এক গ্রামে ছিল দুই ভাই।
তারা প্রতিদিন বনে যেতো শিকার করতে।
সঙ্গে নিতো তীর-ধনুক।
এমনি করে একদিন ওরা হেঁটে হেঁটে বনের গহিনে চলে গেলো।
এদিক তাকালো, ওদিক তাকালো।
কোনো শিকারের দেখা পেলো না।
আবারও হাঁটতে থাকলো।
হাঁটতে হাঁটতে ওদের ক্ষুধা পেলো।
ভালো একটা জায়গা দেখে বসে পড়লো।
কাছের এক গাছের ডালে তাকিয়ে ভাবলো, ফল পেড়ে খাবে।
কিন্তু ওই গাছে তো ফল নেই।
ফল না থাকলে কী হবে, চোখে পড়লো সুন্দর এক কালো পাখি।
দুই ভাই ভাবলো, এই পাখিই হোক তাদের আজকের খাবার।
তীর ছুড়লো পাখির দিকে।
কাজ হলো তাতে।
থপ করে মাটিতে পড়লো পাখিটি।
সেখানে বসেই রান্না করলো দুই ভাই।
কারণ, তারা ভাবলো, এতো ছোট পাখি যে তা দিয়ে নিজেদের ক্ষুধা মেটানো হয়তো সম্ভব; কিন্তু একে বাড়ি নেয়ার মানে নেই।
আগে তো এটা খাওয়া হোক, পরে না হয় চেষ্টা করা যাবে আরও কিছু পাওয়া যায় কি-না।
এমন সময় ওদের সামনে এসে দাঁড়ালেন এক বুড়ি।
দেখেই বোঝা গেলো বুড়িমা তাদের চেয়েও ক্ষুধার্ত।
বুড়িমা তাদের বললেন, 'কিছু খাবার দেবে আমাকে?
খুব খিদে পেয়েছে।'
ওরা খাবার দেবে কোত্থেকে!
রান্না করা একটিমাত্র পাখি ওদের সম্বল।
তারপরও ওরা সেটাই দিয়ে দিলো।
বুড়িমা সেই পাখি খেয়ে খুব খুশি।
কিন্তু দুই ভাই কিছু বলছে না।
কারণ তাদের মা তাদের শিখিয়েছে বড়োদের দেখলে সম্মান করতে হবে। তাদের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে।
প্রয়োজনে নিজেদের কষ্ট হলেও বয়স্ক মানুষের উপকার করতে পিছপা হওয়া যাবে না।
তাই বুড়িমার কাছে খাবারের বিনিময়ে কিছু চাইলো না।
বুড়িমা ওদের বললেন, 'শোনো বাছা, তোমাদের জন্য পুরস্কার অপেক্ষা করছে।
তবে একটু সময় লাগবে সেই পুরস্কার পেতে।
তাই আগামীকাল এ জায়গায় আসতে ভুল করো না।'
ক্ষুধা নিয়েই বাড়ি ফিরে এলো দুই ভাই।
পরদিন ওরা আবার তীর-ধনুক নিয়ে বনে গেলো।
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালো সেখানে, যেখানে ওরা বুড়িমাকে পাখি খাইয়েছিলো।
কাছে যেতেই ওদের চোখ ছানাবড়া।
যেখানে ওরা পাখি রান্না করে ছাই ফেলে রেখেছিলো, সেখানে সুন্দর সুন্দর অনেক গাছ।
পাতাগুলো কেমন লম্বাটে, সবুজ।
ওরা আরও কাছে গেলো।
মাথাসমান একেকটি গাছ।
ও মা কী সুন্দর!
প্রতিটি গাছের মাথায় ঝুঁটির মতো একেকটি থোকা।
রঙ হলুদাভ।
ঠিক যেন কলাগাছের মোচা।
গাছ থেকে সেসব মোচা ওরা তুলে নিলো।
ছোট ছোট দানা সেসব মোচায়।
এগুলো নিয়ে এলো বাড়িতে।
কিছু ভেজে খেলো।
কিছু লাগালো বাড়ির আঙিনায়।
একসময় সেসব গাছেও মোচা হলো।
দানা হলো।
এভাবে সেসব শস্যদানা মানুষের হাতে হাতে চলে গেলো বিভিন্ন জায়গায়। মানুষ তাকে চিনলো ভুট্টা হিসেবে।
আর যে দেশে এ ঘটনাটি প্রথম ঘটেছিল, তারা তো আর একে ভুট্টা বলতো না।
তারা বলতো 'টানচি'।
আর এভাবেই আমাদের আপন হয়ে গেলো 'টানচি'।