বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যে ভূত অদ্ভুত নয়

  • আবেদীন জনী, ঢাকা   
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:৪৩

রায়নাদের শোবার ঘরের জানালার কাছেই একটা বকুলগাছ। মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা বকুলতলা দাঁড়াত রায়না। ঝাঁজমাখা সোনারঙের রোদ দেখতো। পাতার ছায়ায় চুপটি করে বসে থাকা ছোট্ট পাখিদের সঙ্গে কথা বলত।

রায়নাকে মা বলেছেন, ভরদুপুরে কোথাও যাবে না। যদি যাও, তাহলে কিন্তু ভূতে ধরতে পারে। গোধূলিবেলা কিংবা রাতদুপুরের মতো ভরদুপুরেও দুষ্টু ভূতের ছানাপোনারা আনাগোনা করে।

রায়নাদের শোবার ঘরের জানালার কাছেই একটা বকুলগাছ। মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা বকুলতলা দাঁড়াত রায়না। ঝাঁজমাখা সোনারঙের রোদ দেখতো। পাতার ছায়ায় চুপটি করে বসে থাকা ছোট্ট পাখিদের সঙ্গে কথা বলত। কিন্তু মা বারণ করেছেন বলে এখন আর ভরদুপুরে বকুলতলায় পা পড়ে না ওর।

সেদিন দুপুরবেলা। ঘটল এক আজব ঘটনা। মা রান্নাঘরে। রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত। এই ফাঁকে টিভিতে কার্টুন দেখছে রায়না। সময়টা ভরদুপুর হওয়ার কারণে জানালাটা বন্ধ করে রাখা। এমন সময় মনে হলো, জানালার ওপাশে বকুলগাছ থেকে স্পষ্ট গলায় কে যেন ডাকছে, এই যে রায়না, জানালাটা খুলে দাও না গো। আমিও কার্টুন দেখতে চাই।

রায়নার কাছে গলার আওয়াজটা অচেনা মনে হালো। তবে বোঝা গেল কণ্ঠটা ছোট্ট কোনো খোকার। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, কে গো জানালা খুলতে বলছ?

ওপাশ থেকে শব্দ এল, আমি ধবল।

এ পাড়ায় তো ধবল নামের কেউ আছে বলে মনে হয় না। রায়না বলল।

আমি তো তোমাদের খুব কাছেই থাকি। কিন্তু আমাকে চিনবে না।

খুব কাছে থাকলে চিনব না কেন?

হ্যাঁ, চিনবে না। কারণ, আমি ভূতখোকা। এই বকুলগাছটাই আমাদের বাড়ি।

ভয়ে গা ছমছম করে উঠল রায়নার। চিৎকার দেবার শক্তিও পেল না। গলা শুকিয়ে আসতে লাগল। মাকে যে ডাকবে, সেকথাও ভয়ের কারণে ভুলে গেল।

জানালার ওপাশ থেকে আবার বলল, বুঝেছি, তুমি খুব ভয় পেয়েছ। কিন্তু ভয় পাবার কিছু নেই। আমি ভূত হলেও অদ্ভুত না। দেখতে একদম মানুষখোকার মতো। শুধু গায়ের রংটা একটু বেশি সাদা। জানালা খুলেই দেখো। শুনছ তো, আমার কথাগুলোও মানুষের কথার মতো মিষ্টি।

রায়না ভয়ে ভয়ে বলল, জানালা খুলব না। শুনেছি, যে ভূত অদ্ভুত নয়, সে ভূত আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়। মিষ্টি সুরে মানুষের মতো কথাবলা ভূতেরা বড্ডরকম পাজি।

ধবল বলল, এটা আবার কেমন কথা?

একদম খাঁটি কথা।

খাঁটি হলো কেমন করে?

