ভাঁড় অর্থ হলো যারা মজার মজার কথা বলে বা মজার ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়।
গোপাল ভাঁড় ছিলেন তেমনই একজন মানুষ।
১৭১০ সালের দিকে নদীয়া জেলার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ ছিলেন গোপাল ভাঁড়।
রসবোধের জন্যে তার খ্যাতি ছিল।
তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রসিকতাগুলো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে।
আজ শুনব তেমনই কিছু রসিকতা।
১. রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশ-দেশান্তর থেকে চিকিৎসকরা এলেন যোগ দিতে। গোপালকে রাজা দায়িত্ব দিলেন চিকিৎসক নির্বাচনের। গোপাল খুশি মনে বসলেন তাদের মেধা পরীক্ষায়।
গোপাল: আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব আছে?
প্রথম চিকিৎসক: জি আছে। প্রচুর ভূত। ওদের অত্যাচারে ঠিকমতো রোগীর সেবা করতে পারি না। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই।
এবার দ্বিতীয় চিকিৎসকের পালা।
গোপাল: আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে নিশ্চয়ই ভূতের উপদ্রব আছে?
দ্বিতীয় চিকিৎসক: আশ্চর্য, আপনি জানলেন কীভাবে! ওদের জ্বালায় আমি অস্থির।
এভাবে দেখা গেল সবার চিকিৎসালয়ের আশপাশেই ভূতের উপদ্রব আছে।
একজনকে শুধু পাওয়া গেল, যার কোনো ভূতসংক্রান্ত ঝামেলা নেই।
গোপাল তাকে রাজবৈদ্য নিয়োগ দিলেন।
পরে দেখা গেল এই চিকিৎসকই সেরা।
রাজাও খুশি।
একদিন রাজা ধরলেন গোপালকে।
গোপাল বললেন, ‘আজ্ঞে মহারাজ, দেখুন, সবার চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশে ভূতের উপদ্রব শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এর অর্থ হলো, তাদের রোগী মরে আর ভূতের সংখ্যা বাড়ে। আর যাকে নিলাম, তার ওখানে কোনো ভূতের উপদ্রব নেই। অর্থাৎ তার রোগী একজনও মরে না।
২. গোপাল ভাঁড়ের তখন বয়স হয়েছে।
চোখে ভালো দেখতে পারে না।
একদিন তিনি রাজদরবারে যাননি।
পরের দিন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, ‘কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন?’
গোপাল: আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই…।
রাজা: তাহলে তো ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ।
গোপাল: ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা...ঠিক আমার বলদের মতোই!
৩. গোপালের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হচ্ছে দেখে গোপাল থামাতে গেল।
গোপালকে দেখে তার ভাইপো বললো, ‘দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব আর তাই শুনে আমার বউ বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস বানিয়ে তার বাপের বাড়ির সবাইকে খাওয়াবে।’
গোপাল হাত তুলে তাদের থামাল, ‘আস্তে!’
ভাইপো থামল।
এবার গোপাল ভাঁড় খেঁকিয়ে উঠল, ‘বদমাশ, তোর বউয়ের পায়েস তো পরে, বাড়ির পিছে আমি যে শাকসবজির বাগান করেছি, সেগুলো যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?’