শীতের সকাল।
রোদ ওঠেনি।
বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি।
কনকনে শীতের হাওয়া বইছে।
রাজিন থাকে দোতলায়।
আমি একতলায়।
একতলায় ওর আধিপত্য অনেক বেশি।
ঘুম থেকে উঠেই ও ছুটে একতলায় আসবে।
তারপর শুরু হবে ওর রাজত্ব।
ফ্রিজ খুলবে।
চুলার ধারে যাবে।
ম্যাচের কাঠি ঘষে আগুন জ্বালাবে।
শিশুদের না করতে নেই।
আমি রাজিনকে তাই কিছুই বলি না।
ওর খেয়াল খুশি মতো সব করুক।
আমার ‘না’ নেই।
রাজিন আমার ছোট ভাইয়ের একমাত্র ছেলে।
ও এসেই আমার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো, গুড মর্নিং কাকা।
আমিও বললাম, গুডমর্নিং।
রাজিন- তুমি কি টোকাই?
কেন? তুমি যদি টোকাইয়ের কাকা হও তবে আমি টোকাই।
না, মানে- আমি আমতা আমতা করি।
তোমার পরণে পাতলা জামা।
হাফপ্যান্ট।
শীত লাগছে না?
না।
আমার গরম লাগছে।
রাজিনের সাফ সাফ জবাব।
না রাজিন এখন বাজে শীত।
যে কোনো অসুখ বিসুখ হবে এই সময়।
তাই সাবধান।
যাও শীতের সোয়েটার বা জ্যাকেট পরে এসো।
মন সায় দিলো না রাজিনের।
অনিচ্ছায় সে দোতলা গেলো।
একটা ভারি জ্যাকেট পরে নিচে নেমে এলো।
বাহ- তোকে তো এখন ব্যাঘ্র ব্যাঘ্র লাগছে।
রাজিন চোখ নাচিয়ে বুঝাতে চাইলো, এসব বলে লাভ নেই।
তুমি আমাকে পাখি কিনে দিবা কবে?
আজকেই।
পাখি, এক্যুরিয়াম, পোষ মানা পশু এদের প্রতি অসম্ভব দরদ রাজিনের। এতো ছোটবেলায় মনের ভেতর কি করে এই আবেগ তৈরি হলো কে জানে?
যাক শীতের জ্যাকেট তাহলে পরলে?
হ্যাঁ।
নিজের ইচ্ছায় পরো নাই রাজিন।
কাকার ভয়ে পরেছো।
তাই না?
রাজিন হো হো করে হেসে উঠলো।
তুমি কি বাঘ নাকি সিংহ যে তোমাকে ভয় পাবো?
আমি নিজেই জ্যাকেট পরে আসতাম।
তাহলে আমাকে ভয় নয়?
ধুর আমি কি ডরাই।
কাকা বিশ্বাস করো, তোমাকে শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি।
অনেক ধন্যবাদ।
ওহো তুই আমাকে ভয় পাস না?
হাত নেড়ে রাজিন বললো, না।
একদম না।
তুমি কি সিংহ?
তোমাকে ভয় পাব কেন?
তুমি আমাকে ভয় পাবে।
তুমি বলেছো, শিশুদের অধিকার আগে।
রাজিনের সঙ্গে আর তর্ক হয় না।
ওকে আরও ভালোবাসতে হয়।