়ে সিংহ তাকে বিরাট সম্মান দেখিয়েছে।

যাই হোক বিড়াল খুব সাবধানতার সঙ্গে হরিণটাকে সমান তিন ভাগে ভাগ করল। তারপর শিয়াল ও সিংহের উদ্দেশে বলল, ‘ভাগের কাজ শেষ। এখন আপনারা দুজন দয়া করে নিজেদের ভাগ গ্রহণ করুন।’

বিড়ালের কথা শুনে সিংহ ভাগগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর বলল, ‘তাহলে তোর মতে আমাদের তিনজনের ভাগ সমান হওয়া উচিত। তাই না? তুই কি মনে করেছিস, হরিণের সঙ্গে তোর ইনিয়ে-বিনিয়ে গল্প করা আর আমার শিকার করার কাজটা একই সমান?’

এ কথা বলেই বিড়ালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে খেয়ে ফেলল সিংহ। তারপর শিয়ালকে বলল হরিণটাকে সঠিকভাবে দুই ভাগ করতে।

বিড়ালের পরিণতি দেখে শিয়াল ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাগ করতে বসল।

বলতে গেলে হরিণের পুরোটাই সিংহের ভাগে রেখে নিজের জন্য সামান্য কিছু রাখল। বড় ভাগটা নেয়ার জন্য সিংহকে অনুরোধ করল।

শিয়ালের ভাগ করা দেখে সিংহ বেজায় খুশি হলো। বলল, ‘এত চমৎকার আর ন্যায্য ভাগের কৌশল তোকে কে শিখিয়েছে?’

শিয়াল বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘একটু আগে বিড়ালের পরিণতি দেখে নিজে নিজেই ভাগ করা শিখেছি, জনাব।’

এ কথা বলে শিয়াল সিংহের সামনে থেকে চলে গেল। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজে সিংহকে সঙ্গে নেবে না।

২. একদিন নেকড়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে গেল। কিছুতেই নড়তে পারছিল না। চলাফেরা করতে না পারার কারণে শিকারও সংগ্রহ করতে পারছিল না। তাই পশু শিকারের জন্য একটি ফন্দি আঁটল।

নেকড়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল একটি ভেড়া। নেকড়ে তাকে ডেকে কাছের ঝরনা থেকে পানি এনে দেয়ার অনুরোধ জানাল। কাকুতি-মিনতি করে নেকড়ে বলল, ‘শরীরটা ভীষণ খারাপ। এক আঁজলা পানি এনে দিলেই চলবে। গোশতের ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নিতে পারব।’

নেকড়ের কখা শুনে ভেড়া বলল, ‘ভালোই ফন্দি এঁটেছো। আমি পানি এনে দিই আর তুমি আমাকে দিয়েই গোশত জোগাড় করার কাজটাও সেরে ফেলো।’

৩. বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, পশুদের মধ্যে শিয়ালকে সবচেয়ে চালাক মনে করা হয়। আর ছাগলকে বলা হয় সবচেয়ে বোকা। একদিন এক শিয়াল একটা কুয়োর মধ্যে পড়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও সে সেই কুয়ো থেকে উঠতে পারল না। এদিকে একটা ছাগলের ওই সময় খুব পিপাসা পেল। ছাগলটি ঘুরতে ঘুরতে কুয়োর পাশে এসে হাজির হল।

কুয়োর মধ্যে শিয়ালকে দেখে সে জানতে চাইল, কুয়োর খাওয়ার মতো পানি আছে কি না। শিয়াল তখন নিজের দুরাবস্থা চেপে গিয়ে এক গাল হাসিতে মুখ ভরিয়ে নানাভাবে সেই কূপের পানির প্রচুর প্রশংসা করল। বলল, ‘এই কুয়োর পানি এত সুমিষ্ট যে আশপাশের কোথাও এমন পানি পাবে না। তুমি নিচে নেমে এসে প্রাণভরে পানি খাও; কেউ তোমাকে কিছু বলবে না।’

শিয়ালের মিষ্টি কথায় পটে গিয়ে ছাগল কুয়োর ভিতর লাফিয়ে পড়ল। পেট ভরে পানি পান করার পর শিয়ালকে ধন্যবাদ দিল।

এ সময় শিয়াল তাকে জানাল, তারা আটকা পড়েছে। এই বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ছাগলের কাছে সে একটা প্রস্তাব রাখল। বলল, ‘তুমি যদি তোমার সামনের পা দুটো তুলে কুয়োর দেয়ালে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াও আর তোমার মাথাটা নিচু করে রাখো, আমি তাহলে তোমার পিঠের উপর দিয়ে দৌড়ে কুয়োর বাইরে চলে যাব। আমি একবার বের হতে পারলে তোমাকেও তখন উদ্ধার পেতে সাহায্য করতে পারব।’

ছাগল কোনো ভাবনা-চিন্তা না করে সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালের প্রস্তাব অনুযায়ী দাঁড়িয়ে গেল। শিয়াল লাফ দিয়ে ছাগলের পিঠে চড়ল। তার শিং ধরে নিজেকে সোজা করল। তারপর নিরাপদে কুয়োর বাইরে এসেই একটুও দেরি না করে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দিল।

এটা দেখে ছাগল গেল রেগে।

ছাগলকে রাগতে দেখে শিয়াল চিৎকার করে বলল, ‘ওরে বোকা, তোর শরীরে যত চুল, তোর মাথায় যদি সেই পরিমাণ বুদ্ধি থাকত তা হলে উপরে ওঠার পথ ঠিক না করে তুই নিচে ঝাঁপিয়ে পড়তি না। যেই বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় তোর জানা নেই, সেই বিপদের দিকে নিজেই নিজেকে এইভাবে ঠেলে দিতিস না।’

এ বিভাগের আরো খবর