বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিং আতঙ্ক

  • ইকবাল খন্দকার   
  • ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:৩৮

এবার মামার পা জড়িয়ে ধরে নীহার। বলে, ‘আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন মামা। আমি ভুল করে ফেলেছি। আর কোনোদিন এমন কাজ করবো না। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। নইলে আমার শিং গজাবেই। সবাই আমাকে গরু বলে ডাকবে। আমি ক্ষমা চাই মামা। আমাকে...’

ছোট মামার মনটা ভীষণ খারাপ। তার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে আছেন তিনি। আর একটু পরপর তাকাচ্ছেন গোয়ালঘরের দিকে। তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবেন।

হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে ছোট মামা পেছন দিকে ঘাড় ঘোরান। নীহার দাড়িয়ে আছে।

ছোট মামা এ সময়ে নীহারকে দেখে অবাক হন। কেমন যেন দেখাচ্ছে ওকে।

ছোট মামা জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে রে নীহার?’

নীহার বলে, ‘খুব বিপদে পড়েছি মামা। এই বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার পাবো, বুঝতে পারছি না। তবে আপনি যদি সাহায্য করেন, অবশ্যই উদ্ধার পাবো। আপনি ছাড়া আর কার কাছে সাহায্য পাবো বলেন। আপনি বাঁচান মামা। একটা ডাক্তার বা কবিরাজের ঠিকানা দেন। নইলে আমি কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবো না। স্কুলে তো যেতেই পারবো না। লজ্জায় বন-জঙ্গলে চলে যেতে হবে। আর না হয় গোয়ালঘরে থাকতে হবে।’

এবার মুখ খোলেন মামা, ‘এত লম্বা বক্তৃতা না দিয়ে যা বলার অল্প কথায় বল।’

নীহার মামার সামনের জায়গাটায় বসে। বলে, ‘মাথাটা খুব ব্যথা করছিল। এই জন্য গতকাল রাতে আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যা-ই হোক, ভোররাতে একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলাম। খুবই ভয়ঙ্কর স্বপ্ন। কী দেখেছি জানেন? দেখেছি আমার মাথায় শিং গজিয়েছে। আর আমি গরুর সঙ্গে ঘাস খাচ্ছি। মামা, আপনি তো জানেন, ভোর রাতের স্বপ্ন সত্য হয়। এখন আমার কী হবে?’

মামা হাসেন। মন খারাপের কারণে হাসতে কষ্ট হলেও হাসেন। আর বলেন, ‘গরুর সঙ্গে ঘাস খাওয়ার মধ্যে আমি তো খারাপ কিছু দেখি না। ঘাসে প্রচুর ভিটামিন আছে। এই ভিটামিন তোর শরীরের জন্য ভালো, চোখের জন্য ভালো। আর তুই ঘাস খাবি বলে যে গরুর ভাগে ঘাস কম পড়বে, তাও কিন্তু না। দরকার হয় আমি নিজে ঘাসের চাষ করবো। তবু ঘাসের চাহিদা আমি মিটিয়েই ছাড়বো। তুই কোনো চিন্তা করিস না। তোর মাথায় শিং আগে গজাক। ততদিনে উন্নতমানের ঘাসের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

মামার রসিকতায় কষ্ট পায় নীহার। সে তাকে নিষেধ করে এমন নির্মম একটা বিষয় নিয়ে রসিকতা না করতে। আবারও অনুরোধ করে ভালো কোনো ডাক্তার বা কবিরাজের ঠিকানা দিতে।

মামা বলেন, ‘বিষয়টা নির্মম নয়। তুই যা দেখেছিস, স্বপ্নে দেখেছিস। আর স্বপ্নটা ভোর রাতে দেখেছিস বলেই যে সত্যি হয়ে যাবে, এই গ্যারান্টি তোকে কে দিল? অতএব এইসব আজেবাজে বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বাড়িতে যা। পড়াশোনা কর। আর আমাকেও একা থাকতে দে। এমনিতেই মনটা খুব খারাপ।’

