আমার বেড়ে ওঠা গ্রামে। গ্রামের মানুষের অনেক বুদ্ধি। ছোটদের তো আরও বেশি। তবে আমি কিন্তু তোমাদের মতো অত বুদ্ধিমান ছিলাম না। বোকা-সোকা ছিলাম।
সাধাসিধে বলে একটা কথা আছে না; এই সাধাসিধে আর কি! আবার হাবাগোবাও ছিলাম। সবাই শুধু কাজের ফুট-ফরমায়েশে আমায় খাটাতে চাইতো।
ইশকুলে সহপাঠীরা মারলেও কিছু বলার সাহস পেতাম না। একদিন বাবা আমাকে বললেন, 'তোকে তো স্কুলে ভর্তি করতে হবে।' তো এই বলে আমায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
এর কিছুদিন পর তিনি কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আর ফিরে আসেননি। বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি ছেড়ে আমি মামার বাড়ি চলে যাই। নতুন স্কুলে ভর্তি হই।
মামি আমার নাম দিলেন 'সুকুমোল।' মামির দেওয়া সেই নামকে আমি পরে করেছি সুকুমার। তা ছাড়া সুনীল, অনীল, নোয়ামিয়া এবং বিলাতিসহ অনেক নাম ছিলো। গ্রামের মানুষরা এখনও বিলাতি ডাকে আমায়।
আমি তিনটা স্কুলে পড়েছি। তাও আড়াই ক্লাস। মামার বাড়ি ও দিদির বাড়ির স্কুলে পড়ে সবশেষে ভর্তি হয়েছি পশ্চিম বিনাজুড়ির সোনাইমুখ উচ্চ বিদ্যালয়ে।
স্কুলে আমার অনেক বন্ধু ছিলো। তাদের ডাকতাম আঞ্চলিক ভাষায়। এই ধরো, সাহজানকে সাইজ্যা, খলিলকে খইল্যা-এমন আর কত কী! তোমরা আবার কাউকে এমন নামে ডেকো না। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি; এমন নামে কাউকে ডাকা ঠিক নয়।
আমি ছোটবেলা থেকেই লেখার চেষ্টা করতাম। আমার প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পর তো অনেকে বিশ্বাসই করলো না।
সত্যিকথা বলতে কী, বাবাকে হারানোর কিছুদিন পর তো আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। বাসা-বাড়িতে কাজ নিই। তারপর খুবই কষ্টে চলতে থাকে আমার জীবন।
তখন আমি মসলা বাটতে বাটতে ছড়া নিয়ে চিন্তা করতাম। দুই লাইন মাথায় এলে হাত ধুয়ে তা লিখে আবার মসলা-মরিচ এসব বাটতাম। এমন ঘটনা আমার জীবনে অনেক হয়েছে। যা কখনও লেখা হয়নি।
প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পর আমার মুনিব বাহ বাহ দিলেন। মানে আমি যেখানে কাজ করতাম সেই মালিকের কথা বলছি আর কি!তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন।
আর আমার অনুভূতি তো প্রকাশ করার মতো না। আসলে বোকা-সোকা ছিলাম তো তাই অল্পতেই খুশি হয়ে যেতাম।
তোমরা তো অনেক বুদ্ধিমান। তবে তোমাদের চিন্তা করতে হবে বেশি। শুধু টিভি, ভিডিও গেমস, কম্পিউটারে পড়ে থাকলে চলবে না। বাস্তবতা নিয়ে, দেশ নিয়েও ছোট ছোট করে চিন্তা করা শিখতে হবে। শুধু চিন্তাই নয়, এর পাশাপাশি ভালো কাজের উদ্যোগও নিতে হবে।
ভালো থেকো সবাই। কিড জোন-এর জন্য শুভ কামনা।