বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে যা আছে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:০০

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত সসোমবার হোয়াইট হাউস থেকে এ প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। এটি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে থামাতে পারে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস।

যদি উভয় পক্ষ এই পরিকল্পনা বা প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। এর ফলে গাজায় বন্দি থাকা জীবিত ও নিহতদের মরদেহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া গাজা অস্থায়ীভাবে একটি ফিলিস্তিনি সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েল গাজাকে অধিগ্রহণ করবে না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি হামাস। হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, গাজায় শান্তি পরিকল্পনার ট্রাম্পের লিখিত প্রস্তাব তারা এখনো পাননি।

ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব-

১. গাজা উগ্রবাদমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা হবে, যা এর প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি তৈরি করবে না।

২. গাজার জনগণের কল্যাণের জন্য গাজা পুনর্গঠিত হবে, যারা যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছেন।

৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিক শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী বন্দি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য নির্ধারিত সীমান্তে প্রত্যাহার করবে। এই সময়ে সব সামরিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে বায়ু ও আর্টিলারি হামলা।

৪. এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের সব বন্দি, জীবিত ও মৃতদেহ ফেরত পাঠাতে হবে।

৫. সব বন্দি মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দিসহ এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক হন। এর মধ্যে নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিলে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।

৬. বন্দিদের ফেরত দেওয়ার পর হামাসের যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি হবে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এছাড়া হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চান তাদের নিরাপদভাবে গন্তব্য দেশে যেতে দেওয়া হবে।

৭. এই চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে পাঠানো হবে। যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোর পুনর্বাসন, হাসপাতাল ও বেকারি পুনর্গঠন, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ব্যবস্থা।

৮. গাজায় মানবিক সহায়তা জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেগুলো উভয় পক্ষের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত নয়। রাফাহ ক্রসিং খোলা থাকবে, যে বিষয়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি চুক্তি হয়েছিল।

৯. গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এই কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে, এর মধ্যে থাকবেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।

১০. গাজা পুনর্গঠনে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এতে এমন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করা হবে যারা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু উন্নত ও সমৃদ্ধ শহরের সূচনা করেছিলেন।

১১. গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি করা হবে।

১২. গাজা থেকে কাউকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হবে না। তবে যারা যেতে চান তারা নিজের ইচ্ছায় যেতে পারবেন এবং ফিরে আসতেও পারবেন।

১৩. হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনে সরাসরি, পরোক্ষভাবে বা কোনোভাবে অংশ নেবে না বলে সম্মত হয়েছে। সব সামরিক, সন্ত্রাস ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। নতুন গাজা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলায় এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা এ বিষয় নিশ্চিত করবে যে, হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী প্রতিবেশী দেশ বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না।

১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গড়ে তোলার জন্য, যা অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন হবে। আইএসএফ গাজার ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সহায়তা করবে। এই বাহিনী গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কাজ করবে। ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলিতভাবে সীমান্ত এলাকায়ও কাজ করবে এই বাহিনী।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা অধিগ্রহণ করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের দখল করা গাজা এলাকা ধাপে ধাপে আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করবে।

১৭. যদি হামাস এই প্রস্তাব বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো সেই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে- যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে।

১৮. ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হবে, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতার পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায়।

১৯. এসব উদ্যোগে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে। ফিলিস্তিনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যা স্বীকৃতি দেয়।

২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এ পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমঝোতায় তৈরি এই পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি ও অন্তত দুই ডজন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া এবং এর বিনিময়ে শত শত বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ আছে, যদিও নেতানিয়াহু পরবর্তীতে তা নাকচ করেছেন।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একে ‘ঐতিহাসিক শান্তির দিন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, হামাস পরিকল্পনা না মানলে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।

নেতানিয়াহুও বলেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’। পরে ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে ধাপে ধাপে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধের অবসান, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং বন্দি বিনিময়ে তারা কাজ চালিয়ে যাবে।

এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, এই চুক্তি ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ তৈরি করবে, যেখানে গাজা ও পশ্চিম তীর মিলিত হয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করবে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে উৎসাহিত করেছে। তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে এ চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাস এখনই অস্ত্র ফেলে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে কষ্টের অবসান ঘটানো উচিত।

এ বিভাগের আরো খবর