আজ টুকুনের স্কুল ছুটি।
সকালে নাস্তা সেরেই সে বসল লাল ঝুড়িটা নিয়ে।
ঝুড়ি ভর্তি টিস্যুপেপার রোল।
টিস্যু শেষ হয়ে গেলে শূন্য রোলগুলো জমিয়ে রাখে টুকুন।
কত কী বানায় সেগুলো দিয়ে- গাছ, প্রজাপতি, পাখি, জিরাফ আরও কত কী।
মনের মতো রং করে তারপর সাজিয়ে রাখে নিজের ঘরে।
মাঝে মাঝে বন্ধুদেরও উপহার দেয়।
আজ সে বসেছে সিংহ আর সিংহী বানাতে।
প্রথমে ঝুড়ি থেকে দুটো টিস্যুরোল নিল।
তারপর রোলের গায়ে হলদে আর সোনালি রং লাগাল।
সিংহের কেশর বানাতে জিগজ্যাগ করে কেটে নিল লাল কাগজ।
এরপর সাদা মোটা কাগজ দিয়ে বানিয়ে নিল সিংহ আর সিংহীর মুখ।
মার্কার পেন দিয়ে চোখ মুখ এঁকে তারপর রং করা টিস্যুরোলের ওপর বসিয়ে নিল।
ওমা! কী দারুণ হয়েছে সিংহ আর সিংহী!
কিন্তু কী যেন নেই- হ্যাঁ লেজ লাগিয়ে দিলেই হবে এবার।
হলদে রঙা কাগজ কেটে লেজ বানিয়ে নিল টুকুন।
এরপর জুড়ে দিল।
এবার রোদে একটু শুকিয়ে নিলেই হলো।
একটা কার্ডবোর্ডের ওপর সদ্যবানানো সিংহ আর সিংহীকে বসিয়ে টুকুন গেল বাগানে।
ঘাসের ওপর রোদে শুকোতে দিয়ে ঘরে ফিরে এল।
কিছুক্ষণ বাদেই রং শুকিয়ে সুন্দরভাবে টিস্যুরোলের গায়ে এঁটে গেল।
মৃদু বাতাসে নড়ে উঠল সিংহের লাল কেশর।
চোখ পিটপিট করে সিংহী তাকাল সিংহের দিকে।
সিংহও মুচকি হাসল।
তারা আবেগে আপ্লুত।
এই জন্মে সিংহ আর সিংহী হবে ভাবতেও পারেনি কাগজের টিস্যুরোল দুটি।
এমন সকালে বাগানে রোদ পোহাবে তাও কি তারা ভেবেছিল?
কাগজের সিংহ ভ্রু নাচিয়ে বলল- আমি কি তবে বনের রাজা?
সিংহী হেসে বলল- বন পাবে কোথায়? বাগানে বসে রোদ পোহাচ্ছো, এই তো ঢের!
সিংহ এবার বলে- চলো তবে একটু বেরিয়ে আসি।
সিংহী বলে- যাওয়া যায় বুঝি?
সিংহ এক পা সামনে বাড়িয়ে বলল- দেখ চাইলে হাঁটতেও পারবে।
সিংহীর চোখ জ্বলে ওঠা লাইটারের মতো ঝপাৎ করে উঠল।
সঙ্গে সঙ্গে দুটো লাফ দিল সে। আনন্দে বলল- চলো না যাই, ঘুরে আসি। টুকুন ফেরার আগেই আমরা ফিরে আসব।
সিংহ কেশর দুলিয়ে বলল- নিশ্চয়ই, চলো রানী।
তারা হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে চলে গেল।
দেখল পাল তোলা নৌকা।
নদীর তীরে কাশফুল সাদা হয়ে রয়েছে, মৃদু হাওয়ায় দুলছে মেঘের মতোন ফুলগুলো।
রাজা রানী ভুলেই গেল যে তারা কাগজের তৈরি।
দুজনেই পা ভেজাল জলে।
গান গাইল- কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।