তেনালি রামকৃষ্ণ ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারের একজন কবি এবং পরামর্শদাতা। তাকে আমরা চিনি তার অসাধারণ রসিকতা, কৌতুক-রসবোধ এবং অসামাণ্য বুদ্ধিমত্তার জন্য। আজ শুনব তার একটি মজার ঘটনা।
চোর এবং কুয়ো
একদিন মহারাজ কৃষ্ণদেব রায় জেলখানা পরিদর্শনে গেলেন। তখন দুজন সিঁধেল চোর তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করল। জানাল তারা দুজনেই সিঁধ কাটায় পারদর্শী এবং বিশেষজ্ঞ। অভিজ্ঞতা দিয়ে তারা রাজ্যের অন্য চোরদের ধরে দিতে মহারাজকে সাহায্য করবে।
মহারাজ দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন। তখনই ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে এক শর্তে। বললেন, ‘আমি পরীক্ষা করে দেখব তোমরা কত বড় চোর। আমার পরামর্শদাতা তেনালি রামনের বাড়িতে চুরি করে দেখাতে হবে। যদি পারো, তবেই মুক্তি মিলবে, মিলবে চাকরি।’
চোররা রাজি হয়ে গেল।
সেই রাত্রিতেই চোর দুজন তেনালি রামনের বাড়ির কাছে গেল এবং ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
রাতে আহারের পর তেনালি পায়চারি করার জন্য বাগানের কাছে গেলেন। ঝোপের পেছনে খচমচ আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলেন বাগানে চোর ঢুকেছে।
কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে চেঁচিয়ে বললেন, ‘আমাদের উচিত ধনসম্পদ আগলে রাখা। কারণ চারদিকে চুরি বেড়েছে। এখনই সাবধান না হলে পরে পস্তাতে হবে।’
আরও বললেন, ‘বাসার সব সোনাদানা ট্রাঙ্কের মধ্যে ভরে ফেলো।’
চোররা তেনালির সব কথাই শুনল। আর শুনবেই না বা কেন? তেনালি তো ওদের শোনানোর জন্য জোরে জোরে কথা বলেছেন।
কিছুক্ষণ পর তেনালি ট্রাঙ্কটিকে বাড়ির পেছনের কুয়োর কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর সেটাকে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিলেন।
চোররা সবই দেখল।
কাজ শেষে তেনালি আর তার স্ত্রী যখন ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন, তখনই চোর দুজন বেরিয়ে কুয়োর পানি তুলতে শুরু করল।
সারা রাত পানি তুলল তারা।
ভোরের দিকে অনেক কষ্টে তারা বাক্সটি তুলতে পারল। কিন্তু খুলে যা দেখল তাতে মাথা ঘুরে গেল। ট্রাঙ্কে সোনাদানা নেই, শুধু পাথর।
সেই সময় তেনালি তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চোরদের ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘গাছগুলোকে সারা রাত পানি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
চোররা বুঝতে পারল, তেনালি তাদের বোকা বানিয়েছে।