নীহার বলে, ‘আপনি কিন্তু আমাকে কথা শেষ করতে দেননি। তার আগেই রসিকতা শুরু করে দিয়েছেন। আর এখন চেষ্টা করছেন এখান থেকে তাড়ানোর জন্য। আমাকে দয়া করে কথাটা শেষ করতে দেন। স্বপ্নে আমার মাথায় শিং গজাতে দেখেছি, শুধুমাত্র এই জন্য কিন্তু আপনার কাছে আসিনি। আসার কারণ হচ্ছে, ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই মাথার একটা সাইড চুলকাচ্ছে। হালকা ব্যথা তো আছেই। মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কিছু একটা ঠেলে বের হয়ে আসবে। স্বপ্ন যদি সত্য না হবে, তাহলে এইসব লক্ষণ কেন দেখা দেবে?’

মামা নিরুত্তর থাকেন। তারপর চোখ বন্ধ করেন। নীহার বুঝতে পারে তিনি গভীরভাবে কিছু ভাবছেন। তাই সে তার ধ্যান ভাঙাতে চায় না। মামা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর চোখ খুলে বলেন, ‘হ্যাঁ, ভোররাতে দেখা স্বপ্ন সত্যি হয়, আমিও শুনেছি। আবার স্বপ্নটা দেখার পরপরই যেহেতু মাথার একটা সাইড চুলকাচ্ছে, হালকা ব্যথাও আছে, অতএব শিং গজাচ্ছে, এটা জোর দিয়েই বলা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিং কার গজায়? জি, শিং তারই গজায়, যে শিংওয়ালা কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেয়। তুই চিন্তা করে দেখ, শিংওয়ালা কোনো প্রাণীকে কখনও কোনো কষ্ট দিয়েছিলি কি না।’

এবার মামার পা জড়িয়ে ধরে নীহার। বলে, ‘আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন মামা। আমি ভুল করে ফেলেছি। আর কোনোদিন এমন কাজ করবো না। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। নইলে আমার শিং গজাবেই। সবাই আমাকে গরু বলে ডাকবে। আমি ক্ষমা চাই মামা। আমাকে...’

মামা নীহারকে টেনে তোলেন। আর জিজ্ঞেস করেন কোন ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছে।

নীহার বলে, ‘আপনার মন কেন খারাপ, আমি জানি মামা। আপনার আদরের গরুটার শিং ভেঙে গেছে। আর শিংটা ভেঙেছে ঢিল লেগে। ঢিল কে দিয়েছে, আপনি না জানলেও আমাকে সন্দেহ করেছিলেন। তাই জিজ্ঞেসও করেছিলেন। কিন্তু আমি অস্বীকার করেছি। এখন আর অস্বীকার করছি না মামা। ইটের টুকরো দিয়ে ঢিলটা আমিই মেরেছিলাম। আর কখনও এই কাজ করবো না মামা। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।’

মামা এবার মিটমিটিয়ে হাসেন। আসলে তিনি এমনটাই চেয়েছিলেন। গরুর শিঙে ব্যথা দেবে আবার অস্বীকার করবে, তা তো হয় না। তাই তিনি নীহারের স্বপ্ন আর মাথা চুলকানির বিষয়টাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে একটু চালাকি করছিলেন। একজন মিথ্যাবাদীর মুখ থেকে সত্য বের করার জন্য এইটুকু চালাকি তো করা যেতেই পারে।

মামাকে হাসতে দেখে নীহার কিছু বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমা চাইলে হবে না। ক্ষমা চাইতে হবে গরুটার পা ধরে।’

নীহার গোয়ালঘরে যায়। গরুটার পা ধরে ক্ষমা চায়।

দুদিন পর।

নীহারের মাথার যে জায়গাটা চুলকাচ্ছিল, হালকা ব্যথা করছিল, সেখানে মাঝারি আকারের একটা ফোঁড়া উঠেছে।

এ বিভাগের আরো খবর