চিত্রকর্মটি বেশ পুরোনো। গড়পড়তা চোখে দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী, ভয়ংকরদর্শী মানুষের মাথায় চেপে বসেছে ভিনগ্রহী কোনো বস্তু। তবে ঝানু চোখের রায় হবে ভিন্ন। খুঁটিয়ে দেখলে তিনি ঠিকই বুঝবেন, ছবিটি যেনতেন কিছু নয়। কারণ, এর আঁকিয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি।সালভাদর দালির ওই চিত্রকর্ম গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। নামী শিল্পী, তাই দামটাও আকাশছোঁয়া। পরিচয় প্রকাশ না করা কেউ একজন সেটি কিনে নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০০ পাউন্ডে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। অবাক করা বিষয় হলো- চিত্রকর্মটি মাত্র ১৫০ পাউন্ডে (২৪ হাজার টাকা) কিনেছিলেন জন রাসেল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি।জন রাসেল একজন শিল্পকর্ম বিক্রেতা। তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে একটি বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছিল। সেখানেই ওই চিত্রকর্ম এক চোখ দেখার সুযোগ পান রাসেল। চিত্রকর্মের এক কোণে ছিল দালির স্বাক্ষর। আর পেছনে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর স্টিকার।‘এটি হয়তো নকল’- ঠিক এ কথাই প্রথম মাথায় এসেছিল রাসেলের। তবে একটু ঝুঁকি নিতে দোষ কী? যদি ভাগ্য খুলে যায়। চিত্রকর্মটির দরাদরি শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে আরও একজন দরদাম করছিলেন। তবে রাসেল হুট করে ১৫০ পাউন্ড বলার পর ওই ব্যক্তি আর আগে বাড়েননি। রাসেলের কথায়, ‘জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে।’
চিত্রকর্মটি যে আসল, তা পরে যাচাই করে বোঝা যায়। এটি আসলে একজন ‘বৃদ্ধ সুলতানের’ ছবি। তিনি আরব্য রজনীর একটি চরিত্র। ১৯৬৬ সালে আরবের এই রূপকথা নিয়ে ৫০০ ছবির এক সিরিজ আঁকতে চেয়েছিলেন সালভাদর দালি। সুলতানের চিত্রকর্মটি তারই একটি অংশ। কোনো কারণে চিত্রকর্মটি সিরিজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
চিত্রকর্মটি কেনার পর রাসেলের অবশ্য আরও কিছু খরচ হয়েছিল। সেটি আসল কি না, যাচাই করতে পকেট থেকে বের হয়েছিল ৪ হাজার পাউন্ড। তবে কেমব্রিজের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান চেফিন্জ-এ যখন চূড়ান্ত দামটা হাঁকা হলো তখন রাসেলের মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘চাঁদকে ছাড়িয়ে’ গেছেন। তার একটাই কথা- ‘এটি ছিল অসাধারণ।’চিত্রকর্মে ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদ’ ধারার জন্য সালভাদর দালির খ্যাতি রয়েছে। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলোর কয়েকটি হলো- ‘দ্য পারসিসট্যান্স অব মেমোরি’, ‘দ্য এলিফেন্টস’, ‘দ্য বার্নিং জিরাফ’ ও ‘মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস’। ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান