সে অনেক অনেক আগের কথা।
কতো আগের?
পৃথিবীতে মানুষের আগমনের কিছুদিন পরের!
আসলে তখন পৃথিবী নতুন।
পৃথিবীর মানুষও নতুন।
তখন পৃথিবীর সব কাক ছিলো তুষারের মতো সাদা।
মানুষের ঘোড়া ছিলো না।
ছিলো না আগ্নেয়াস্ত্র।
মানুষ তখন খাবারের জন্য বন্য ষাঁড় শিকার করতো।
বড় বড় ষাঁড় হেঁটে যাওয়ার পথে পাথরের বল্লম দিয়ে তাদের শিকার করতো।
যদিও এই কাজ ছিলো খুবই কঠিন, অনিশ্চিত এবং বিপজ্জনক।
তখন কাকেরা মানুষের সেই বিপজ্জনক কাজকে আরও দুঃসাধ্য করে তুলতো।
কারণ তারা ছিলো ষাঁড়দের বন্ধু।
শস্যভূমির উপর দিয়ে ওড়ার সময় তারা নিচের সবকিছু দেখতো।
যখনই তারা দেখতো ষাঁড়ের পালের দিকে শিকারিরা এগিয়ে আসছে তখনই তারা উড়ে গিয়ে ষাঁড়ের দুই শিংয়ের ওপর বসে হুঁশিয়ার করে বলতো, 'ভাইয়েরা, শিকারি আসছে।
ওই পাহাড়ের পেছনের নালা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে।
সাবধান!'
এই শুনে ষাঁড়ের পাল ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়ে যেতো।
আর মানুষ শিকার না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতো।
এভাবে অনেকদিন কেটে গেলো।
একদিন সব মানুষ মিলে সভা ডাকলো।
কী করা যায় সিদ্ধান্ত নিতে চাইলো তারা।
প্রবীণ জ্ঞানী এক নেতাও এলেন।
তিনি পরামর্শ দিলেন, 'সবার আগে আমাদের ওই বড় কাকটিকে ধরতে হবে।
যে তাদের নেতা।
তোমরা হয় ওই কাকটাকে ধরো, নয় তো ক্ষুধার্ত থাকো।'
সবাই প্রবীণের কথা মেনে নিলো।
কাক ধরার দায়িত্ব নিলো এক টগবগে তরুণ।
সে অনেক বড় মাথা এবং শিংসহ একটা ষাঁড়ের চামড়া নিয়ে এলো।
তারপর চুপি চুপি ষাঁড়ের ছদ্মবেশে ঘাস খাওয়ার ভান করে হামাগুড়ি দিয়ে ষাঁড়ের পালে ঢুকে গেলো।
ষাঁড়গুলো ভেবেছিলো, সে তাদেরই একজন।
এভাবেই সে সাদা কাক নেতাকে ধরতে ফন্দি আঁটতে থাকলো।
বড়, লোমশ জন্তুগুলো তার দিকে মনোযোগ দিলো না।
এরপর শিকারিরা তাদের শিবির থেকে ধনুক প্রস্তুত করে এগোতে থাকলো।
তারা পশুপালের কাছাকাছি পৌঁছামাত্রই কাকেরা আগের মতোই উড়ে এসে ষাঁড়দের সাবধান করতে থাকলো, 'ভাইয়েরা শিকারি তোমাদের দিকে আসছে।
তাদের তীর থেকে সাবধান।’
এই শুনে আগের মতোই সব ষাঁড় ঊর্ধ্বশ্বসে পালিয়ে গেলো।
কিন্তু শুধু লোমশ চামড়ার ছদ্মবেশে থাকা সেই তরুণ শিকারি আগের মতোই ঘাস খেতে থাকার অভিনয় করতে থাকলো।
তখন সেই বিশাল সাদা কাক ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো।
শিকারির কাঁধে বসে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে বললো, 'আরে ভাই তুমি কি শুনতে পাও না?
শিকারিরা খুব কাছে চলে এসেছে, পাহাড়ের ওপরে। নিজেকে বাঁচাও!'
সাহসী তরুণটি ষাঁড়ের চামড়ার ভেতর থেকে বের হয়ে এলো এবং কাকের পা ধরে ফেললো।
একটি পুরনো নোংরা চামড়ার সুতোর এক প্রান্ত দিয়ে কাকের পা বেঁধে ফেললো এবং অন্য প্রান্ত পাথরে আটকে দিলো।
অনেক চেষ্টা করেও কাকটি ছুটতে পারলো না।
এরপর মানুষরা আবার সভায় বসলো।
'এই বিশাল পাজি কাককে আমরা কী করবো?
দিনের পর দিন যে আমাদের ক্ষুধার্ত রেখেছিলো।'
একজন রাগি শিকারি বললো, 'আমি ওকে পুড়িয়ে ফেলবো।'
কেউ তাকে থামানোর আগেই শিকারির হাত থেকে সে কাকটিকে ছিনিয়ে আগুনে ছুড়ে মারে।
পাথর ছুড়তে থাকে।
সে বলে, 'এটা তোমার উচিত শিক্ষা।'
তবে যে চামড়ার তার দিয়ে কাকের পা বাঁধা হলো তার এক পাশ পুড়ে যাওয়ায় বিশাল সেই কাক উড়ে চলে যেতে পারলো।
কিন্তু কাকটির উপরিভাগ ঝলসে গেলো।
প্রায় নিচের দিকের অর্ধেক পালকও পুড়ে গেলো।
যদিও সে ছিলো অনেক বড়।
এতে সে আর সাদা রইলো না।
সে যতো তাড়াতাড়ি সম্বব উড়ে চলে গেলো।
আর কেঁদে কেঁদে বললো, 'আমি জীবনে আর এমন করবো না।
প্রতিজ্ঞা করছি, কোনো কাক আর কখনও ষাঁড়দের সাবধান করবে না।'
সেদিন কাকটি কোন রকমে পালিয়ে যেতে পারলেও সেই থেকে কাকেরা কালো হয়ে গেলো।