অদ্ভুত চেহারা দেখে ও নাকি সুরে কথার আওয়াজ পেলেই আঁচ করা যায়, সেটা ভূত। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়া সম্ভব হয়। ভূতটা ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। আর যে ভূত অদ্ভুত নয়, চেহারা ও গলার স্বর মানুষের মতো, তাদের চেনা খুব কঠিন। তারা ভীষণ ভয়াল। সহজেই মানুষের খুব কাছে যেতে পারে। তারপর হঠাৎ ভয় দেখায়। কখনো আবার ঘাড় মটকে দেয়। বড়ো ধরনের ক্ষতি করে ফেলে। তাই ভূতদের অদ্ভুত হওয়াই ভালো।

ঠিক বলেছ। তবে ভূতবংশে জন্ম হলেও আমি অদ্ভুত নই। আমার আচরণও ভালো। আমি একটা ভালো ভূত। সত্যি বলছি।

সত্যি যে বলছ তা বুঝব কেমন করে?

জানালাটা খোলো। আমার চোখমুখ দেখে কিছুটা বুঝতে পারবে। প্রমাণ দিলে বাকিটাও বুঝতে দেরি হবে না।

রায়না ভয় মেশানো গলায় বলল, হায় হায়! বলে কী ভূতখোকাটা! যে ভূতের ভয়ে ভরদুপুরে কোথাও যাই না, জানালা বন্ধ করে রাখি। সেই ভূতেই আমাকে বলছে জানালা খুলতে? খুলেই যদি দেখি, তোমার একহাত লম্বা হেলেপড়া নাক। কাকতাড়ুয়ার মতো বড়ো বড়ো, গোল গোল চোখ। ত্রিভুজের মতো তিনকোণা মুখ। আর হাতির দাঁতের মতো বিশাল দাঁত বের করে যদি ভেংচি কাটো? তাহলে তো আমি একেবারে শেষ।

রায়নার কথা শুনে ধবল হি হি হি হাসল। তারপর নরম গলায় বলল, আমাকে ভয় পেয়ো না রায়না। আমি ওরকম না। ভূতেরা পিঁপড়ে ঢোকার মতো ছোট্ট ফুটো দিয়েও ঘরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু আমি ভালো ভূত বলেই প্রবেশ করিনি। জানালাটা খুলে দিলে বকুলগাছের ডালে বসে দুলতে দুলতেই টিভিতে কার্টুন দেখতে পারব।

শোনো রায়না, আমি যে ভালো ভূত, তার একটা প্রমাণ দিচ্ছি। ওই যে রাস্তাটা, সারাদিন গড়গড় করে গাড়ি চলে। সেদিন তোমার বুড়ো দাদু রাস্তা পার হতে ভয় পাচ্ছিলেন। তখন আমিই হাত ধরে পার করে দিয়েছি। দাদুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, যে খোকাটা রাস্তা পার করে দিয়েছিল, সে ধবধবে সাদা ছিল কি না।

রায়না তো ভীষণ অবাক! দাদু ওকে খোকাটার কথা বলেছেন। দুধের মতো সাদা তার গায়ের রং। মায়া মায়া মুখ। দেখতে খুব সুন্দর। দাদু আর ধবলের কথা একদম মিলে গেছে।

আর দেরি করল না রায়না। খট করে জানালার খিল খুলে দিলো। দেখল, বকুলগাছের ডালে দুই পা ঝুলিয়ে বসে আছে ধবল। ঠিক মানুষের মতো ভূতখোকা। দুধের মতো সাদা শরীর। কী মায়াবী মুখ! শসা বিচির মতো চিকন চিকন দাঁত। রুপোর মতো ঝকমকে। দাঁত বের করে মিষ্টি হেসে রায়নাকে বলল, ধন্যবাদ রায়না। তুমি খুব ভালো।

রায়না বলল, তুমিও খুব সুন্দর।

তারপর রায়না মাকে ডেকে বলল, মাগো, মা, জলদি আসো। ভূত দেখে যাও। ভালো ভূত।

রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে কাঁপা গলায় মা বললেন, কী বলছিস তুই? ভূত আবার ভালো হয় ক্যামনে? কোথায় ভূত? কোথায়?

রায়না যখন মাকে বকুলডালের দিকে তাকাতে বলল, ততক্ষণে ভূতটা আর নেই। হঠাৎ হাওয়া।

এ বিভাগের আরো খবর