বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীত সকালের মাঠ

  • আহমেদ রিয়াজ   
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৪:৪০

অনেকখানি পথ হেঁটে এসেছে বলদ দুটো। এখন আবার ফিরে যাবে? ধ্যাৎ, আর ভালো লাগে না। কবে যে অবসর পাবে! তখন গোয়ালঘরে বসে বসে কেবল জাবর কাটবে। আর লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে।

মাঠটা তখনো ঘুমুচ্ছিল। তখন ছিল ভোর। দুটো মানুষ সমান পুরু কুয়াশা চাদর হয়ে ঢেকে রেখেছে মাঠটাকে। সূর্যের দেখা না পেলে ঘুম থেকে ওঠার ইচ্ছে নেই মাঠের। কিন্তু এ কী! দুটো বলদ এসে হাঁকডাক শুরু করে দিল। মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে বলদ দুটো, হাম্বা-আ-আ, হাম্বা-আ-আ-আ...

একবার-দুবার নয়, বেশ কয়েকবার। মনে হচ্ছে কানের কাছে অ্যালার্ম বাজাচ্ছে। সে কী চিৎকার! চেঁচিয়ে মাঠটাকেই বুঝি তুলে নিয়ে যাবে বলদ দুটো। বড্ড বিরক্ত হলো মাঠ। খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলল, ‘অ্যাই! হচ্ছেটা কী?’

একটা বলদ আবার কানে দুলও পরেছে। ঘণ্টা দুল। যখন হাঁটে, টুংটাং শব্দ হয়। দুল জোড়ার জন্য বলদটার খুব গর্ব। হাঁটার সময় মাথাটা একটু বেশি দোলায়। তাতে শব্দটা বেশি হয়। অনেক দূর থেকেও শোনা যায়।

মাথা দুলিয়ে দুল পরা বলদ বলল, ‘এখনো কিছু হয়নি। একটু পরেই হবে। চাষ হবে। লাঙল চলবে।’

মাঠ বলল, ‘এই ভোরে?’

বলদ বলল, ‘ভোর কোথায়? সকাল হয়েছে সেই কখন!’

বিরক্ত হয়ে মাঠ বলল, ‘এই শীতের সকালে চাষটাস হবে না বাপু। যাও, গোয়ালঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকো। নয়তো জাবর কাটো। আমাকে একা থাকতে দাও।’

অনেকখানি পথ হেঁটে এসেছে বলদ দুটো। এখন আবার ফিরে যাবে? ধ্যাৎ, আর ভালো লাগে না। কবে যে অবসর পাবে! তখন গোয়ালঘরে বসে বসে কেবল জাবর কাটবে। আর লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে।

অন্য বলদটা এতক্ষণ বাদে মুখ খুলল, ‘শীত সকালে লাঙল চালাতে আমাদেরও ভালো লাগে না। গোয়ালঘর থেকে বেরোতে চাইনি। কিন্তু কী করব, পিঠের ওপর কয়েক ঘা পড়তেই আর না এসে পারিনি।’

মাঠ বলল, ‘বুঝেছি। তোদের মনিবকে গিয়ে বল, আমি এখন ঘুম থেকে উঠতে পারব না। সূর্য উঠুক, তারপর।’

কী আর করা! সূর্য ওঠার অপেক্ষায় বলদ দুটো বসে রইল মাঠের এক কোনায়। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ল মাঠ।

সূর্য উঠল অনেকক্ষণ পর। অমনি মাঠের গায়ের ওপর থাকা চাদর ধরে টানাটানি শুরু করল দুই বলদ।

আবারও জেগে গেল মাঠ। জানতে চাইল, ‘আবার কী হলো?’

‘ওই তো সূর্য উঠেছে।’

আকাশের দিকে তাকিয়ে মাঠ বলল, ‘কোথায় সূর্য? ওটা তো চাঁদ। রাত হয়ে গেল নাকি?’

ঘণ্টাপরা বলদ বলল, ‘ওটা চাঁদ নয়, সূর্য।’

‘সূর্য তো অমন ফ্যাকাশে হওয়ার কথা নয়। চাঁদের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কেন?’

বলদ বলল, ‘কী জানি বাপু। সূর্যের ব্যপারস্যাপার বুঝি না। শুনেছি সূর্যের অনেক ক্ষমতা। অথচ সামান্য কুয়াশা ঠেলেই উঁকি দিতে পারে না। কী হবে এমন ক্ষমতা থেকে?’

এবার এগিয়ে এলো চাষি। বলল, ‘শীতের দোহাই দিয়ে অনেক ঘুমিয়েছিস। এবার ওঠ।’

চাষির কথা কখনোই ফেলতে পারে না মাঠ। ঝটপট উঠে পড়ল। আর কী অবাক! মাঠটা জেগে উঠতেই কুয়াশার চাদরখানা সরে যেতে লাগল। সরতে লাগল দূর থেকে দূরে। আরও কিছুক্ষণ পর পুরো আকাশ দখল করে ফেলল সূর্য। কুয়াশার চাদরও কোথায় যে হারিয়ে গেল, কেউ তার খোঁজও নিল না। শীতও পালাই পালাই করে ছুটে পালাল। এক ফোঁটা কুয়াশা বা এক ফোঁটা শীত- কিছুই রইল না মাঠের বুকে।

দুই বলদ নিয়ে লাঙল চালাতে লাগল চাষি। লাঙল চালাতে চালাতে মাঠকে বলল চাষি, ‘বুঝেছিস! চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলে কখনো শীত যায় না। বরং নিয়মমতো কাজ শুরু করলেই শীত পালায়।’

এরপর কুয়াশার চাদর যতই মোটা হোক, ভোর হলে আর চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে না মাঠ। হাম্বা ডাক শুনলেই উঠে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর