লাল পিঁপড়া চিটি। আর কালো পিঁপড়া মিটি। দুজনের খুব খাতির। বনে থাকে একটা গাছের গোড়ায়।
বাসায় দুটো তলা। উপর তলায় ঘুমায় আর গল্প করে। নিচ তলায় খেতে যায়।
বাসায় বাতি নেই। তাই সূর্য ডুবতেই শুয়ে পড়ে দুজন।
সকালে ঘুম ভাঙল চিটি মিটির। হাই তুলতে তুলতে চিটি বলল, ‘নতুন বছর শুরু হলো। নতুন নতুন ফল খেতে ইচ্ছে করছে মিটি।’
‘চল তবে বের হওয়া যাক।’
এদিক ওদিক ঘুরে ওরা গেল এক বাগানে।
মিটি বলল, ‘বাহ কী দারুণ আঙুর। চল পাড়ি।’
দুই জন দুটি আঙুর নিয়ে এলো বাসায়। রেখে দিল নিচ তলায়। সকালে খাবে। এরপর বনের ঝিরি ঝিরি বাতাসের গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ল চিটি ও মিটি।
পরের দিন সকাল। একি! একটা আঙুর নেই! মন খারাপ দুই জনের। একটা আঙুরই ভাগ করে খেল দুই জন।
‘উমম... ফল খেতে দারুণ মজা’, বলল চিটি।
‘চল আজ আপেল পেড়ে আনি’, বলল মিটি।
গেল তারা আপেল বাগানে। আপেল পাড়ল গুনে গুনে দুটো। অনেক কষ্টে টেনেটুনে নিয়ে এলো। রেখে দিল নিচ তলায়।
কিন্তু হায়! সকালে আবার একই কাণ্ড। একটা আপেল উধাও! কে নিল? ভেবে কূল পেল না চিটি মিটি।
একটা আপেল ভাগ করে খেল ওরা।
ঝুড়ি হাতে বের হলো চিটি আর মিটি। আজ গেল কমলা গাছে। গাছে ছোট ছোট কমলা।
‘কী দারুণ ঘ্রাণ!’, বলল চিটি।
‘প্যাকেটের জুস একদম ভালো লাগে না। গাছের তাজা কমলা বেশি মজা’, বলল মিটি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পথে দেখা জোনাকির সঙ্গে।
চিটি বলল, ‘জোনাক ভাই, কে যেন আমাদের একটা করে ফল নিয়ে যাচ্ছে। তুমি সাহায্য করবে?’
মিটি বলল, ‘তুমি তো রাতে জেগে থাকো। আজ একটু পাহারা দেবে আমাদের কমলাগুলো?’
রাজি হলো জোনাকি। আলো জ্বালিয়ে সেও গেল চিটি ও মিটিদের বাসায়।
আজ আরাম করে ঘুমুচ্ছে চিটি আর মিটি। নিচ তলায় আলো জ্বেলে পাহারায় বসেছে জোনাকি।
ওটা কে! শুঁয়োপোকা নাকি? বাহ কমলার দিকে হামাগুঁড়ি দিয়ে আসছে দেখছি।
তেড়ে এলো জোনাকি ‘ও তুমিই তাহলে এতদিন চিটি মিটির ফল নিয়ে যাচ্ছিলে?’
বিছানা ছেড়ে হাই তুলতে তুলতে নিচে এলো চিটি আর মিটি।
জোনাকি বলল, ‘এই সেই দুষ্টু শুঁয়োপোকা। প্রতিদিন যে তোমাদের ফল খায়।’
চিটি রেগে বলল, ‘দেবো নাকি একটা কামড়?’ ভয় পেয়ে কেঁদেই দেবে যেন শুঁয়োপোকা।
কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘আমি বেড়ে উঠব। সুন্দর প্রজাপতি হব। তারপর উড়ে বেড়াব।
‘মা বলেছে বেশি করে ফল খেতে। তোমাদের ফলগুলো বেশ মজার। একটা আমি খাই। আরেকটা রেখে যাই।’
মিটি বলল, ‘তুমি না শুধু পাতা খাও।’
শুঁয়োপোকা বলল, ‘প্রতিদিন পাতা খেতে ভালো লাগে কার! ফল বেশ মজা।’
‘তোমরা থাকো তবে। আমি চললাম। অনেক কাজ পড়ে আছে। বনের ওপাশে আলো জ্বালাতে হবে’, এই বলে চলে গেল জোনাকি।
শুঁয়োপোকার কথা শুনে মায়া হলো চিটি আর মিটির।
চিটি বলল, ‘ঠিক আছে। তুমি একটা কমলা খাও। আরেকটা আমরা ভাগ করে খাব।’
মিটি বলল, ‘চাইলে তুমি আমাদের গাছে তোমার খোলস বানাতে পারো।’
শুঁয়োপোকা খুব খুশি। পেট ভরে কমলা খেল। চিটি আর মিটি তার জন্য অনেক মজার খাবারও নিয়ে এলো।
এরপর একদিন শুঁয়োপোকা বেছে নিল একটা ডাল। ডালে ঝুলে রইল সে। তাকে ঘিরে তৈরি হতে লাগল রেশম গুটি।
এক দিন, দুই দিন করে সাত দিন। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চিটি মিটি অবাক। শুঁয়োপোকা গেল কই?
‘এই তো আমি! তোমাদের পেছনে।’
পেছনে ঘুরতেই অবাক হয়ে গেল চিটি মিটি। ইয়া বড় এক রঙিন প্রজাপতি।
‘আমার লেজে উঠে পড়ো দুজন। এতদিন আমাকে তোমরা মজার মজার ফল দিয়েছো। আজ আমি তোমাদের নিয়ে বনের মাঝে উড়ব’, বলল প্রজাপতিটা।
চিটি আর মিটি প্রজাপতির লেজ আঁকড়ে বসল। এরপর তিন জনে মিলে উড়ে চলল বনের মাঝে।