অনেকের ধারণা শুধু মানুষই সংখ্যা ব্যবহারে পারদর্শী। তারা হয়তো জানেন না, প্রাণিজগতে অনেক প্রজাতি রয়েছে যাদের আছে গণনার ক্ষমতা।
গত কয়েক দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, মানুষের সংখ্যা ব্যবহারের সঙ্গে গভীর যোগ জৈবিক উত্তরাধিকারের। এর সঙ্গে ভাষা প্রয়োগ ক্ষমতার সম্পর্ক নেই।
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ সংখ্যাগত তথ্যের ব্যবহার করে। এ থেকে মনে হয় সংখ্যা ছাড়া জীবন কল্পনাতীত।
এখন প্রশ্ন হলো, মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের সংখ্যা বোঝার প্রয়োজন কেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রাণীর টিকে থাকার জন্যই সংখ্যা বোঝার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আচরণগত এই বৈশিষ্ট্যটি রয়েছে অনেক প্রাণীর।
খাদ্যের উৎস খোঁজা, শিকার, আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা, আবাসভূমির মধ্যে পথ নির্ধারণ ও নিজেদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে প্রাণীদের সহায়তা করে সংখ্যার ধারণা।
গবেষণায় দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়ার মতো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এককোষী আণুবীক্ষণিক জীবও সংখ্যাভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেকে ভেঙে অনেক গুণ করে।
সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া ভিব্রিও ফিশেরি জোনাকির মতো ‘বায়োলুমিনিসেন্স’ প্রক্রিয়ায় নিজেদের শরীর থেকে আলো সৃষ্টি করতে পারে।পাতলা পানির দ্রবণে তাদের বৃদ্ধি একটা বিশেষ সংখ্যায় পৌঁছালে একসঙ্গে আলো ছড়াতে থাকে।
'কোরাম' হলেই ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজেদের উপস্থিতি টের পায়। তখন একত্রে আলো ছড়াতে থাকে এগুলো। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন 'কোরাম সেন্সিং'।
কলোনি একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোরামে পৌঁছালে জাপানি পিঁপড়ারা (যার বৈজ্ঞানিক নাম মায়ার্মেসিনা নিপ্পনিকা) নতুন জায়গায় বসতি স্থাপন করে। নির্দিষ্টসংখ্যক পিঁপড়ার বসতি থাকলেই তারা নতুন জায়গাটিকে বসবাসের জন্য নিরাপদ মনে করে।
কখন কোন প্রাণী শিকার করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী নেকড়ের দলের সদস্য সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একটা এল্ক শিকারে সাফল্য পেতে নেকড়ের পালে দুই থেকে ছয় সদস্য থাকতে হবে।
শিম্পাঞ্জিরা যখন অন্য শিম্পাঞ্জিদের ডাক শোনে, তখন তারা নিজ দলের তুলনায় প্রতিপক্ষের শক্তি কতটা, তা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বোঝা যায়, শিম্পাঞ্জিদের দলটি যদি মনে করে প্রতিপক্ষের তুলনায় তাদের সদস্য সংখ্যা অন্তত দেড় গুণ বেশি, তাহলেই তারা যুদ্ধে আগ্রহী হয়।
কাউবার্ড
ডিম থেকে সফলভাবে বাচ্চা ফোটাতে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয় কাউবার্ড নামের পাখি।
গবেষকরা দেখেছেন, কাউবার্ডরা প্রতিবেশী পাখিগুলো কখন ডিম দিচ্ছে, তার ওপর নজর রাখে। পাখিটি সময় হিসাব করে, সুযোগ বুঝে, অন্য পাখিদের বাসায় ডিম পেড়ে আসে। এর মধ্য দিয়ে অন্য পাখির বাচ্চা ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ডিম ফোটা নিশ্চিত করে পাখিটি।
সূত্র: বিবিসি