আসছে কনকনে শীত।
হাড় কাঁপানো শীতও বলা যায়।
এই শীতে নড়ে ওঠে শরীর ভিত।
সত্যি সত্যি হাড় কাঁপানো শীত নেমে গেছে গ্রামে।
বিশেষ করে উতারাঞ্চলে।
শীত এমনিতেই কঠিন হতে শুরু করে পৌষের শেষ থেকে।
যদিও ছয় ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল বলে পরিচিত।
কিন্তু শীত আসে আরও আগেই।
কোনো কোনো বছর অগ্রহায়ণ মাসেই শীত শুরু হয়ে যায়।
গ্রামে তো শীত আসে যেন তারও আগে!
শহরে অবশ্য শীতের বুড়ি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আসে একটু দেরিতেই।
কিন্তু পৌষের শেষ সপ্তাহে হিমালয়ের বরফগলা ঠান্ডা কনকনে বাতাস এসে এই বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয় শীত কী যে কষ্টের!
আবহাওয়া বিভাগ যাকে বলে শৈত্যপ্রবাহ।
হিমেল ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় সূর্য পর্যন্ত আড়াল হয়ে যায়।
এ তো দেখা যায় রাজধানী ঢাকায় বসেও।
তবে দেশের উত্তরাঞ্চলের অবস্থা?
খুব ভয়াবহ।
তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
তার মানে অসহ্য শীত।
উত্তরাঞ্চল মানে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, তেতুলিয়া-এসব এলাকার কথা বলছি।
এরসঙ্গে রাজশাহী, পাবনার কথাও বলতে হয়।
প্রতিবছর এসব জেলায়ও খুব বেশি শীত পড়ে।
এসব এলাকার মানুষের শীতে কী যে কষ্ট, তা ঢাকায় বসে কল্পনাও করা যায় না।
বিশেষ করে বুড়ো আর শিশুরা বেশি কষ্টে থাকে।
একে তো বেশিরভাগ মানুষ গরিব।
তার ওপর আবার এদের লেপ কম্বল, সোয়েটার, চাদর এসব গরম কাপড় নেই বললেই চলে।
তাই যারা একটু ধনী, যাদের বাড়তি টাকা খরচ করার মতো অবস্থা-তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে দেশের এসব গরিব মানুষ শীতের হাত থেকে বাঁচতে পারে।
কোনো কোনো দয়ালু মানুষ শীতের গরম কাপড়-চোপড় নিয়ে ঐসব শীতপ্রধান জেলায় গিয়ে গরিবদের মধ্যে বিলি করেন।
কোনো কোনো সংগঠনও শীতবস্ত্র দেয়।
তবে ভালো লাগে যখন শুনি কোনো স্কুলের ছোট্ট বন্ধুরা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে দূর দূরান্তের গরিব শিশুদের জন্য টাকা জমা করে, শীতের কাপড় পাঠায়।
এরই নাম মমতা, ভালোবাসা-এক কথায় মানবতার পরিচয়।
মানুষ মানুষেরই জন্য।
সেই গুণ না থাকলে মানুষ পূর্ণ মানুষ কি হয়?
এতো গেল শীতের একদিক।
তবে শীতের মজাও কম নয়।
বিশেষ করে যাদের অভাব অনটন নেই, তারা খুব মজা করে শীতে।
দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, শীতের নানা রকম পিঠাপুলি খাওয়া, শীতের টাটকা সবজিসহ খাবার-দাবারের স্বাদই আলাদা।
বিশেষ করে টমেটো, গাজর, লাউ, কপি, শালগমসহ বহু শীতের সবজি গ্রামের মাঠঘাট ভরে দেয়।
খেজুরের রস আর রসের পায়েশ-ফিরনি ভারি মজাদার সুস্বাদু।
শহরেও আসে এসব।
তবে শীতে ব্যাডমিন্টন খেলা শিশু থেকে বড়রা পর্যন্ত সবাই পছন্দ করে।
আমন ধানের গন্ধে ভরা হেমন্তের নবান্ন উৎসব শেষ হতে না হতেই শীত আসে গ্রাম বাংলায় নতুন সবজির সজিবতা নিয়ে।
সঙ্গে আনে যাত্রাপালার আসরও!
যদি প্রয়োজনীয় খাবার আর শীতের কাপড় কেনার সাধ্য সবার থাকে, তাহলে শীতের মতো মজার ঋতু আর কয়টা আছে, বলো?
মাঠে হলুদ ধান কাটার রঙিন ছবিটি এঁকেছে পারমিতা নীলপদ্ম। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে ধানমন্ডির সাউথ ব্রিজ স্কুলে।