তুলতুলের আব্বু গম্ভীর হয়ে পত্রিকা পড়ছেন।
এমন সময় তুলতুল বলল, ‘আব্বু আমাকে একুশে বইমেলায় নিয়ে যাবে?’
আব্বু অবাক চোখে তুলতুলের দিকে তাকালেন! পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু তুলতুল অথচ বই পড়ার প্রতি কত আগ্রহ!
তুলতুল বলল, ‘কী দেখছ আব্বু? বল না? বইমেলায় নিয়ে যাবে কি না?’
অবশ্যই নিয়ে যাব।
আম্মু হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমাকে কিন্তু রান্নার বই কিনে দিতে হবে। আমি ভালো রান্না পারি না।’
তুলতুল ভেংচি কাটল, ‘সকালে, দুপুরে, রাতে সব সময় তুমিই তো রান্না করো আম্মু।’
‘তাই নাকি?’
আব্বু-আম্মু হাসলেন।
আজ ছুটির দিন।
তুলতুল আব্বু-আম্মুর সঙ্গে বইমেলায় এসেছে।
বইমেলায় শিশুচত্বর নামে একটি জায়গা আছে।
এখানে অনেকগুলো বইয়ের দোকান।
রং-বেরঙের বই, রং-বেরঙের ছবি।
তুলতুল দেখল ওর মতো আরও অনেকেই এসেছে।
তাই মনে একটা প্রশ্ন জাগল, ‘আব্বু শিশুচত্বর মানে কী?’
আব্বু বললেন, ‘শিশুচত্বর মানে হলো শিশুদের জায়গা। এখানে শিশুদের বই পাওয়া যায়। ঐ যে দেখো তোমার মতোই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বই কিনছে।’
তুলতুল গাল ফোলালো, ‘আমার বয়স পাঁচ বছর। আমি মোটেও শিশু না।’
আব্বু-আম্মু হাসতে হাসতে বললেন, ‘ঠিক আছে। এখন বই পছন্দ করো।’
তুলতুল সুন্দর সুন্দর নামের দশটি বই পছন্দ করল।
আরেকটি বই খুব পছন্দ হলো তুলতুলের।
ভয়ে ভয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আম্মু এই বইটার দাম কত?’
দোকানদার বলল, ‘দাম জেনে তুমি কী করবে বাবু?’
তুলতুল চোখ রাঙাল, ‘আমি মোটেও বাবু না। অনেকগুলো বই কিনেছি। সে জন্য জানতে চেয়েছি।’
আব্বু বললেন, ‘এই বইটাও তোমার। সব বই তোমার।’
তুলতুল মহানন্দে বইমেলায় ঘুরতে লাগল।
হঠাৎ দেখতে পেল ওরই মতো একজন।
ওর হাতে একটাও বই নেই।
তুলতুল এগিয়ে গেল, ‘এই তুমি বই কেনোনি?’
বাচ্চা ছেলেটি মন খারাপ করে বলল, ‘আম্মু আমার পছন্দমতো বই কিনে দেননি।’
ওর আম্মু রেগে গিয়ে বললেন, ‘আমি যেগুলো পছন্দ করি সেগুলো তোমার ভালো লাগে না?’
তুলতুল ব্যাগ থেকে দশটি বই বের করল, ‘দেখো তো এগুলো পছন্দ হয় কি না?’
ছেলেটি উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল, ‘বাহ! বইগুলো তো খুব সুন্দর।’
তুলতুল বলল, ‘পাঁচটি তোমার, পাঁচটি আমার।’
তুলতুলের আম্মু হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমরা বই কিনব। একে-অপরকে বই কিনে দেব। বই উপহার দেব। কারণ, বই মানে জ্ঞানের পৃথিবী।’