বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বর্ণকারের প্রার্থনা ও রাজার আংটি

  • সংগৃহীত   
  • ৩০ মার্চ, ২০২১ ১৭:৩১

রাজা স্বর্ণকারকে বললেন, ‘তিন দিন সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে কাজ শেষ করবে। চতুর্থ দিন সকালে আসল-নকল আংটি দুটো একসাথে তোমার কাছ থেকে বুঝে নেব। তবে সাবধান। আংটি হারালে কিন্তু তোমার গর্দান যাবে।’

অনেক অনেক আগের কথা। এক দেশে বাস করত এক স্বর্ণকার। লোকটা ছিল বেশ ধার্মিক ও সৎ।

প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে সে তার দোকানে চলে যেত। তার দোকানটা ছিল রাজপ্রাসাদের সামনে। দোকান খোলার আগে স্বর্ণকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলত, ‘হে মহাজ্ঞানী, রিজিকদাতা! হে ক্ষমাকারী! তুমি তো অসীম ক্ষমতার অধিকারী! সমুদ্রের তলায়ও যদি কিছু পড়ে তুমি তাকে ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি রাখো!’

রাজপ্রাসাদ যেহেতু কাছেই ছিল, সেহেতু স্বর্ণকারের কথায় প্রতিদিন রাজার ঘুম ভেঙে যেত। তাতে সে বেশ বিরক্ত হতো।

একদিন ঘুম ভাঙতেই রাজা রেগেমেগে চিৎকার করে বলল, ‘কে প্রতিদিন ভোরে আমার আরামের ঘুম নষ্ট করে দেয়?’

পাশে দাঁড়ানো চাকর বলল, ‘হুজুর এটা স্বর্ণকারের কাজ। সে প্রতিদিন এসব বলে দোকান খোলে।’

রাজার মেজাজ গেল বিগড়ে। সে স্বর্ণকারকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু বিনা কারণে তো কাউকে সাজা দেয়া যায় না। তাই সে এক ফন্দি বের করল।

সেদিন বিকেলে রাজা গেল স্বর্ণকারের দোকানে। একটা মূল্যবান হীরার আংটি দিয়ে বলল, ‘এটার দাম কয়েক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। তুমি রঙিন কাচ দিয়ে হুবহু এটার মতো আরেকটি আংটি বানাবে। আমি সব সময় নকল আংটিটা পরব। তবে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে আসল হীরার আংটিটা পরব। তাতে আসল আংটিটা হারানোর চান্স কমে যাবে।’

স্বর্ণকার আংটিটা নিল এবং ছোট্ট একটা বাক্সে ঢুকিয়ে তাকের ওপর রেখে দিল।

এ সময় রাজা বলল, ‘এক গ্লাস পানি দাও তো!’

স্বর্ণকার পানি আনতে যেতেই রাজা তাকের ওপর থেকে আংটিটা নিয়ে লুকিয়ে ফেলল।

কিছুক্ষণ পর স্বর্ণকার পানি নিয়ে ফিরে এলো। রাজা স্বর্ণকারকে বলল, ‘তিন দিন সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে কাজ শেষ করবে। চতুর্থ দিন সকালে আসল-নকল আংটি দুটো একসাথে তোমার কাছ থেকে বুঝে নেব। তবে সাবধান। আংটি হারালে কিন্তু তোমার গর্দান যাবে।’

স্বর্ণকারের দোকান থেকে বেরিয়ে রাজা গেল সমুদ্রের দিকে। সেখানে গিয়ে আসল আংটিটা ছুড়ে ফেলে প্রাসাদে ফিরে এলো।

স্বর্ণকার রাতে স্ত্রীকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। স্ত্রী কী যেন চিন্তা করে বলল, ‘এক্ষুনি দোকানে ফিরে যাও! এভাবে রাজার আংটি তাকের ওপরে রেখে আসা ঠিক না। আংটি হারালে তোমার গর্দান যাবে। তাই এক মুহূর্তের জন্যও আংটি থেকে আলাদা হবে না।’

স্বর্ণকার ফিরে গেল দোকানে। তাকের ওপর থেকে ছোট্ট বাক্সটা নামিয়ে আনল। সেটা খুলে তার চোখ ছানাবড়া। খালি, কিছুই নেই ভেতরে।

স্বর্ণকার সারা দিন আংটি খুঁজল কিন্তু পেল না। এভাবে তিন দিন চলে গেল।

ওদিকে দুষ্টু রাজা এই কয় দিন স্বর্ণকারের প্রার্থনা শোনেনি, তাই তার ঘুমেরও ডিস্টার্ব হয়নি। রাজা মনে মনে ভাবল, তার প্ল্যান কাজে লেগেছে। স্বর্ণকার আর সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙায় না।

কিন্তু চতুর্থ দিন ভোরে আগের মতোই রাজার ঘুম ভাঙল স্বর্ণকারের প্রার্থনায়।

রাজা তখনই রেগেমেগে স্বর্ণকারের দোকানে গেল। তার পেছন পেছন তলোয়ার হাতে এক সেপাইও এল। রাজা স্বর্ণকারকে বলল, ‘তিন দিন শেষ হয়ে গেছে। আংটি দুটো দাও। নইলে তোমার গর্দান যাবে।’

স্বর্ণকার পকেট থেকে দুটো বাক্স বের করে রাজার হাতে তুলে দিল।

রাজা অবাক। বললেন, ‘এটা অসম্ভব! কী করে এই আংটি পেলে তুমি? আমি নিজে এটা সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলাম।’

স্বর্ণকার বলল, ‘আংটির চিন্তায় আমার খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই বউ আমার জন্য একটা বড় মাছ কিনে আনল। সেই মাছের পেটে পাওয়া গেল আপনার আংটি। আমি তো দেখেই চিনেছি। তাড়াতাড়ি আংটিটা নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। ব্যস! আপনি যে রকম চেয়েছিলেন সে রকম আংটি বানিয়ে ফেললাম। কাজ শেষ হওয়ার পর আমি আবার সেই প্রার্থনাটি করলাম যেটা আপনি প্রতিদিন শোনেন।’

এ বিভাগের আরো খবর