ভাঁড় অর্থ যারা মজার কথা বলে বা মজার ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়।
গোপাল ভাঁড় ছিলেন তেমনই একজন মানুষ।
১৭১০ সালের দিক থেকে নদীয়া জেলার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ ছিলেন গোপাল ভাঁড়।
রসবোধের জন্য তার খ্যাতি ছিল।
তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রসিকতা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে।
১. একদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোপাল ভাঁড়ের রাজদরবারে যাবার কথা। সে তার স্ত্রীকে বলে রাখল যেন ভোরবেলা তাকে জাগিয়ে দেয়।
এদিকে মাঝরাতেই গোপাল ভাঁড়ের ঘুম ভেঙে গেল।
সে বলল, ‘দেখ তো, বাইরে সূর্য উঠল কি না। আমাকে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।’
গোপাল ভাঁড়ের স্ত্রী বাইরে থেকে ঘুরে এসে বলল, ‘বাইরে অনেক অন্ধকার। কীভাবে দেখব?’
গোপাল ভাঁড় রেগে বলল, ‘হারিকেনটা নিয়ে গেলেই তো পার। তাহলে সব দেখতে পাবে।’
২. গোপাল ভাঁড় একদিন বাজারে যাচ্ছিল। পথে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো । সে গোপালকে রসিকতা করে বলল, ‘তুমি যদি বিনে পয়সায় আলু কিনতে পারো, তাহলে আমি তোমাকে ১০ টাকা দেব।’
গোপাল বলল, ‘এই কথা! হাটে চলো, তোমার সামনেই বিনা পয়সায় আলু কিনে বাড়ি ফিরব। কাউকে এক পয়সা দেব না। তোমাকে কিন্তু ১০ টাকা দিতে হবে।’
বন্ধু রাজি হলো । গোপাল হাটে গিয়ে যত আলুর দোকানদার ছিল তাদের কাছে গিয়ে বলল, ‘ভাই, আমি যদি তোমার কাছ থেকে পাঁচ সের আলু কিনি, কয়টা আলু ফাও দেবে?’
তখনকার দিনে আলু খুবই সস্তা ছিল। একসঙ্গে পাঁচ সের আলু নেবে শুনে আলুওয়ালা বলল, ‘তুমি এর জন্য পাঁচটা করে আলু ফাও পাবে।’
গোপাল ভাঁড় আর কোনো কথা না বলে প্রত্যেক আলু দোকানদারের কাছ থেকে পাঁচটা করে আলু তুলে নিয়ে বলল, ‘আজ ফাও আলু নিয়ে গেলাম, সামনের হাটে তোমাদের সকলের কাছ থেকে পাঁচ সের করে আলু কিনব।’
আলুর দোকানদাররা সবাই গোপালের দিকে চেয়ে রইল।
গোপাল মনের আনন্দে বিনে পয়সায় থলেভর্তি আলু নিয়ে বাড়ি ফিরল।
বন্ধুটি তখন বাধ্য হয়ে কথামতো ১০ টাকা গোপালকে দিয়ে দিল।