ভাবুকের নাম স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। ময়মনসিংহে জন্ম নেয়া এই গাছভাবুক দুনিয়া কাঁপিয়ে দেন তার উদ্ভাবন দিয়ে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন, গাছেরও প্রাণ আছে। সেই গাছ পাগলুটার কথা জেনে নিই, চলো...
কখনও ঘরের দরজায় বসে থাকেন আনমনে।
কখনও হাঁটেন পথে-ঘাটে-ঝোপের পাশে।
ঘরের দরজায় বসে তাকান উঠোনের পাশের বড় গাছটার দিকে।
পাতা ঝরে গেছে গাছের। সেই গাছের গায়ে স্টেথোস্কোপ লাগান।
একি!
নিরেট গাছের ভেতর শো শো আওয়াজ।
তিনি জায়গা বদল করেন।
নানা জায়গায় স্টেথোস্কোপ রাখেন।
আওয়াজের তারতম্য ঘটে।
অবাক কাণ্ড।
সেই ছেলেবেলায় ডাক্তার-রোগী খেলতে গিয়েই গাছের মায়ায় পড়েন তিনি। সেই থেকে প্রকৃতি তাকে পোষ মানায়।
তাই গাছগাছালি ছাড়া সুন্দর কিছুই তার চোখে পড়ে না।
বন্ধুত্ব পাতেন গাছের সঙ্গে।
তারপর বড় হয়ে একদিন বলেন, ‘আমরা যেরূপ আহার করি, গাছও সেরূপ আহার করে... গাছের গোড়ায় জল না দিলে গাছের আহার বন্ধ হইয়া যায়, ও গাছ মরিয়া যায়।’
গাছ ভাবুক সেই বিজ্ঞানীর কাছ থেকেই বিশ্ববাসী জানল যে, গাছেরও প্রাণ আছে। শুধু তাই নয়, তিনি এই ভাবনাটা প্রমাণ করেও দেখিয়েছেন।
নানান যন্ত্রপাতি নিয়ে খুটুর-খাটুর করে আবিষ্কার করেন নানা পদ্ধতি।
তার মজার এক আবিষ্কার হচ্ছে উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার রেকর্ড যন্ত্র।
যেই যন্ত্রকে মানুষ জানে ক্রেস্কোগ্রাফ হিসেবে।
তোমরা কাউকে ঘুম থেকে জাগাতে বা কখনও কারও দৃষ্টি তোমার দিকে ফেরাতে গায়ে হাত দিয়ে যেমন ‘এই’ বলো।
এই ‘এই’ বলাতে সেই মানুষটি যেমন সম্বিৎ ফিরে পায়; তোমার দিকে তাকায়, তেমনি ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে মানুষের মতো করে গাছের গায়ে হাত রাখলে সেও সম্বিৎ ফিরে পায়।
যারা ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্র হাতের কাছে পাওনি, তারা চাইলে এই যন্ত্র ছাড়াও গাছের সম্বিৎ ফিরে পাওয়াটা পরীক্ষা করতে পার।
কীভাবে করবে তা বলে দিচ্ছি। শোনো, লজ্জাবতী লতা তো তোমরা চেনো।
সেই লজ্জাবতী লতার কাছে গিয়ে তার গায়ে হাত রাখলেই দেখবে সে নিজেকে কেমন গুটিয়ে নেয়।
ঠিক লজ্জাবতীর মতো সব গাছই গায়ে হাত রাখলে বুঝতে পারে।
কিন্তু সেটা আমরা চোখে দেখি না।
দেখি শুধু লজ্জাবতীরটা।
এ ছাড়া তিনি ঘুম, বাতাস, খাদ্য ও ওষুধ এসবের প্রভাব প্রদর্শনের যন্ত্রপাতিও উদ্ভাবন করেন।
তিনি পর্যায়ভিত্তিক গবেষণা করেন। সেই গবেষণাগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ, জৈব ও অজৈব পদার্থের উত্তেজনার প্রতি সাড়া প্রদানের সমতা এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর পেশির তুলনামূলক শরীরবৃত্ত।
গাছের এই বন্ধু বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ইংল্যান্ড থেকে নাইট উপাধি পেয়েছিলেন।
তারপর হয়ে যান স্যার।
মানে তাকে ডাকতে গেলে বলতে হতো স্যার।
তবে তিনি শিক্ষকতা করেছেন অনেক দিন।
পড়াশোনা শেষ করে ১৮৮৫ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ানো শুরু করেন।
সেই কলেজে থেকে অবসর নেন ১৯১৬ সালে।
আর তিনি পড়াশোনা শুরু করেন আমাদের ফরিদপুরের গ্রামীণ বিদ্যালয়ে। তারপর ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজে।
সেখান থেকে ১৮৮০ সালে বিএ পাস করার পর ওই বছরেই উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান।
১৮৮০ থেকে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানকার ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি সম্মানসূচক ডিএসসি উপাধিতে ভূষিত হন।
প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি ১৯০২ সালে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য হন।
১৯১৭ সালে এসে গাছের এই বিজ্ঞানী বন্ধু ‘জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন।
সারাজীবন তিনি এতে গবেষণা করেই কাটিয়ে দেন।
গাছের এই পরম বন্ধুটির নাম স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু।
তিনি দুনিয়াজুড়ে পদার্থ বিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানী নামেই পরিচিত।
১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর গাছের এই বন্ধুটি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
তবে যারা তাকে চেনে, যারা গাছপাগল, তারা গাছের দিকে তাকালে ঠিকই তাকে দেখতে পায়। চাইলে তুমিও তাকে বন-বাদাড়ে কিংবা তোমার টবের গাছে দেখতে পাবে।