যে বোকার মতো অঙ্গভঙ্গি বা রসিকতা করে মানুষজন হাসায় সেই ক্লাউন। ক্লাউনেরা মানুষ হাসায় হাজার বছর ধরে।
চার হাজার বছর আগে চীন শি হুয়াং-তি চিউ নামে এক রাজা ছিলেন। রাজাকে মজা দেয়ার জন্য ছিলেন এক বোকা মানুষ। আজব পোশাক আর সাজ দিয়ে নানান অঙ্গভঙ্গি করে রাজাকে হাসাতেন তিনি। তার নাম ছিলো ইউসজে। খ্রিষ্টের জন্মের ২৪০০ বছর আগে মিশরেও ছিলো ক্লাউন। তারাও মানুষ হাসাতেন। তখন ক্লাউনের পাশাপাশি গির্জার যাজক হিসেবেও কাজ করতে হতো তাদের। প্রাচীন গ্রিস আর রোমেও ছিলো ক্লাউন। হাস্যকর অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি ছোটখাট জাদুও দেখাতেন তারা।
এককালে ক্লাউনেরা কেবল রাজাদেরই হাসাতেন। এখনও ক্লাউনদের বোকামি আর মজাদার কাজ দেখে হাসতে পারো। তবে এজন্য যেতে হবে সার্কাস বা যাত্রাপালায়। এমনকি সিনেমাতেও ক্লাউনদের দেখা মেলে।
দুনিয়াখ্যাত এক অভিনেতা তো ক্লাউন হিসেবেই বিখ্যাত। নাম তার চার্লি চাপলিন। এমন বিখ্যাত ক্লাউন আরো আছে।
জোসেফ গ্রিমাল্ডি, লরেল অ্যান্ড হার্ডি, বুস্টার কিটন। জোসেফ গ্রিমাল্ডি ছিলেন সাদামুখো বিখ্যাত ক্লাউন। ভাবছো, ক্লাউনদের আবার সাদামুখ কালোমুখ আছে নাকি?
ক্লাউনদের প্রধান তিনটি ভাগ আছে। সাদামুখো ক্লাউন, অগাস্তে ক্লাউন আর ক্যারেক্টার ক্লাউন।
সবচেয়ে পুরনো আর সবচেয়ে মর্যাদা পান সাদামুখো ক্লাউন।মজা দেখানোর সময় এদের মুখে সাদা রঙ করা থাকে। মঞ্চে হয়তো দেখা গেলো পিয়ানো থেকে বসার টুলটা বেশ দূরে।
সাদামুখো ক্লাউন কিন্তু টুলটাকে টেনে পিয়ানোর কাছে আনবে না, বরং ভারী পিয়ানোকে টেনে হালকা টুলের কাছে নিয়ে যাবে।১৮৬০ সালের দিকে ক্লাউনদের জগতে যোগ দিলো অন্য রকম এক ক্লাউন। বড়োসড়ো নাক, বিশাল সাইজের পোশাক আর জুতো পরে এরা হাজির হতে লাগলো মঞ্চে। তবে একা নয়। সাদামুখো ক্লাউনদের সঙ্গে।
সাদামুখো ক্লাউনেরা কিছু একটা করতে গেলেই এরা গড়বড় করে দেয়। এরাই হচ্ছে অগাস্তে ক্লাউন। এদের মুখে থাকে নানা রঙের প্রলেপ। সাজপোশাকও বেশ ঝকমকে। জার্মান ভাষায় অগাস্তে মানে হচ্ছে বোকা। সেখান থেকেই নাম দেয়া হয়েছে এ গোত্রের ক্লাউনদের। ক্লাউনদের মধ্যে সবচেয়ে বোকাসোকা গোছের অগাস্তেরা। নামের সঙ্গে কাজের মিল না থাকলে কি চলে? আলবার্ট ফ্র্যাতেলিনি এবং লও জ্যাকবস ছিলেন অগাস্তে ক্লাউনদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।ক্যারেক্টার ক্লাউনেরা একেবারেই ভিন্ন। তারা বিভিন্ন চরিত্রের মজাদার ও হাস্যকর দিকগুলো আরো মজার ও হাস্যকর করে উপস্থাপন করেন।
যেমন পুলিশ অফিসার, নারী, শিশু, বিক্রেতা, মুচি ইত্যাদি নানান চরিত্র। এদের পরনে থাকে জীর্ণশীর্ণ পোশাক, ছেঁড়া টুপি আর একটা লাল নাক। এদের সাজসজ্জাও হয় বেশ অস্বস্তিকর। ‘লিটল ট্র্যাম্প’ নামের সিনেমাতে চার্লি চাপলিন ছিলেন এমনই এক ক্যারেক্টার ক্লাউন।
হাসপাতালে রোগীদের সুস্থ করার জন্যও কিছু ডাক্তার ক্লাউনের মতো আচরণ করতেন। এ নিয়ে ‘প্যাচ অ্যাডামস’ নামে একটা সিনেমাও হয়েছে। ১৯৮৭ সালে নিউ ইয়র্কে ক্লাউন কেয়ার ইউনিট গঠন করে ‘বিগ অ্যাপল সার্কাস’। উদ্দেশ্য, হাসপাতালের রোগীদের হাসিয়ে সুস্থ করে তোলা। এখন তো যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং, বেলারুশিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ব্রাজিল, কানাডাসহ দুনিয়ার অনেক দেশের হাসপাতালেই রয়েছে ক্লাউনিং।
কিছুদিন আগে নেপালেও হয়েছে। এমনকি মেডিকেল ক্লাউনের ওপর লেখাপড়ার ব্যবস্থাও আছে দুনিয়ার অনেক দেশে। কাজেই সাধারণ মানুষকে সুস্থ রাখতে ক্লাউনেরা ভীষণ পরিশ্রম করে।
ক্লাউনদের জন্য বছরের একটা দিন নির্দিষ্ট আছে অনেক দেশে। এর শুরুটাও কিন্তু চীন থেকে।
ওই যে, রাজা শি হুয়াং-তি চিউ বছরের একটা দিন ক্লাউনদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন চার হাজার বছর আগে। এখন পেরু, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, নরওয়েতে পালন হয় ‘ক্লাউনস ডে’। কেবল কি দিবস? ক্লাউনদের জন্য একটা অলিম্পিকেরও ব্যবস্থা আছে। প্রতিবছর মেক্সিকো সিটিতে হয় ‘ক্লাউন অলিম্পিক’।
যদিও ক্লাউন অলিম্পিকের এ আসরে এখন কেবল মেক্সিকোর ক্লাউনেরাই অংশ নেয়। একদিন হয়ত দেখবে, এটি অন্তর্জাতিক ক্লাউন অলিম্পিক হয়ে গেছে। তুমিও প্রস্তুতি নাও সেদিনের জন্য।
আর পরিবারের যে কারও মন খারাপ হলে তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারো ছোট্টমোট্ট ক্লাউন সেজে।তো শুরু হয়ে যাক রঙ মেখে ঢঙ দেখানোর প্রস্তুতি!