স্কুলে যাওয়ার জন্য বাবার সঙ্গে বেরিয়েছে মিতু।
কয়েক দিন আগে নার্সারিতে ভর্তি হয়েছে সে।
স্কুলে যেতে মিতুর খুব ভালো লাগে।
কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠতে ভালো লাগে না। তাও যদি হয় শীতের সকাল।
মিতু হাই তুলে এদিক-ওদিক তাকায়। চারদিকে কুয়াশা। এখনও টুপ-টাপ শিশির পড়ছে।
হঠাৎ মিতু দেখতে পেল আগুনের পাশে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে বসে আছে।
মিতু বলল, ‘বাবা ওরা এখনো স্কুলে যায়নি কেন? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।’
বাবা বললেন, ‘ওরা স্কুলে যায় না, মা মনি।’
মিতু অবাক। বলে, ‘সে কী কথা! আমি ওদের স্কুলে নিয়ে যাব।’
মিতু বাবার হাত ধরে টানতে লাগল।
বাবা মিতুকে নিয়ে বাচ্চাগুলোর পাশে গেলেন।
মিতু বলল, ‘এই তোমরা এখানে কী করছো?’
ওদের একজন মিষ্টি হেসে বলল, ‘আমরা আগুন পোহাইতাছি।’
মিতু অবাক। আগুন পোহালে কী হয়?
শিশুদের এক জন বলল, ‘শীতের দিনে আগুন পোহাইলে শরীর গরম থাকে।’
মিতু গাল ফুলিয়ে বলল, ‘হুম বুঝতে পেরেছি। আর আগুন পোহাতে হবে না। এখন চলো আমার সাথে স্কুলে যাবে।’
এমন সময় ওদের মায়েরা এলেন।
এক জন বললেন, ‘কী বলতাছো মা! আমাদের দুই বেলা খাবারের পয়সা নাই। ওদের স্কুলে পাঠাব কীভাবে? লেখাপড়ার খরচ চালাব কীভাবে?’
মিতু বলল, ‘চিন্তা করবেন না। আমার বাবা ওদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন।’
বাবা ফেলফেল করে মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
এতগুলো ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর সামর্থ্য তার নেই। কিন্তু সেটা মিতুকে বলা যাবে না। তাহলে সে কষ্ট পাবে।
মিতু হাসি হাসি মুখ করে বলল, ‘বাবা চলো ওদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। অনেক মজা হবে।’
মিতুর আনন্দ দেখে বাবাও খুশি হলেন। তিনি শিশুদের নিয়ে স্কুলে গেলেন।
প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে বললেন, ‘আমি ওদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে এসেছি।’
মিতু বলল, ‘ওদের বাবা-মা খুব গরিব। লেখাপড়া করাবার সামর্থ্য নেই।’
মানুষের প্রতি মিতুর ভালোবাসা দেখে প্রধান শিক্ষকও খুশি হলেন। সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে। ওদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিলাম। আপনাদেরকে কোনো টাকা দিতে হবে না। তা ছাড়া বই-খাতাসহ অন্যান্য সব ব্যবস্থা আমি করব।’
শিশুরা চিৎকার করে উঠল, ‘হুররে! আমরা একসাথে স্কুলে পড়ব, একসাথে স্কুলে পড়ব।’