গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ‘ইয়েলো লাইন’-এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনুযায়ী নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বরং ইসরায়েলই একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল
বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এরই মধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। হামাস বলছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত’ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হামাস জানিয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তরে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হবে। গাজার মধ্যে এখনো বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যুদ্ধবিরতির পরেও বন্ধ গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফা ক্রসিং
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ‘লাইফলাইন’ খ্যাত রাফা ক্রসিং। গাজার শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মিসর সীমান্তে অবস্থিত এ চেকপোস্টটি মাত্র ৩০০ মিটারের একটি রাস্তা। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ত্রাণ পৌছানোর প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এ রাফা ক্রসিং।
হামাসের ওপর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর এ পথটি বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাফা ক্রসিং।
কার্যালয়ের বরাত দিয়ে দ্য নাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে হামাস কতটা তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। বন্দিদের ফিরানো এবং মৃতদেহ হস্তান্তরসহ সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করে রাফা ক্রসিং খোলা হবে।
গাজার মধ্যে এখনও বন্দি ও মৃতদেহ ফেরতের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফা ক্রসিং পুনরায় খোলার সঙ্গে সব মৃতদেহের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
এর আগে নয় মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত সময়ের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। তখন যে পরিমান ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল তা হটে দেয়নি ইসরায়েল। এছাড়া তখন ছয় হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা করতে দেয়নি ইসরাইয়েল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচার হামলা ও গণহত্যার কারণে গাজায় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয়।
গাজায় ফের হামলা শুরু করতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ একাধিক মন্ত্রী গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার আল জাজিরা জানিয়েছে, বেন-গভির এক্স-পোস্টে বলেন, তিনি চান ইসরায়েলি বাহিনী ‘সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করুক’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ সকালে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মন্ত্রীদের এ বক্তব্য এলো।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এক্স-পোস্টে একটি শব্দ লিখে একই ইঙ্গিত দিছেন: ‘যুদ্ধ!’
প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেন, ‘যতদিন হামাস থাকবে, যুদ্ধ থাকবেই।’
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য আভি ডিচটার পরিস্থিতিকে ‘কঠিন ও জটিল’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সমস্ত জীবিত জিম্মিরা আমাদের হাতে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে হাল ছাড়বে না।
দীর্ঘদিনের গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে কয়েকদিন আগে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে হামাস ও ইসরায়েল। তবে কয়েকদিন না গড়াতেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।