বাগেরহাট সদরের বেমরতা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে জমি ও মাছের ঘের দখলকে কেন্দ্র করে মোমেনা বেগম (৬৫) নামের এক বিধবা নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাঁদা মাটিতে পুঁতে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেন স্বজনেরা।অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুলতানপুর এলাকার মৃত আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে সুলতানপুরের পার্শ্ববর্তী গোটাপাড়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া মৌজার একটি জমিতে মাছ চাষ করে আসছিলেন। ওই ঘেরের মধ্যে থাকা ১ বিঘা জমির মালিক আহত মোমেনার ভাই নওয়াপাড়া এলাকার ইউনুচ শেখ ২০০৬ সালে বিদেশে যাওয়ার জন্য মোমেনা বেগমের স্বামী মৃত আতিয়ার রহমানকে দলিল করে দিবেন মর্মে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদেরকে জমির দখল বুঝিয়ে দেন। তবে দলিল না দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিরোধ চলছিল। মোমেনা বেগম ও অভিযুক্ত আপন ভাই ইউনুচ শেখ এর সংগে।গত ১৮ আগস্ট দুপুরে অভিযুক্ত ইউনুচ শেখ (৫০), আসাদ শেখ (৩৫), রব শেখ (৪০), আশ্বাব শেখ (৬৫) সহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত লোক নিয়ে জোরপূর্বক মোমেনা বেগমের মাছের ঘেরে প্রবেশ করে। তারা জাল দিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার বাগদা, গলদা, রুই, কাতলা প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যায়।সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাধা দিলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মোমেনা বেগমকে এলোপাতাড়ি মারধর করে হত্যার উদ্দেশ্যে কাদা মাটির ভেতরে পুঁতে রাখে। পরে স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।প্রতিবেশী ইউনুস আলী খান বলেন,আমি বারবার মোমেনা বেগমকে বলেছি তোমার ভাই মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে যাক, তোমার কিছু করতে হবে না, তোমার ছেলেদের বলো। এই কথা বলে আমি ভাত খেতে চলে যাই। এরপর এসে দেখি, তাকে মারপিট করে কাদায় ফেলে রেখে গেছে।আমার কথা হলো এই ঘের যদি তারও হয়, তাহলেও কি সে তার মায়ের পেটের বোনকে এভাবে মারতে পারে? যে জমি সে তার বোনের কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়েছে, পরবর্তীতে এসে তো আর সেই জমিতে হাত দিতে পারে না।আমি চাই, অন্তত একটা বিচার হোক। আজকে তাকে আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। যদি আজকে এখানে এসে খুঁজে পাওয়া না যেত তাহলে তো সে মারা যেত!আসমা বেগম বলেন,আমরা সবাই জানি, এই জমি তার ভাই বিদেশে যাওয়ার সময় তার বোন কে ২০০৬ সালে দিয়ে গেছে। কিন্তু সেই জমি দখলের জন্য তার ভাই সকালবেলা ১৫ থেকে ২০ জন লোক নিয়ে ঘেরে জোর করে জাল ফেলে মাছ ধরতে নামে। খবর শুনে তার বোন মোমেনা সেখানে গিয়ে বাধা দেন। এসময় তারা মোমেনার সাথে অশ্রাব্য গালাগালি করতে থাকে।আমি তখন গিয়ে তার ছেলেদের বিষয়টি জানাই। এরপর আর আমি সেখানে থাকিনি। পরে এসে দেখি, অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ শব্দ শুনে সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে, তিনি বিলের পাশে পড়ে আছেন।মোমেনা বেগমের মেজ ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন,“আমাদের ঘেরে এরা যখন মাছ ধরতে যায়, তখন মা আমাকে ফোন করে বলে— ‘তোর মামা অনেক লোকজন নিয়ে মাছ ধরতে যাচ্ছে, আমি যাচ্ছি, তুইও আয়।’ এটাই ছিল মায়ের শেষ কথা।এরপর আমি দ্রুত পুলিশকে ফোন করি এবং মাঠে গিয়ে মাকে কল করি। একবার ফোন ধরলেও মা শুধু বলেন— ‘আমাকে দুইজন ধরে রেখেছে।’ এরপর আর কোনো সাড়া মেলেনি।পরে সবাই মিলে খুঁজতে গিয়ে দেখি, মা ঘেরের মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় কাদায় পড়ে আছে। আমি তখন যদি না যেতাম, হয়তো আমার মাকে আর বাঁচাতে পারতাম না।আমি প্রশাসনের কাছে এই ইউনুচ শেখের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই ।বৃদ্ধা মোমেনা বেগম আবেগভরে বলেন, “আমার নিজের ভাই, যাকে আমি কোলে-পিঠে মানুষ করেছি, আজ সেই ভাই-ই আমার উপর হাত তুলেছে। ২০০৬ সালে সে নিজেই আমাকে এই জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছিল। এখন আবার সেই জমি দখল নিতে এসে আমাকে মারধর করেছে। এই কষ্ট আমি কোথায় রাখবো?অন্য কেউ যদি আমাকে মারতো, হয়তো এতটা কষ্ট লাগতো না। কিন্তু আমার নিজের ভাই-ই যখন এমন করে, তখন সেটা সহ্য করা বড়ই কঠিন। আমার আর কোনো ভাই নেই। আমি এই জালিম ভাইয়ের বিচার চাই।তিনি আরও বলেন আমি তিল তিল করে কষ্টের টাকা জমিয়ে ওর কাছ থেকে এই এক বিঘা জমি কিনেছি । আজ সে-ই আমাকে আমার নিজের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।অভিযুক্ত ইউনুচ শেখ কে বার বার ফোনে কল দেওয়ার পর ও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।বাগেরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল উল-হাসান বলেন, ঘটনাটির বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাগেরহাটে জমি ও মাছের ঘের দখল নিয়ে বিধবা নারীকে হত্যাচেষ্টা অভিযোগ
এ বিভাগের আরো খবর/p>