বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৎসকন্যার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া স্যাম

  • কিডজোন ডেস্ক   
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:২৫

ছোট্ট বন্ধুরা, চলো মারমেউড বা মৎসকন্যা নিয়ে আরও একটি রূপকথা পড়ি...

সে অনেক আগের কথা।

তখনও আবিষ্কার হয়নি বাষ্পীয় ইঞ্জিন।

আটলান্টিকে তখন পাল তোলা জাহাজ চলতো।

আটলান্টিক মহাসাগরটি ছিলো পনের মাইল গভীর।

আর সেই পানিতে ছিলো প্রচুর মৎস্যকন্যার বাস।

সেই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো জাহাজের ক্যাপ্টেন যদি কোনো মানুষের নাম ধরে ডাকতো, তাহলে মৎসকন্যারা সেই মানুষটি চেয়ে বসতো।

যেমন ধরো, ক্যাপ্টেন বললো, 'সুমন, তুমি ডেকে যাও, কাজ করো।'

এ কথা বলামাত্রই মৎসকন্যাদের উদয় হতো।

অমনি তারা দাবি করতো, 'সুমনকে আমাদের কাছে দিয়ে দাও।'

আর ক্যাপ্টেন যদি সেই কথা না শুনতো, তাহলে মৎসকন্যারা জাহাজটি ধ্বংস করে ফেলতো!

তাই আটলান্টিকে জাহাজ ভাসানোর আগেই জাহাজের ক্যাপ্টেন তার সাগরেদদের নাম বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের নামে রাখতো।

যেমন ধরো, কারও নাম কুড়াল, কারও বা কুঠার, হাতুড়ি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি!

যখনই সে কাউকে কোনো নির্দেশনা দিতো, তখন তাকে বলতে হতো, 'হাতুড়ি, কেবিনে যাও। কেবিনের আবর্জনা পরিষ্কার করো।'

আর তখন মৎস্যকন্যারা বলতো, 'আমাকে হাতুড়ি দাও।'

আর তখন ক্যাপ্টেন তাদের হাতুড়ি দিয়ে সেই যাত্রা রক্ষা পেতো।

এমনিভাবেই চলছিলো জাহাজ নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া।

কিন্তু একদিন ভুল করে এক ক্যাপ্টেন একজনের আসল নাম ধরে ডেকে বসলো!

বলে ফেললো, 'স্যাম, রান্নাঘরে গিয়ে খাবার বানাও।'

আর সঙ্গে সঙ্গে টুপ করে ভেসে উঠলো এক মৎসকন্যা।

বললো, 'আমাকে স্যাম দাও।'

জাহাজে স্যাম নামে কোনো জিনিস ছিলো না।

ফলে ক্যাপ্টেন বাধ্য হয়ে স্যাম নামের ছেলেটিকে ফেলে দিলো পানিতে।

সে যখনই পানিতে পড়লো, তখনই মৎসকন্যাটি ছো মেরে তাকে নিজের কব্জায় নিয়ে নিলো।

মৎসকন্যার চুল এতোই বড় ছিলো যে, স্যামকে সে চুল দিয়ে জড়িয়ে ফেললো।

ফলে স্যাম খুব একটা ভিজলো না।

মৎসকন্যা খুব দ্রুত সাঁতার কাটায় নিঃশ্বাস ধরে রাখতেও ঝামেলা হলো না তার।

মৎস্যকন্যা তার বাড়িতে গিয়ে স্যামকে চুলের প্যাঁচ থেকে বের করলো।

তারপর বললো, 'আরে, তুমি তো দেখতে অনেক সুন্দর!

আচ্ছা, তুমি কি মাছ পছন্দ করো?'

স্যাম বললো, 'না; আমি মাছ পছন্দ করি না।'

'তাহলে তোমাকে কী খাওয়াবো!

আচ্ছা ঠিক আছে, সেটা পরে ভাবা যাবে।

তার আগে চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি!'

