বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাঙরের পিঠে চড়ে বানর যে গল্পটি বলেছিল

  • কিডজোন ডেস্ক   
  • ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ১০:৩১

বানর আর হাঙরের রূপকথাটি অনেকেই হয়তো জানো! বানরটা এই সেদিনও হাঙরের পিঠে ছড়ে দুষ্টু হাঙরকে শুনিয়েছিলো মজার একটি গল্প। আফ্রিকান সেই গল্পটি নতুন করে শুনি, চলো...

অনেক অনেক আগের কথা।

এক দেশে ছিলো এক বানর।

আর এক হাঙর।

দেশটি যে আফ্রিকায় সে তোমরা জানোই!

তো আফ্রিকান এই বানরটির নাম ছিলো কিমা।

আর হাঙরের নাম পাপা।

দু'জনের খুবই ভাব।

হাঙর যে সাগরে থাকতো সেই সাগরের তীর ঘেঁষে ছিলো বিশাল বড় এক কুউ গাছ।

গাছটির অর্ধেক ছিলো পানিতে আর অর্ধেক ডাঙায়।

সেই গাছটিতেই থাকতো বানর।

প্রতিদিন সকালে বানর নাশতা করে কুউ ফল দিয়ে।

সেই সময় হাঙর গাছের তলায় এসে বলে, 'বন্ধু, আমাকে কিছু ফল দাও না; বড্ড খিদে পেয়েছে।'

বানর গাছ থেকে ফল ফেলে।

হাঙর খুব মজা করে খায় সেই ফল।

এভাবে বেশ কয়েক মাস চলার পর কিমা নামের হাঙরটি বানরকে বললো, 'কিমা, তুমি আমাকে অনেক দয়া দেখিয়েছো।

এখন আমার বাড়িতে চলো।

প্রতিদানে আমি তোমাকে কিছু দিতে চাই।'

বানর বলে, 'কীভাবে যাবো?

আমরা ডাঙার প্রাণীরা যে পানি দিয়ে চলতে পারি না।'

'সে তোমাকে ভাবতে হবে না।

আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।

এক ফোঁটা পানিও তোমায় ছুঁতে পারবে না'

উত্তর দিলো হাঙর।

তারপরের ঘটনাটা তো জানোই।

তো হয়েছে কী, সেদিন বানরটি কূলে এসে হাঙরটিকে শোনালো ধোপার গাধার গল্প।

বানরের সেই গল্পটিই আজ শুনবো।

হাঙর শুরুতেই প্রশ্ন করলো, 'ধোপার গাধা কিগো ভাই?'

বানর বললো, 'এটি এমন একটি প্রাণী, যার কলিজা আর কান- দুটোই নেই।'

'মজার ব্যাপার তো বন্ধু।

বলো না সেই ধোপার গাধার গল্পটা।'

উৎসাহের সঙ্গে বললো হাঙর।

বানর গল্পটি বলা শুরু করলো বেশ রসিয়ে রসিয়ে।

গল্পটি ছিলো এমন-

এক ধোপার ছিলো একটি গাধা।

গাধাটিকে সে দারুণ ভালোবাসতো।

একদিন ধোপার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে চলে গেলো গভীর জঙ্গলে।

কোনো কাজ নেই তার।

শুধু খাওয়া আর ঘুমানো।

আস্তে আস্তে বেশ মোটা হয়ে গেলো সে।

সেই বনে ছিলো একটি খরগোশ।

তার নাম ছিল সুংগুরা।

আর গাধাটির নাম ছিলো বেশ মজার।

তার নাম ছিলো পুন্ডা।

সুংগুরা নামের খরগোশটি একদিন বনের ভেতর দিয়ে চলছে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল পুন্ডা নামের সেই গাধাটি।

খরগোশ পশুদের মধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত।

যদি তুমি তার মুখের দিকে তাকাও, তবে তুমি দেখবে- সে নিজের মনে কিছু না কিছু বলছে।

পুন্ডাকে দেখে খরগোশ বললো, 'বাব্বা! কী নাদুসনুদুস গাধা! যাই সিংহকে এই সুখবরটি দিয়ে আসি।'

পুন্ডা সিংহকে বললো, 'কাল আমি তোমার জন্য অনেক মাংস আনবো সিংহ মামা।

কাল দারুণ একটি ভোজ হবে আমাদের।

তবে সেটিকে শিকার করার কাজটি যে তোমাকেই করতে হবে মামা।'

'তাই হবে ভাগ্নে। তুমি অনেক দয়ালু'

-সিংহ বললো।

সিংহের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খরগোশটি আবার গাধার কাছে এলো।

গাধাকে সে বিনয়ের সঙ্গে বললো, 'মিস পুন্ডা, আর কতোদিন তুমি একা থাকবে?

তোমার জন্য আমি একটা পাত্র ঠিক করেছি।'

'কে সেই পাত্র?'

