বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষ ও সাপের লড়াই

  • কিডজোন ডেস্ক   
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ২১:৪৮

এক দেশে ছিলো এক লোক।

নাম তার ডিজিদাহ।

নামটা কেমন যেন।

সে থাক।

আসল কথায় আসি।

এই ডিজিদাহ নামের লোকটা ছিলো মায়াহীন।

আর প্রাণীদের বেলায় ছিলো পুরো নির্দয়।

ডিজিদাহ বন-বাঁদারে শিকার করতো।

একদিন শিকারে গিয়ে একটা র‌্যাটেল স্নেকের দেখা পেলো।

আর ওটাকে দেখা মাত্রই পেটানোর কথা ভাবলো।

সে র‌্যাটেল স্নেকের মাথাটা মাটিতে চেপে ধরে গাছের একটুকরা বাকলে গেঁথে ফেললো।

সাপ বেচারা কষ্টে ছটফট করতে থাকলো।

সে সাপটাকে শুনিয়ে বলে কী, 'আমাদের যুদ্ধ করা উচিত।'

শুধু তাই নয়, সে সাপটাকে আগুনে ধরলো একেবারে মারা যাওয়া পর্যন্ত।

এই পাজি ডিজিদাহ লোকটা সাপ পেলেই এমন কাণ্ড করতো।

একদিন তার গ্রামের কেউ একজন বনে হাঁটতে গিয়ে উদ্ভট একটা শব্দ শুনলো।

এটা ছিলো লম্বা পাইন গাছের মাথায় বাতাস বয়ে যাওয়ার সময়ের হিস-হিস শব্দের চেয়েও তীব্র।

লোকটা হামাগুড়ি দিয়ে একেবারে শব্দের কাছাকাছি চলে গেলো।

সে দেখলো, রাজ্যের সাপ জড়ো হয়েছে।

তারা সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

লোকটা ভীত অবস্থায় তাদের বলতে শুনলো, 'ওদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করতেই হবে।

ডিজিদাহ লোকটা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছে।

তাই তার সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করা উচিত।

আগামী চার দিনের মধ্যে আমরা ওর গ্রামে যাবো আর যুদ্ধ করবো।'

লোকটা হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এক দৌড়ে গ্রামে এলো।

তারপর বনে যা দেখলো, সবাইকে বললো।

গ্রামের মোড়ল তার কথা শুনে আরও লোক পাঠালো বিষয়টা যাচাইয়ের জন্য।

তারাও ঘুরে এসে বললো, 'আসলেই ব্যাপারটা তাই।

সাপেরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।'

গ্রামের মোড়ল কোনো উপায় না দেখে বললেন, 'আমরা অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো।

তোমরা সবাই প্রস্তুত হও।'

সবাই পাহাড়ে গিয়ে কাঠ কেটে আনলেন।

আর গ্রামের চারপাশে সারি করে কাঠ জড়ো করে রাখলেন।

এমনভাবে সারি করলেন যাতে সাপেরা না ঢুকতে পারে।

চার দিন পর গ্রামের মোড়ল কাঠে আগুন লাগিয়ে দিতে বললেন।

তখনই গ্রামের মানুষ দেখে, হিস-হিস শব্দে সাপেরা গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে।

সাধারণত সাপেরা আগুনের কাছে ঘেঁষে না।

তবে এরা প্রতিশোধের জন্য জ্বলছিলো।

তাই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

অনেকে মারা গেলো।

তবু সামনে এগোতে থাকলো।

এভাবে তারা দ্বিতীয় সারির কাঠ পর্যন্ত চলে এলো।

গ্রামের মোড়ল এবার ঘোষণা দিলেন, 'দ্বিতীয় সারির কাঠে আগুন ধরিয়ে দাও।'

তাই করলো মানুষ।

তবু থামে না সাপেরা।

তারা আগুনের দিকে এগিয়ে চললো।

তারা তো যুদ্ধ করতে এসেছে।

পেছনে ফিরে যেতে চায় না কেউ-ই।

এতে তাদের অনেকেই মারা যাচ্ছিলো।

খুবই দুঃখজনক ছিলো ব্যাপারটা।

দ্বিতীয় সারিতে পৌঁছাতে গিয়ে সাপেরা ঝরা পাতার চেয়েও বেশি মারা যাচ্ছিলো।

তবু তারা থামে না।

একসময় তারা ঠিকই শেষ সারিতে পৌঁছে গেলো।

প্রথম তারা যে মানুষকে মারলো, সে হচ্ছে ডিজিদাহ।

যে একদিন শিকারে গিয়ে র‌্যাটেল স্নেককে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো।

যুদ্ধ ভয়াবহ আকার নিলো।

সবাই বুঝলো, এই যুদ্ধে কেউ-ই জিততে পারবে না।

তখন গ্রামের মোড়ল গ্রামের মাঝে চলে আসা সাপদের বললেন, 'শোনো ভাইয়েরা।

আত্মসমর্পণ করছি।

আমরা ভুল করেছি তোমাদের সঙ্গে।

আমাদের দয়া করো।'

সাপেরা যেখানে ছিলো সেখানেই থেমে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

ক্লান্ত যোদ্ধারা সাপ-বাহিনীর দিকে পিটপিট তাকালো।

আর সাপেরাও তাকালো তাদের দিকে।

ঠিক তখনই মাটি কাঁপতে কাঁপতে ফেটে গেলো তাদের সামনের একটা অংশ।

দেখলো, বিরাট একটা সাপ বেরিয়ে এলো গর্তটা থেকে।

যার মাথা একটি দশতলা বাড়ির চেয়ে বড় আর সবচেয়ে বড় পাইন গাছের চেয়েও লম্বা।

সাপটা আকাশ-পাতাল ফাটিয়ে বললো, 'শোনো, আমি সাপের নেতা।

আমরা তোমাদের শান্তিতে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো, যদি তোমারা দুটি শর্ত মেনে নাও।'

গ্রামের মোড়ল বিরাট সাপটার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললেন, 'আমরা তোমার কথায় রাজি।'

'দুটি জিনিসের একটা হলো তোমরা সাপদের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করবে।

আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যতোদিন পৃথিবী থাকবে ততোদিন কারও নাম ডিজিদাহ রাখা যাবে না।'

গ্রামের মোড়লসহ সবাই সাপ নেতার কথা মেনে নিলো।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত ডিজিদাহ ছাড়াই মানুষ তাদের সন্তানদের নাম রেখে আসছে

এ বিভাগের আরো খবর