তারপর তারা সত্যি সত্যি মৎসকন্যা-সমাজের নিয়মে বিয়ে করে ফেললো।

কিছুদিন পর স্যাম অন্যান্য মৎস্যকন্যার সঙ্গে সমুদ্রভ্রমণে বের হতে শুরু করলো।

এ নিয়ে এক মৎসকন্যা বান্ধবীর সঙ্গে স্যামের বউয়ের খুব ঝগড়া বাঁধলো।

বেশ কথা কাটাকাটি হলো।

এরপর বউটি স্যামকে বাসার বাইরে যাওয়া বারণ করে দিলো।

একদিন বউ বাড়ি নেই-এমন সময় তার বান্ধবীটি এসে স্যামকে জিজ্ঞেস করলো, 'আচ্ছা, তুমি কি তোমার নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চাও না?'

প্রশ্ন শুনে স্যাম খুশি হলো; বললো, 'হ্যাঁ, চাই।'

এ কথা শুনে বান্ধবীটি স্যামকে ঠিক তেমন করে চুল দিয়ে পেঁচিয়ে ফেললো, যেমন করে তার বউ তাকে বেঁধে এনেছিলো জাহাজ থেকে পড়ার পর।

এক সাঁতারে স্যামকে তীরে এনে ফেললো বান্ধবীটি।

স্যাম তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপরে উঠে এলো।

তারপর ফিরে এলো বাড়িতে।

এদিকে বাড়ি ফেরার পর স্যাম সবাইকে তার পানির নিচের জীবনের গল্প শোনাতে লাগলো।

বলতে লাগলো, মৎসকন্যাদের বাড়িঘর কতো সুন্দার হয়, জিনিসপত্র কতো সুন্দর ইত্যাদি।

আরও বললো, একেকটা মৎসকন্যা দেখতে একেকজনের চেয়ে বেশি সুন্দর।

তবে তাদের মধ্যে একটা মিল আছে।

আর তা হলো, তাদের প্রত্যেকের ঠোঁটের রঙই গোলাপি।

তোমরা নিশ্চয়ই এ রকম মৎস্যকন্যার ছবি দেখেছো?

আর স্যামের বর্ণনা শুনে ভাবছো, ঠোঁটে লিপিস্টিক ব্যবহার করার বুদ্ধিটা মানুষ পেয়েছে মৎসকন্যাদের কাছ থেকেই!

স্যাম আরও বললো, মৎস্যকন্যাদের বাসা দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো লাগে।

তারা নদীর তীর থেকে নিচের দিকে খোদাই করতে শুরু করে।

তারপর কিছুদূর গিয়ে আবার উপরের দিকে খোড়ে।

বাসা বানানোর জন্য ঠিক কতোদূর খুঁড়তে হবে- সেই বিদ্যা তারা আপনাআপনিই জেনেছে।

তারপর আবার নিচের দিকে, মানে পানির দিকে খোদাই করতে শুরু করে।

আর সেখানে তারা বাসা বানায়।

একেকটা বাসায় একজন মৎসকন্যাই থাকে।

বাসাগুলো দশ থেকে বিশ ফুটের হয়।

তারা দেয়ালও বানায় কুমিরের মতো।

স্যাম সেখানে ছয় বছর ছিলো।

যদি সেই মৎস্যকন্যাটি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে না যেতো, তাহলে হয়তো সারাজীবন সেখানেই থাকতে হতো তাকে।

এরপর স্যাম আর কোনোদিনই জাহাজে উঠেনি।

সমুদ্রে নামেওনি আর কোনোদিন।

তবে সে প্রায়ই সৈকতে যেতো।

একটু দূর থেকে ফুল ছুড়ে মারতো পানির দিকে।

আর মনে মনে ধন্যবাদ দিতো তার উপকারি মৎসকন্যা বন্ধুটিকে।

এখনও সাগর পাড়ে গিয়ে পানির দিকে ফুল ছুড়ে দিতে কাউকে দেখলে ভেবে নিও, এটাই সেই স্যাম।

বা স্যামের মতোই কেউ!

এ বিভাগের আরো খবর