বোকার মতো হি হি করে হাসতে হাসতে জানতে চাইলো গাধা।

'সিম্বা।

সিম্বা নামের একটি সিংহের কথাই ভাবছি'

- হাসতে হাসতে জবাব দিলো খরগোশ।

খুশিতে গদগদ হয়ে গাধা বললো, 'চলো. এক্ষুণি যাওয়া যাক।'

খুব দ্রুত তারা পৌঁছে গেলো সিংহের বাড়ি।

আদরের সঙ্গে তাদের ভেতরে নিয়ে বসতে দেওয়া হলো।

সুংগুরা তার চোখের ইশারায় সিম্বাকে কী যেন বললো।

তারপর পুন্ডাকে বিনয়ের সঙ্গে বললো, 'তোমরা এখন দুই জনে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নাও।

আমি ততোক্ষণ বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি।'

দ্রুত সুংগুরা বাইরে বেরিয়ে গেলো।

সিংহ ঝাঁপিয়ে পড়লো গাধাটির ওপর।

শুরু হয়ে গেলো হাতাহাতি।

গাধা তার সব শক্তি দিয়ে সিম্বাকে মারলো লাথি।

সিম্বা পড়ে গেলে এক দৌড়ে গাধা পালিয়ে গেলো।

একটু পরেই খরগোশ ভেতরে ঢুকে বললো, 'মামা তোমার খাওয়া-দাওয়া শেষ?'

'নাহ! খেতে আর পারলাম কই!

গাধাটি আমাকে একটি লাথি মেরে দৌড়ে চলে গেলো।

আমি খুবই দুর্বল।

তার সঙ্গে শক্তিতে পারিনি'

- সিংহ কাঁপা গলায় বললো।

'ভালো কথা!

আমার এই অসুস্থতার কথা বাইরে কারও কাছে বলো না'

- সিংহ হতাশার সুরে যোগ করলো।

এরপর সিংহ আস্তে আস্তে আবার সবল হয়ে উঠলো।

এক সময় সুংগুরা সিংহকে বললো, 'মামা, এখন কি তোমার জন্য আমি মাংসের ব্যবস্থা করতে পারি?'

'অবশ্যই'

- গর্জন করে উঠলো সিংহ,

'এক্ষুণি নিয়ে এসো।

আমি গাধাটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।'

সিংহের আশকারা পেয়ে জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করলো খরগোশটি।

গাধা তাকে হাসিমুখে নিজের পাশে বসতে বললো।

জানতে চাইলো, 'কী খবর খরগোশ ভাইয়া?'

'তোমার ভালোবাসার সিংহটি তোমাকে আবার দাওয়াত দিয়েছে'

- খরগোশ বললো।

'সেদিন তুমি আমাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলে।

আমার খুবই ভয় লাগছে তার কাছে যেতে।'

- গাধা বলে এসব।

'কী যে বলো বন্ধু!

সেদিন তার মন-মেজাজ ভালো ছিলো না।

আজ আর ঝগড়া-ঝাটি হবে না'

- খরগোশ বললো।

'ঠিক বলছো তো বন্ধু? আচ্ছা, যাওয়া যাক।'

খরগোশ আর গাধা হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছে গেলো সিংহের কাছে। সিংহ সুযোগ মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো গাধার ওপর।

আর মুহুর্তেই দুই টুকরো করে ফেললো।

তারপর খরগোশকে ডেকে বললো, 'এই মাংসগুলো নিয়ে এখন ভালো করে রোষ্ট বানাও।

এক ভাগ তোমার জন্য, আর এক ভাগ আমার।

আমি খাবো এর কলিজা আর কান দুটো।'

'তাই হবে'

- বললো খরগোশ।

মাংস নিয়ে গেলো আড়ালে।

সিংহের আস্তানা থেকে দূরে।

কলিজা আর কান রাখলো লুকিয়ে।

তারপর যতোক্ষণ পারলো, পেট পুরে মাংস খেলো খরগোশ।

বাদ বাকিটুকু রেখে দিলো সযতনে।

সিংহ চলে এলো খরগোশের কাছে।

বললো, 'এক্ষুুণি কলিজা আর কান দুটো আমাকে দাও।

পেট জ্বলে যাচ্ছে আমার।'

'কোথায় পাবো কলিজা আর কান?'

- বললো খরগোশ।

'তার মানে?'

- রাগে গরগর করে উঠলো সিংহটি।

'আরে!

তুমি জানতে না যে ওই গাধাটির মালিক ছিলো একজন ধোপা'

- খরগোশ বললো।

'তাতে কলিজা আর কান দুটো আমার কাছে আনতে সমস্যা কিসের?'

- বললো সিংহ।

'শোনো সিম্বা, সে খবর নেওয়ার মতো বয়স এখনও তোমার হয়নি।

ধোপাদের গাধার কলিজা একবার দেহ থেকে বেরিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার তা আর ফিরে আসে না'

- খরগোশ বললো।

গল্পটি শেষ হতেই বানর দাঁত খিচিয়ে হাঙরকে বললো, 'তুমি এক্ষুণি আমার সামনে থেকে দূর হও।

তুমি আমাকে ধোপার গাধা বানাতে চেয়েছো, তাই না?

আর কখনও আমার সামনে আসবে না।

তোমার সঙ্গে এখানেই বন্ধুত্বের ইতি।

বিদায় পাপা!

বিদায়!'

এ বিভাগের আরো খবর