বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা, এক দিনে নিহত আরও ৮৩

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২০:৩০

গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক দিনেই অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আরও কমপক্ষে ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জনই গাজা সিটির। সেখানে বড় ধরনের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরেও আগ্রাসন বন্ধ হচ্ছে না। খবর আল জাজিরার।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার লাখো বাসিন্দাকে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের জনবহুল শরণার্থী শিবিরে ঠেলে দিতে ‘চরম চাপ’ প্রয়োগ করছে।

কাতারে ইসরায়েলি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব অল্পের জন্য একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন।

ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজাকে সম্ভাব্য রিয়েল এস্টেটের ‘সোনার খনি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাজা ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা গাজা সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, আরও কয়েক হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

গাজার প্রধান আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক

গাজা সিটির একটি প্রধান আবাসিক এলাকায় কয়েক ডজন ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সামরিক বাহন ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই গাজা শহর দখলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাংক, বুলডোজার এবং সাঁজোয়া যানগুলো উত্তর গাজা সিটির শেখ রাদওয়ানের পথে চলেছে। নিজেদের অগ্রযাত্রাকে আড়াল করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী কামানের গোলা এবং স্মোক বোমা নিক্ষেপ করায় চারদিকে মেঘের মতো ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।

যুদ্ধের আগে এই শেখ রাদওয়ান জেলায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ছিল। এটি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।

গাজা সিটিতে ইসরায়েলের অভিযানের লক্ষ্য হলো- হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করা এবং সেখানে থাকা হামাসের আনুমানিক তিন হাজার যোদ্ধাকে পরাজিত করা। ইসরায়েল এই দলটিকে ‘সবশেষ শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এই অভিযানের ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে।

এদিকে গাজার পরিস্থিতি ‘অমানবিক ও বিবেকহীন’ বলে সতর্ক করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামসহ ২০টির বেশি প্রধান দাতা সংস্থার নেতারা।

গত বুধবারের অনুপ্রবেশের পর আশেপাশের ভবন এবং প্রধান সড়কগুলোতে ভারী বিমান হামলা চালানো হয়েছে যা স্থল অভিযানের প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদ হামাদা পরিবার নিয়ে গত বুধবার সকালেই দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ড্রোনগুলো কিছুই বাকি রাখেনি। তারা সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ জেনারেটর, পানির ট্যাংক, এমনকি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কেও আঘাত করেছে।

তিনি বলেন, জীবন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিপদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আবু ইস্কান্দার, আল তাওয়াম এবং আল সাফতাওয়ি এলাকাগুলো শেখ রাদওয়ানের অন্তর্ভুক্ত।

আল-জালা সড়ক দিয়ে এই শেখ রাদওয়ান বিভাজিত, যেটি গাজা সিটির মধ্যবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে এর উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শহরের আরও গভীরে ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর পথ খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গাজা সিটির সড়কে ট্যাংকের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিশেষ করে যারা এখনো শহরের পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছেন।

ট্যাংকগুলো বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ইসরায়েলের আগের হামলার স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, যেটা পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

শেখ রাদওয়ানে ইসরায়েলি বাহিনীর এই অনুপ্রবেশের ফলে এখন আরেক দফায় মানুষের ঘরবাড়ি ছাড়ার ঢেউ শুরু হয়েছে ফলে হাজার হাজার পরিবার দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সালাহেদীন রোড দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার পথ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সড়কে গাড়ি এবং জিনিসপত্র বোঝাই করা বাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

পরিবহন সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ভ্রমণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে এবং শত শত শেকেল খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

এই যুদ্ধের আগে, শেখ রাদওয়ান গাজা সিটির ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কয়েক ডজন স্কুল, মসজিদ এবং দোকানপাটের শহর ছিল এটি।

গত কয়েক মাসে শেখ রাদওয়ান এলাকা বেশ কয়েকবার বিমান হামলার শিকার হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। তবে এলাকার একদম ভেতরে ট্যাংকের উপস্থিতি এখন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য নতুন ধাপ।

গত বুধবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে, স্থল বাহিনীকে সাহায্য করতে দুদিনে তারা গাজা সিটি জুড়ে দেড়শর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযানের অংশ হিসেবে তারা আইডিএফ বিস্ফোরক ভর্তি পুরোনো সামরিক যানবাহন ব্যবহার করছে। যেগুলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংস্কার করা হয়েছে।

এই যানবাহনগুলো হামাসের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

সেখানকার বাসিন্দা নিদাল আল শেরবি বিবিসি অ্যারাবিকের মিডল ইস্ট ডেইলি প্রোগ্রামকে বলেছেন, গত রাত খুব কঠিন ছিল, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবিরত বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলি অব্যাহত ছিল।

ইসরায়েলি যানবাহন শেখ রাদওয়ান, তাল আল-হাওয়া এবং সেজাইয়া থেকেও অগ্রসর হয়েছে। এটা খুবই, খুবই ভয়াবহ রাত ছিল।

দাতা সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্যরা বলছেন, মানবিক এলাকা সেখানেই হবে যেখানে মানুষ স্থানান্তরিত হবে, প্রচুর মানুষের ভীড় হবে।

এ বিভাগের আরো খবর