গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান জাতিগত নিধন অভিযানের মধ্যেই গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট ১ লাখ ১০ হাজার বুলেট সরাবরাহ করা হয়েছে। চ্যানেল ৪-এর একটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আনাদোলু এই খবর দিয়েছে।এই চালানের মূল্য প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২৭ হাজার ডলার)। ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধির একটি নমুনা হচ্ছে এটি। এই আগস্টে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট চালানের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের বেশি, যা মাসিক হিসেবে ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।প্রতিবেদন অনুসারে, একটি চালানের মাধ্যমে পাওয়া পণ্যগুলোকে ইসরায়েলের কাস্টমস কোডবুকে ‘বুলেট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।সেই মাসে অন্যান্য চালানের মধ্যে ছিল ‘ট্যাংকের’ যন্ত্রাংশ, ‘শটগান বা রাইফেলের’ যন্ত্রাংশ। আরও ছিল বিস্তৃত ‘অন্যান্য’ বিভাগ। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত ছিল।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৪ লাখ পাউন্ড মূল্যের গোলাবারুদ ইসরায়েলি কাস্টমস দিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছে। গত তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এক মাসে ওই চালান ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।’যুক্তরাজ্য সরকার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছিল, তারা ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির ২৯টি লাইসেন্স স্থগিত করেছে। এসব অস্ত্র ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হতে পারে।’তবে যুক্তরাজ্যে এখনো প্রায় ৩৫০টি লাইসেন্স সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে ১৬০টির বেশি ‘সামরিক’ লাইসেন্স হিসেবে তালিকাভুক্ত।সে সময় সরকার বলেছিল, তারা ‘গাজায় বর্তমান সংঘাতে ব্যবহৃত হয় এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে যায়’ এমন পণ্যের বিক্রি আটকে দিচ্ছে।এই প্রতিবেদনটি এমন এক দিনে প্রকাশিত হয়েছে, যার ঠিক আগের দিন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের অস্ত্র রপ্তানি জাতিসংঘের জাতিগত নিধনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে এই উপত্যকাটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।এদিকে গাজায় গণহত্যা যুদ্ধের কারণে ইউরোপজুড়ে তীব্র আলোড়নের মুখে জার্মান সরকার ইসরায়েলের ওপর আংশিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে লোক দেখানো এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আবারও ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের সংসদীয় তদন্তের জবাবে জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে অস্ত্র রপ্তানির মূল্য কমপক্ষে ২.৮৯ মিলিয়ন ডলার।ডাই লিংক দলের আইনপ্রণেতা লিয়া রেইসনার আবারও অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্স প্রদানের জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।তিনি বলেন, জার্মান সরকার ইসরায়েলের জন্য লাখ লাখ ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম অনুমোদন করছে। অথচ সরবরাহ স্থগিতের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।তার মতে, এই অল্প সময়ের তথাকথিত ‘ফ্রিজ’ সম্পূর্ণরূপে চোখের পলক ফেলার জন্য। যেকোনো সময় ইচ্ছামতো এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।৮ আগস্ট চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ একটি আদেশ জারি করেন, যার মাধ্যমে গাজা সংঘাতে ব্যবহৃত হতে পারে- এমন সামরিক সরঞ্জাম আপাতত ইসরায়েলে সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয়।গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধে বার্লিনের সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জার্মানিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে।চলতি সপ্তাহের শুরুতে জার্মানির রাজধানীতে ১ লাখেরও বেশি মানুষ সমাবেশ করে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানায়।
গাজায় জাতিগত নিধনের মধ্যেই এক মাসে ইসরায়েলে ১ লাখ বুলেট পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য
এ বিভাগের আরো খবর/p>